পঞ্চগড় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত অংশ নেবে বিএনপি। তবে তার আগে জেলা কমিটি ঘোষণা ও বিভেদ কমিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে।
পঞ্চগড় সদর, তেতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসনের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা বিএনপির কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই দলটির। জেলা কার্যালয়ও সারাদিন তালাবদ্ধ থাকে। সন্ধ্যার পরও সেখানে কোনো নেতাকর্মীর দেখা মেলেনি।
কমিটি না হওয়ার পেছনে সাবেক মন্ত্রী ও স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র তৌহিদুল ইসলামের দ্বন্দ্বকে দায়ী করেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা বলছেন, পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার জমির এ আসনে তার ছেলেকে মনোনয়ন দিতে চান। পঞ্চগড়ে তার ডান হাত বলে পরিচিত নিজের সাবেক এপিএস ও জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গড়ারও পরিকল্পনা করছেন তিনি। অন্যদিকে তৌহিদুল মনোনয়ন চাওয়া ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হতে চাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় বিভেদ ও বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পড়েছে দল। পঞ্চগড়ে বিএনপির ভোট থাকার পরও এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।
আটোয়ারী ও তেতুলিয়া উপজেলা বিএনপির তৃণমূল নেতারা পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলামকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য মনে করেন। এম এ মজিদ সাধারণ সম্পাদক হলে জেলা বিএনপি ধ্বংস হবে বলেও দাবি তাদের।
তৌহিদুল ইসলামের দাবি, একমাত্র ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের কারণে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘জমির উদ্দিন জাতীয় নেতা। তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি দেন-দরবার করে পকেট কমিটি করতে চাচ্ছেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমাকে নিজেই বলেছেন, কেন কমিটি হচ্ছে না? একবার মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি দল কমিটি ঘোষণার জন্য আসতে চাইলেও তাদের পঞ্চগড়ে ঢুকতে দেননি জমির উদ্দিন সরকারের দল’।
‘শুনেছি, কেন্দ্রে কমিটির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে আমাকে সিনিয়র সহ সভাপতি পদ দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড় সদর বিএনপি আমি চালাচ্ছি, পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র। সেখানে আমাকে সহ সভাপতির প্রস্তাব’!’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির যাওয়ার কোনো চিন্তা আমি দেখছি না। কমিটি থাকলে দলের কর্মকাণ্ড আরো জোরদার হতো। যেখানে কমিটি নেই, সেখানে নির্বাচন করবে কিভাবে?’।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জমির উদ্দিন সরকারের জীবোদ্দশায় আমি নিজে থেকে মনোনয়ন চাইবো না, দল দিলে নেবো। পঞ্চগড় আসন নেত্রীকে উপহার হিসেবে দেবো। তবে ব্যারিস্টার জমির বা অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে সমর্থন দেবো না’।
‘২০০৮ সালে জমির উদ্দিন সরকার ৫০ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। তার জবাব এখনও পাইনি। তার জবাব আগে দিন’।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী এম এ মজিদ বলেন, ‘২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপি পঞ্চগড়-২
আসনের সাবেক এমপি মোজহার হোসেন, বিএনপি নেতা আবু হাসান ও আমার নেতৃ্ত্বে একটি অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু আহ্বায়ক পদত্যাগ করায় ওই কমিটি বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকে আর কোনো কমিটি হয়নি। অনেক আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিলো। নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিটি হওয়া জরুরি’।
কমিটিতে পদ নিয়ে তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ছাত্রদলের বাইরের কোনো নেতাকে জেলা কমিটিতে
রাখবেন না। মানুষের ইচ্ছা থাকতেই পারে। তাই বলে সবাই তো চাহিদামতো পদ পাবেন না। আর তৌহিদুল এক সময় জাতীয় পার্টি, জাগপা ও আওয়ামী লীগ করতেন। তার প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে’।
জেলা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, তৌহিদ কোন যোগ্যতায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে চান?, তিনি এসএসসি পাস। আর সরকার সমর্থিত বিএনপির মেয়র। চার হাজার ভোটের গরমে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন’।
কমিটি তার জন্য হচ্ছে না বলে অভিযোগ যারা করেন, তারা বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘কমিটি সেদিনই হবে, যেদিন নেত্রী চাইবেন। এখানে আমার বা কারো কোনো হাত নেই। আমি বুড়ো হয়ে গেছি, আমার কি কোনো ক্ষমতা আছে?’
জেলা বিএনপিকে বিভক্ত করার পেছনে তৌহিদুল ইসলাম দায়ী বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এ জেলায় শান্তিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু মেয়র হয়ে তিনি নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করছেন’।
‘তবে কমিটি না দিলে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। দলের সবাই কাজ করছেন। হয়তো কমিটি না থাকায় পদ্ধতিগতভাবে হচ্ছে না’।
বিএনপি নির্বাচনে গেলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কি-না-জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জমির বলেন, ‘আমি বুড়ো হয়ে গেছি। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। আর কিছুর দরকার নেই। আমার ছেলে ব্যারিস্টার। যদি চায়, পঞ্চগড়-১ আসনে দাড়াতে পারে, আর নেত্রী যদি মনোনয়ন দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
এমসি/এএসআর