নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতকে এ তালিকায় ফেললে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা অনিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সংখ্যা কয়েক ডজনে দাঁড়াবে।
সূত্রমতে, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ পিপলস্ লীগ (পিএল), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), ন্যাপ ভাসানী এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ইসিতে নিবন্ধিত নয়।
কিন্তু বিএনপি জোটের এই ১০টি শরিকের ৪টি থেকে অন্তত ছয়জন শীর্ষনেতার নাম জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে, যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হচ্ছেন। লড়তে যাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীকে।
পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর-পিরোজপুর সদর-ইন্দুরকানী) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক মোস্তফা জামাল হায়দার ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
সূত্রমতে, সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ায় আগামী নির্বাচনে এ আসন মোস্তফা জামাল হায়দারকে ছেড়ে দিতে পারেন খালেদা জিয়া।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. টি আই এম ফজলে রাব্বী গাইবান্ধা-৬ আসনে ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকনও কুষ্টিয়া-২ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
ফলে দলটির অন্তত তিনজন নেতা রয়েছেন আলোচনায়।
মোস্তফা জামাল হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন করার মতো যোগ্য নেতা আমাদের দলে বেশ কয়েকজন আছেন। তাদের মধ্যে জোট প্রধান যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন’।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদও মনোনয়ন পেতে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকা নড়াইল-২ (লোহাগাড়া-নড়াইল সদরের একাংশ) আসনে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন শরিফ খসরুজ্জামান।
২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসকে আবু বাকেরের কাছে প্রায় ৫৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন তিনি। বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা খসরুজ্জামান বিএনপিতে এখন আর সক্রিয় নেই। সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে কোনো পদও পাননি সাবেক এই নির্বাহী সদস্য।
এ সুযোগে খালেদা জিয়ার সবুজ সংকেত পেয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গেলে অনিবন্ধিত এনপিপির চেয়ারম্যান ধানের শীষ প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন।
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইফতার মাহফিলে সর্বশেষ দেখায় খালেদা জিয়া আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি’।
মনোনয়নের জন্য বিএনপি জোটের আরেক অনিবন্ধিত দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নামও বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। শুরুর দিকে পিরোজপুর-২ আসনের কথা শোনা গেলেও এখন তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকা-১৫ (কাফরুল ও মিরপুরের অংশবিশেষ) আসনের জন্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ আসনে বরিশালের ভোট বেশি থাকায় পিরোজপুরের সন্তান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এখান থেকেই নির্বাচন করতে চান। সম্প্রতি সস্ত্রীক খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।
বিগত আন্দোলনে বেশ কয়েকবার কারাগারে যাওয়া জোটের সক্রিয় এ নেতাকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জোটনেতা খালেদা জিয়া।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তিনটি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের ভূমিকার কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়া আমাদের মনোনয়ন দেবেন বলে আমার বিশ্বাস’।
এছাড়া অনিবন্ধিত দল ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইসি’র নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের অন্তত ২০/২৫ জন নেতাও জোটের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘জোট শরিকদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। এক্ষেত্রে যাদের নিবন্ধন নেই, তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
এজেড/এসআই/এএসআর