ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নতুন দল এবি পার্টি গঠনের নেপথ্যে

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
নতুন দল এবি পার্টি গঠনের নেপথ্যে এবি পার্টির আত্মপ্রকাশ

ঢাকা:  এক বছর ধরে নানা যাচাই বাছাই ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গত ২ মে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি)। 

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ যখন আতংকিত এমনি সময় রাজনৈতিক দলের ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। দলটির নেপথ্যে কারা কীভাবে কাজ করছেন এ নিয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে যতটা জানা গেছে, এর নেপথ্যে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকাটাই বেশি।

তার সঙ্গে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও লন্ডন প্রবাসী প্রভাবশালী জামায়াত নেতারাও রয়েছেন। যারা এখন আর জামায়াতের নীতি আদর্শের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না।

একটি সুত্র জানায়, মূলত জামায়াতকে ভেঙে দেওয়া ও বিএনপিকে চাপে রাখার জন্যই দলটি গঠিত হয়েছে। দেশে আসার সুযোগ পেলে দলটির সভাপতির দায়িত্ব হয়তো ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকই পাবেন। তার সঙ্গে বিএনপির আমলের একজন আমলা যিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি পত্রিকার সম্পাদক। তিনিও নেপথ্যে কাজ করছেন। সাবেক ওই আমলা এখন সস্ত্রীক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের যোগাযোগ রয়েছে।  

করোনার মধ্যে দল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির উদ্যোক্তা ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু বাংলানিউজকে বলেন, আপাতত নিজেদের কার্যক্রমকে অসহায় মানুষদের সহযোগিতা ও করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে কর্মকাণ্ড সীমিত রাখবো। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন দল ঘোষণার পর থেকে তাদেরকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ বলছেন জামায়াতের পার্ট। কেউ বলছেন সরকারের ইন্ধন। আবার জামায়াত বলছে এদের দিয়ে কিছু হবে না।

দলটির আহবায়ক করা হয়েছে সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীকে। সদস্য সচিব হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মন্জু। যিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য হলেও দলীয় রাজনীতি থেকে দুরে ছিলেন। মূলত তার কার্যক্রম ছিল মিডিয়াকেন্দ্রিক। বন্ধ হয়ে যাওয়া সমালোচিত দিগন্ত টেলিভিশনের তিনি উপ নির্বাহী পরিচালক। দলের যে ২২২ সদস্য বিশিষ্ট প্রাথমিক আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে তাতে ৫২ টি জেলার প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এর বাইরে ইউরোপ আমেরিকা ইংল্যান্ড মিলে ৯টি দেশে তাদের প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দলে ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেটদের আধিক্য লক্ষ্যণীয়। বেশ কিছু নারী ও কয়েকজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সদস্যকেও দলের আহবায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে। অতীতে দল ঘোষণার সময় এরকম প্রতিনিধিত্বশীল প্রাথমিক কমিটি খুব একটা চোখে পড়েনি।

যুক্তরাজ্যকেন্দ্রিক এই দলের একটা শক্ত অবস্থান লক্ষ্যণীয়। ঘোষিত কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব, সহকারি সদস্য সচিব মিলে স্থান পেয়েছেন ১৫ জন প্রবাসী। ধারণা করা হচ্ছে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পেছন থেকে মুখ্য ভূমিকা রাখার কারণে দলে তার অনুসারী ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেটদের প্রাধান্য বেশী। একটি সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাক দেশে ফিরলেই মূলত দলটির মূল কমিটি গঠিত হবে। তখন রাজ্জাকের সাথে জামায়াতের ভেতর থেকে বড় একটা অংশ সদলবলে এবি পার্টিতে যোগ দেবেন। একই সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাকই হবেন দলটির সভাপতি।

বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যায়, ব্যারিস্টার রাজ্জাক ছাড়াও সুশীল সমাজের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এই নতুন দলের পেছনে রয়েছেন। ইতোমধ্যে এই দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক, কলামিস্ট গৌতম দাস, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমদ এদেরকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথেও এই দলের উদ্যোক্তাদের লক্ষ্যণীয় সখ্যতা রয়েছে। জাফরুল্লাহ সবসময় ৭১-এর ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলেন যা এই দলের নেতারাও বলছেন।

এদিকে এই দলের প্রতি বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের একটা সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জামায়াতের যেসব নেতার ফাঁসি হয়েছে তাদের মধ্যে কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী, আব্দুস সোবহান এমনকি মাওলানা সাঈদীর পরিবার ও সন্তানদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও সমর্থনের গুঞ্জন রয়েছে। কিছুদিন আগে জামায়াত নেতা সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী এবি পার্টির অফিসে মিটিংরত একটি হাসিমাখা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে বেশ কানাঘুষা সৃষ্টি হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে শামীম সাঈদী এটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে বিবৃতি প্রদান করেন।

এবি পার্টির আনুষ্ঠানিক দল ঘোষণার পর জামায়াত মহলে বেশ চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জামায়াতের উপদেষ্টা শাহ আব্দুল হান্নান হতাশাব্যক্ত করে সংবাদপত্রে মতামত দিয়েছেন। সাঈদীর মুক্তি দাবি করে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক আওয়ামীলীগ এমপি বর্তমানে বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনি এবি পার্টি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। শাহরিয়ার কবিরসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াতের সমর্থকরা এবি পার্টির নেতৃবৃন্দের নিন্দা সমালোচনা করে নানা উত্তেজক মন্তব্য করছেন।  

এবি পার্টির সার্বিক বিষয় নিয়ে সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে, নানা বিশ্লেষণ চলছে তাতে আমরা উৎসাহিত ও আনন্দিত। এটাকে আমরা আমাদের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছি। একটি নতুন দল ঘোষণার পর তাকে নিয়ে সমালোচনাগুলো আমাদের সাবধান ও সতর্ক করবে। আর প্রশংসা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। সবাইকে আমরা স্বাগত জানাই।

এদিকে নতুন এই দল নিয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, পত্রিকায় দেখলাম। এদের উদ্দেশ্য কি তা জানি না। তবে সবাইতো হতবাক। বর্তমানে অজানা একটা শক্তির সাথে সবাই লড়াই করছে। এর আগেও না পরে না, এই মুহূর্তে একটা রাজনৈতিক দল। করছে ভাল। হয়তো তারা কিছু একটা করবে।

দলের নেতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, এটাতো আসলে জামায়াতেরই একটা অংশ। দেখতে থাকুন কী হয়! এদের নেপথ্যে কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা জানার চেষ্টাও করি না। আমি অন্ধকারের পিছনে ঘুরি না। আলোতে যা দেখি সেটাই বলি।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, এবি পার্টি কী উদ্দেশ্যে, কারা, কেন করেছে জানি না। তবে রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের জন্য কাজ করা। আশা করি তারাও মানুষের জন্য কাজ করবে। দল করেছে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, এদের নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমরা সবার জন্যই দোয়া করি। সবাই ভাল থাকুক এটাই চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
এমএইচ/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।