ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

যেভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন সম্রাট

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৯
যেভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন সম্রাট ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট

ঢাকা: ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ ঢাকার বিভিন্ন অপকর্মের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলসহ ঢাকা মহানগরের সরকারি-বেসরকরি দফতর, ক্লাব, নতুন স্থাপনা নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ডে অযাচিত নাক গলাতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই মূলত তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে থাকেন। এক সময় অনেক কিছুই চলে যায় তার নিয়ন্ত্রণে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন দফতর ও ভবনের কাজের যে টেন্ডার তা তার হস্তক্ষেপের বাইরে যেত না। তাকে মোটা অংকের টাকা না দিয়ে ছাড় পেতো না কোনো কাজ।

মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা রাস্তায় অবৈধ কার পার্কিং, স্থাপনা থেকেও প্রতিদিন মোটা অংকের চাঁদা আসতো। ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকেও চাঁদা তুলতেন তিনি।

২০১২ সালে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন সম্রাট।

এর আগে তিনি ছিলেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন থেকেই তিনি এসব অপকর্মে জড়ান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্রাটের হাত শক্তিশালী হতে থাকে। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করেন তিনি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন অনেক কিছু।

শুধু দুনীতি অপকর্মই নয়, দলের কর্মী-সমর্থকও অনেকটা তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের বড় বড় কর্মসূচিতে জমায়েত বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতেন সম্রাট। বিশেষ করে ঢাকার প্রেক্ষাপটে যুবলীগ সম্রাটের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।  

অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময় যেসব বড় বড় কর্মসূচির আয়োজন করা হতো তখন ওই কর্মসূচি কেন্দ্র করে মোটা অংকের চাঁদাবাজিও ছিল সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সময় তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার অপর্কের কথাও উল্লেখ করেন।

এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারসহ অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে চলে যান সম্রাট। যুবলীগের আরেক নেতা জিকে শামীমও আটক হন। এসময় তিনি গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান।  

সূত্র জানায়, দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বার। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।  

রোববার (৬ অক্টোবর) ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে তিনি আটক হন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
এসকে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।