ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের সংযোগ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কর্নেল বেগ জিয়াউর রহমানকে চিঠি দিয়েছিল।
রোববার (১৬ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল কিন্তু তার সঙ্গে পাকিস্তানিদের সংযোগ ছিল। কর্নেল বেগ জিয়াউর রহমানকে চিঠি দিয়েছিল। কর্নেল বেগ, পরবর্তীকালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হয়। সে বাহবা দিচ্ছে। ধন্যবাদ দিচ্ছে। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও তার পুত্ররা যে ভালো আছে সে কথাও জানাচ্ছে। ’
জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সামরিক অফিসারদের কারা, কে মদত দিয়েছিল, তাদের পেছনে কারা ছিল? আমার বাবার কেবিনেটের উচ্চাবিলাসী একজন মন্ত্রী আর সহযোগী ছিল জিয়াউর রহমান। ’
‘সে (জিয়া) এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল। সেটা স্পষ্ট পাওয়া যায়- এই হত্যাকাণ্ডের পর বিবিসিতে কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রশিদ—তারা একটি ইন্টারভিউ দেয়। যেখানে তারা স্পষ্ট বলে যে, তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল। তার মদতেই তারা এই ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। ’
১৫ আগস্ট বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনের সঙ্গে জিয়া জড়িত সেটা আরও প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পর, সেখানে সংবিধান মানা হয়নি, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রপতি হননি, রাষ্ট্রপতি ঘোষিত হলো খন্দকার মোশতাক। আর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জেনারেল জিয়াকে বানালো সেনাবাহিনীর প্রধান। জেনারেল জিয়া যদি এই ষড়যন্ত্রে মোশতাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকবে তাহলে কেন মোশতাক তাকেই বেছে নেবে সেনাপ্রধান হিসেবে?’
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিল বলেই জিয়াউর রহমান এই খুনের ঘটনায় তদন্ত করতে দেয়নি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্যার টমাস ইউলিয়াম কিউসি এমপি এবং নোবেল লরেট শন ম্যাক ব্রাইট তাদের নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। বৃটিশ এমপি অনেকে তখন আমাদের সহযোগিতা করে। তিনি যখন ভিসা চান, জিয়াউর রহমান তখন রাষ্ট্রপতি, জিয়াউর রহমান কিন্তু টমাস উইলিয়ামকে ভিসা দেয়নি। ’
‘জিয়াউর রহমান কেন ভিসা দিল না। কেন তদন্ত করতে দিল না। এই প্রশ্নটা থেকে যায়। কারণ খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে সে ভয়ে ভীত ছিল। সে তদন্ত করতে দেয়নি। তারা খুনিদের লালনপালন করে গেছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের সব ধরনের মদত দেওয়া, এটাতো জিয়াউর রহমানই দিয়েছে এবং এখানেই তাদের শেষ না। এই খুনিরা যারা শুধু ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডই ঘটায়নি। ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের (খুনিদের) বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করে। ’
‘খুনিদের বিচার হবে না। ১৫ আগস্টের হত্যার বিচার হবে না। সেই ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করা হয়। তাদের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। তাদের বিচার করা যাবে না। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি আমাদের মামলা করার অধিকার ছিল না, বিচার করারও অধিকার ছিল না। ’
বেঈমানরা কখনো ক্ষমতায় থাকতে পারে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মীর জাফর দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও পারেনি। মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে নিজেই ঘোষণা দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে। ’
জিয়াউর রহমানের শাসন আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৮১ সালে আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করলো। যখন আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি। তখনো ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। ৩২ নম্বরের রাস্তায় বসে আমরা মোনাজাত করি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শোক দিবস পালন করা যাবে না, তার কথা বলা যাবে না। ইতিহাসকে সম্পূর্ণ বিকৃত করা হয়। ’
‘স্বাধীনতা বিরোধীদের, রাজাকার-আল বদরদের জিয়াউর রহমান মন্ত্রী বানিয়েছে, রাজনীতি করা সুযোগ দিয়েছে, তাদের ভোটের অধিকার—এই সমস্ত লোকদের নির্বাচন করার অধিকার ছিল না। ভোট দেবার অধিকার ছিল না। সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করে তাদের সংগঠন করা, নির্বাচন করার অধিকার দিয়েছে। ’
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাকে ধূলিস্যাৎ করে বাংলাদেশকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসকে সম্পূর্ণ বিকৃত করা হয়েছিল। কোথাও জাতির পিতার নাম থাকলে সেটা মুছে ফেলা হতো।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যেটুকু করে গিয়েছিল তার স্ত্রী এসে তো আরও বেশি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেকী করেছিল, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল। কোন দল অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিল। ’
‘সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ডেপ্লয় করে দিয়ে সে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভোটাররাও ভোট দিতে আসেনি। তারপর খালেদা জিয়া নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা দিল। আর সে নির্বাচনে কর্নেল রশিদকে নির্বাচিত করা হলো। মেজর হুদাকে নির্বাচিত করা হলো। তাদের পার্লামেন্টে বসানো হলো। খুনি কর্নেল রশীদকে বিরোধী দলের আসনে বসানো হয়েছিল। খালেদা জিয়ার খুনিদের প্রতি এত দরদ কেন ছিল। ’
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহাম্মদ মন্নাফি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২০
এমইউএম/এমজেএফ