ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

পোস্টারিংয়েও ময়মনসিংহ বিএনপির ‘বিভক্তি’  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
পোস্টারিংয়েও ময়মনসিংহ বিএনপির ‘বিভক্তি’   পোস্টার। ছবি-অনিক খান।

ময়মনসিংহ: প্রায় দেড় যুগ যাবত ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতির ‘অভিভাবক’ বলতেই এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনকে দেখেন তার অনুসারীরা। তিনি এখনো দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে বহাল থাকলেও অনুসারীদের অনেকেই যেন সরে যাচ্ছেন মোশাররফের পেছন থেকে। এমনকি পোস্টারিংয়ে পর্যন্ত উপেক্ষা করা হচ্ছে তাকে। মোশাররফের বদলে পোস্টারে ঠাঁই পাচ্ছে তারই ছোট ভাই জাকির হোসেন ওরফে ক্লাসিক বাবলুর ছবি। 

মোশাররফের একান্ত অনুসারীদের ভাষ্যে, মোশাররফসহ দলটির জেলা ও নগরের শীর্ষ নেতাদের এভাবে উপেক্ষা দলের বিভক্তিকেই স্পষ্ট করে তুলেছে। পোস্টার রাজনীতির বিভক্তি ছড়িয়ে গেছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের গল্প-গুঞ্জনের মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে কিছু পোস্টার সাঁটানো দেখা গেছে। এসব পোস্টারে ‘অসঙ্গতি’ ধরেই সমালোচনায় মেতেছেন মোশাররফের অনুসারীরা।

তারা বলছেন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ-উত্তর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে সাঁটানো পোস্টারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ছোট ছোট করে দিয়ে নেতারা নিজেদের ছবি বড় করে দিয়েছেন। এমনকি পোস্টারে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর ছবি রীতিমতো অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুস্কর! 

কোতোয়ালী থানা যুবদল, ইউনিয়ন যুবদলসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের পোস্টারেও এমন চিত্র দেখা গেছে। অথচ পোস্টারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছাড়া অন্যদের ছবি নিষিদ্ধ করেছিল যুবদল। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।  

দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, নির্দেশনা যেহেতু মানাই হচ্ছে না, সেহেতু পোস্টারে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা বা মহানগরের নেতাদেরও ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত সিনিয়রদের সম্শান দেওয়া যেতো। তবে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা এক্ষেত্রে রাখঢাক করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত এক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাবেক প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনের হাত ধরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে বিএনপি’র মনোনয়নের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয় তারই ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলুর। সেই হিসেবে রাজনীতিতে তার বয়স এক যুগও পূর্ণ হয়নি। কিন্তু এখন নিজ বলয়ের রাজনীতিতেই কোণঠাসা সাবেক প্রতিমন্ত্রী। পোস্টারে মোশাররফ হোসেনকে ‘আউট’ করে দিয়ে বাবলুকে ‘ইন’ করা হয়েছে। আর এই কাজটি করেছেন একদা মোশাররফ হোসেনের গুণকীর্তনে মগ্ন থাকা নেতারাই। আর বাবলুও কিভাবে তার উত্থানের রূপকারকে এভাবে অবজ্ঞা করেন? সত্যিই কত স্বার্থপর আমরা!’

‘আউট-ইন মার্কা’ পোস্টার রাজনীতির সমালোচনা করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমন পোস্টার কোনোভাবেই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এক সময় এরাই সাবেক প্রতিমন্ত্রীর (মোশাররফ হোসেন) নামে গুণগান করতেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এসব করছেন। ’ 

এসব ঘটনা দলের ঐক্য দুর্বল করছে বলে মনে করেন ময়মনসিংহ নগর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা এসব পোস্টার করছে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। ’

অবশ্য এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতিতে একমাত্র সচল নেতা জাকির হোসেন বাবলু। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর রাখেন, সংগঠন বোঝেন। এ কারণে তার ছবি পোস্টারে বড় করে দেওয়া হয়েছে। আর অচল নেতারা কাউকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮ 
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।