ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ধান সংগ্রহের মাধ্যমে দলীয় লোকদের মুনাফা দিচ্ছে সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
ধান সংগ্রহের মাধ্যমে দলীয় লোকদের মুনাফা দিচ্ছে সরকার

ঢাকা: সরকার ধান-চাল সংগ্রহের মাধ্যমে দলীয় ব্যবসায়ীদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেন, বাজার থেকে কম মূল্যে ধান কিনে চাল কল মালিকরা প্রক্রিয়া জাতের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে প্রতিকেজিতে ১০ টাকা মুনাফা করছে। আর কৃষক তার জমিতে উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে কেজিপ্রতি লোকসান গুণছেন ১০/১২ টাকা।

শনিবার (২৫ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত বছরের উৎপাদনকে হিসেবে নিলে বোরো ধানের উৎপাদন হবে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন। আর সরকার সংগ্রহ করবে মাত্র ১৩ লাখ টন। যা উৎপাদনের মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের দাবি ধান অথবা চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা হোক। এতে বেশি পরিমাণ কৃষককে সহায়তা দেওয়া যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণ গ্রহিতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে। যদিও এ ছাড় হাইকোর্ট আটকে দিয়েছেন। সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধকলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এ খেলাপি ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে আরো প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবেন।

বর্তমানে কৃষকদের যে দুরাবস্থা তা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শীতার কারণে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি ধ্বংসের মুখে। গরীব কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার খুব জরুরি প্রয়োজন।  
 
বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি করার কারণে সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে বর্তমানে ২৫/৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে বাজারে চাপ তৈরি করছে এবং ধানের দাম কমছে। অনিয়ন্ত্রিত চাল আমদানিকে দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন, কেন এ চাল আমদানির হিড়িক প্রশ্ন করেন মির্জা ফখরুল।  
 
কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারি পর্যায়ের ধান-চাল গুদামজাতকরণের ক্ষমতা হলো প্রায় ২১ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন। এ ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে সরকারকে বেশি পরিমাণে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে। ধান-চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ‍ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এমএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।