যদিও কর্মসূচির ধরন নির্ভর করবে জনসমর্থন, সরকারের আচরণ, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোভাবের উপর। অতীতের মতো সব পক্ষকে ‘প্রতিপক্ষ’ বানিয়ে অপরিনামদর্শী কর্মসূচি দেবে না বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ৫ জন সিনিয়র সদস্যসহ দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। মধ্যম সারির নেতারাও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এমন আভাস দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কিছু দিনের মধ্যেই ব্যক্তিগত সফরে লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন তিনি। এর পর সহায়ক সরকারের পক্ষে জনসমর্থন তৈরির জন্য সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি।
তাদের প্রাথমিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলায় জেলায় খালেদা জিয়ার জনসভা, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ, উঠানসভা, গোলটেবিল আলোচনা, সভা-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়।
এ ছাড়া জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে ‘ইস্যু’ করে উপজেলা, জেলা, মহানগার ও রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ, গণমিছিল, প্রতিবাদ সভা, গণঅবস্থান- গণঅনশনসহ বিভিন্ন ধরনের ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করবে তারা। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
বিএনপি নেতাদের ধারণা, নির্বাচন সামনে রেখে তাদের এই তৎপরতাকে মেনে নেবে না সরকার। যথারীতি তাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক ধর-পাকড়, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে হয়রানি করবে। এতে বিএনপির জন্য মানুষের মধ্যে সিমপ্যাথি তৈরি হবে। বাড়বে জনসমর্থন। আর এই জনসমর্থনকে পুঁজি করে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে দলটি।
সূত্রমতে, সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার পর ডিসেম্বর পযর্ন্ত এ ধরনের ছোট-খাটো কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি। ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুন পযর্ন্ত রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে খালেদা জিয়ার দল।
দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে গেলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া সহজ হবে বিএনপির জন্য। আবার নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেলে কারচুপি’র অভিযোগ তুলে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরির সুযোগ থাকবে হাতে।
সত্যিকার অর্থেই যদি কারচুপির মাধ্যমে ফল পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সেটিকে ‘ইস্যু’ করে আন্দোলন শুরুর প্লাটফর্ম পাবে তারা। এ আন্দোলন এক পযায়ে নির্বাচনকালী ‘সহায়ক’ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপ দেবে বিএনপি।
তবে যে ধরনের কর্মসূচি দিয়েই আন্দোলন শুরু হোক না কেন, এক পর্যায়ে তা হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচিতে গিয়ে ঠেকবে। সেখানে প্রচণ্ড বাধা এলে বা ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হলে হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের শীর্ষ নেতারা স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দেবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বাংলানিউজকে বলেন, সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার পর গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করব আমরা। দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। কিন্ত সরকার তো আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। শেষ পযর্ন্ত অবরোধ কর্মসূচিতে যেতে হবে ।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়েই আমরা শুরু করব। এর পর জনগণের মনোভাব বুঝে কর্মসূচির ধরন বদলাব? জনসমর্থন পেলে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও কর্মসূচিও আসতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে সরকারের আচরণ ও দেশের পরিস্থিতির উপর।
অবশ্য স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য এম তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যেসব প্রোগ্রামে আমি গিয়েছি, সেগুলোতে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয় নি। তবে দাবি আদায়ে বিএনপিকে তো আন্দোলনে যেতেই হবে। আর সে আন্দোলন কঠোর আন্দোলন-ই হবে।
প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে গিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামে বিএনপি। তবে কর্মী সঙ্কটে ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন থেমে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
এজেড/জেডএম