ঢাকা: মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একজন আন্তর্জাতিক নেতা ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে উপলক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ মওলানা ভাসানীর প্রসঙ্গে বলেন, মওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি পরিষদের একজন নেতা ছিলেন। বিশ্ব শান্তি পরিষদের তিনি যোগ দিয়েছিলেন। তিনি এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপের সেসময় বিখ্যাত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নাসেরের সঙ্গে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন বিষয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটি নিয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তিনি পূর্ব বাংলায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করার জন্য মাও সেতুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তিনি ভিয়েতনামের হো চি মিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, জাপানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার অবদান এটা কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়।
তিনি আরও বলেন, মওলানা ভাসানী জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের নিয়ে লড়াই করেছেন, তিনি স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেছেন, ভাষা আন্দোলনে তিনি প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং স্বাধিকারের আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন। সুতরাং মওলানা ভাসানীকে অবহেলা করলে, তার কোনো ক্ষতি হবে না, বরং জাতি হিসেবে আমাদেরই ক্ষতি হবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পাকিস্তান হওয়ার পর মওলানা ভাসানী পার্লামেন্টের মেম্বার হয়েছিলেন। সেই পার্লামেন্টের ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কয়েকটি অধিবেশনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। সংসদ অধিবেশনের বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা কী সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এর গোলাম? এখান থেকে তোমরা পাটের টাকা, চায়ের টাকা, চামড়া বিক্রির টাকা নিয়ে যাবে কেন? এখান থেকে অর্জিত টাকার ৭০ শতাংশ পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য দিতে হবে। ৩০ শতাংশ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট নিতে পারবে।
মওলানা ভাসানী প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আঘাত করলে তোমরা প্রত্যাঘাত করো। জালেম যখন মজলুমের ওপর অত্যাচার করবে, তখন তাকে আঘাত করা নৈতিক কর্তব্য। জালেমের সঙ্গে অহিংস আন্দোলন করলে তাকে পরাজিত করা অত্যন্ত কঠিন। আমি এই অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করি না।
আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
সভাপতির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, কমিউনিস্টরা মওলানা ভাসানীকে শুধু ছেড়েই যাননি বিশ্বাসঘাতকতাও করেছেন। মওলানা ভাসানীর ভূমিকা ছিল স্বাধীনতার ভিত্তি ভূমি স্থাপনে। তার ওপরে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সৌধ নির্মাণ করেছেন। সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস হয় না, এ কথা আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, যারা এখনও মস্কোপন্থার প্রচারের প্রভাবিত হয়ে মওলানা ভাসানীকে ভিন্নভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে তাদেরকেই বরং চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তাদের আপসকামিতা এবং ভ্রান্ত রাজনীতি বাংলাদেশকে আজ কোনো পথে নিয়ে গেছে। মওলানা ভাসানী এদেশের মানুষের কাছে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
আরকেআর/এএটি