ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইতিবাচক দিক থাকলেও দলগুলোর ইশতেহারে নেই কর্মপরিকল্পনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
ইতিবাচক দিক থাকলেও দলগুলোর ইশতেহারে নেই কর্মপরিকল্পনা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: শাকিল।

ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত ইশতেহারের ওপর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। পর্যবেক্ষণে তারা বলেছে, পর্যালোচিত প্রায় প্রতিটি ইশতেহারেই দেখা গেছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়েছে।

রোববার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘কোন দলের কেমন ইশতেহার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান এবং সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।

দলগুলোর ঘোষিত ইশতেহারের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হয়।

ইশতেহারে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূলনীতির স্থান নিয়ে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে ক’টি রাজনৈতিক দলের ইশতেহার মূল্যায়ন করার সুযোগ আমরা পেয়েছি, তার প্রতিটিতেই আমরা দেখি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বলতে কোন দল কী বোঝায় সেটা স্পষ্ট না হলেও এ বিষয়টির স্বীকৃতি তাৎপর্যপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যত অনেক বৈরিতা ও মতপার্থক্য থাকলেও ইশতেহারে দেখা গেছে- তাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মতৈক্য এসেছে। বিশেষ করে নতুন সরকারকে কোন কোন ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে তা নিয়ে সার্বজনীন বিষয়ে বেশিরভাগ দলকেই আমরা একই রকম অবস্থানে দেখি। এরমধ্যে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ ইত্যাদির গুরুত্ব প্রায় সব রাজনৈতিক দলই স্বীকার করে।

ইশতেহারের ওপর সুজনের পর্যালোচনা অনুযায়ী, তরুণ ভোটারদের মন জয় করার জন্য প্রায় সবগুলো দলকেই যত্নবান হতে দেখা গেছে। কেবল এই নির্বাচনই নয়, ভবিষ্যতে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তরুণ সমাজকে পাশে নেওয়ার বিকল্প নেই বলে সব রাজনৈতিক দলই উপলব্ধি করেছে।

তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যে সমালোচনা ইশতেহারে দেখা গেছে, তাতে কিছুটা গৎবাঁধা প্রবণতারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ সুজনের। তারা বলছে, দেশের উন্নয়নের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনমূলক সমালোচনা এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ভালো কাজের মূল্যায়ন এবারের ইশতেহারেও দেখা যায়নি। তবে একদলের শাসনামলে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প অন্য দলের শাসনকালে সমর্থন নাও হতে পারে, এ রকম শঙ্কার লাঘব করতে বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে উন্নয়ন প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক ময়দানে জাতীয় ঐক্য গঠনের সম্ভাবনার ব্যাপারে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিহিংসার পথ বর্জন করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, ভয়মুক্ত বাংলাদেশ তৈরি, প্রতিহিংসামুক্ত সহমর্মী বাংলাদেশ এবং সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন ইত্যাদি ইতিবাচক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে এগুলো ইতিবাচক উদাহরণ।

সামাজিক বৈষম্য নিরসনে দলগুলোর ইশতেহারের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বিভিন্ন পন্থার ভেতরে উল্লেখযোগ্য হলো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী শক্তিশালী করা, রেশনিং এমনকি পল্লী রেশনিং।

এবার নানা মাত্রায় বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার বিষয়টি ইশতেহারগুলোতে এসেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশু, প্রবীণ কল্যাণ, হিজড়া, হরিজন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্বত্য ও অন্যান্য অঞ্চলের নানা নৃ-গোষ্ঠীদের সমান অধিকার, মর্যাদা ও সুযোগ সৃষ্টি, ক্ষমতায়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন ইশতেহারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক।

তবে ইশতেহারে কর্মপরিকল্পনার অনুপস্থিতি ফুটে উঠেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অতীতের মতো নির্বাচনী ইশতেহার যেন নিতান্তই কথার ফুলঝুরিতে পরিণত না হয় সে লক্ষ্যে আমরা আশা করেছিলাম যে দলগুলো তাদের ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা রূপরেখা দেবে। যেমন তারা সরকার গঠন করলে প্রথম ১০০ দিনে কী করবে, প্রথম বছর কী করবে, দ্বিতীয় বছর কী করবে, তৃতীয় বছর কী করবে, চতুর্থ বছর কী করবে এবং শেষ বছর কী করবে। এমন একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করলে দলগুলোর নিজেদের সময়ভিত্তিক অগ্রাধিকার স্থাপন সহজ হতো।

সুজনের ভাষ্যে, প্রতিপক্ষের ব্যর্থতাকে রাজনৈতিক দলগুলো সবসময়ই নিজেদের স্বার্থকতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টায় থাকে। এবারেও এরকম প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এগুলো ছাপিয়ে গেছে ইশতেহারের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক। যেমন ইশতেহারে অনেক ক্ষেত্রে ঐক্যমত, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর ঐক্যের সম্ভাবনা, বিকেন্দ্রীকরণ ও বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি এবং প্রান্তিক ও অবহেলিত গোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এই ইতিবাচক দিকগুলোই আগামী দিনে গণতন্ত্রের সুদৃঢ় বুনিয়াদ সৃষ্টি করতে পারে। সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পরও ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকারগুলোকে মনে রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।