ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘বিএনপি ও তারেককে ডুবিয়েছেন হাওয়া ভবনের তিন নেতা’

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১০
‘বিএনপি ও তারেককে ডুবিয়েছেন হাওয়া ভবনের তিন নেতা’

ঢাকা: বিএনপি’র একটি মহলের জোর অভিযোগ রয়েছে দলটির তিন জন নেতার কারণেই দল সঙ্কটের মুখে পড়েছে। তাদের মতে একসময় হাওয়া ভবনকে কব্জা করে রাখা এই তিন নেতার কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।



অভিযুক্ত ওই তিন নেতা হলেন দলের তৎকালীন যুগ্ম-মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুফুৎজ্জামান বাবর ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন।

বর্তমানে দল থেকে বিচ্ছিন্ন বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দিতেন হাওয়া ভবনের নায়করা। এমনকি কি বড় বড় টেন্ডার ও ব্যবসা তারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারি ‘বিশ্বমোড়ল’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও শক্তিধর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেন বাবর ও মামুন। এছাড়া বাবর সামলাতেন প্রশাসন, মামুন দেখতেন ব্যবসা আর রাজনৈতিক ঝক্কি-ঝামেলা সামলাতেন হারিছ চৌধুরী। ’

এদের মধ্যে বাবর ও মামুন জেলে আছেন। আর হারিছ চৌধুরী দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের দায় মাথায় নিয়ে পলাতক।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ওই তিন নেতার সহযোগীরাও চলাফেরা করেছেন দাপটের সঙ্গে। হাতিয়ে নিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এদের মধ্যে রয়েছেন হাওয়া ভবনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা আশিক ইসলাম, তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী মিয়া নুরুদ্দিন অপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, জয় প্রমুখ। বর্তমানে আশিক আমেরিকায় ও অপু মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেলেও জয় কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারেন না।

এদিকে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে হাওয়া ভবনকে ব্যবহার করে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাওয়া নেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সেসময় হাওয়া ভবনের নাম ভাঙ্গিয়ে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়া এসব নেতা ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রকাশ্যেই দলের সঙ্গে বেঈমানি করে বসেন। তৎকালীন মহাসচিব (পরে বহিষ্কৃত) আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নেমে পড়েন সংস্কারপন্থী তৎপরতা তথা ‘মাইনাস খালেদা’ বাস্তবায়ন ফর্মুলায়।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এম মোরশেদ খান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জিয়াউল হক জিয়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রেজাউল করিম, সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জহির উদ্দিন স্বপন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, মাসুদ অরুণ, তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোফাজ্জল করিম, মুসফিকুর রহমান, বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সহ-দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-প্রচার সম্পাদক আহমেদ মুসা, দৈনিক দিনকাল সম্পাদক কাজী সিরাজ, যুবদল সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ। তারাও হাওয়া ভবনকে বিতর্কিত করার জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৎকালীন যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘হাওয়া ভবনই বিএনপিকে শেষ করেছে। যারা হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রক ছিলেন, যারা বিএনপিকে ধ্বংস করেছে তাদের জিঞ্জাসা করুন তারা এখন কোথায়, কি করছেন?’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম মেজর জেনারেল (অব.) জেডএ খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমি পেছনের কোনো বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। হাওয়া ভবন ও বিএনপি নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।