সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে হঠাৎ পরিবর্তন আনায় পুরো জেলা জুড়ে দলের এতোদিনের বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ভূরিভোজের।
তারা বলছেন, দুর্দিনে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ায় দলীয় প্রধানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এ উপলক্ষে চলছে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টি বিতরণ, গরুর মাংস দিয়ে খিচুর খাওয়া, আতশবাজি ও নানা আনন্দ-উল্লাস।
রোববার (২২ নভেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নাকে অব্যাহতি দিয়ে অ্যাডভোকেট কে. এম হোসেন আলী হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আব্দুস সামাদ তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জেলাজুড়ে শুরু হয় আনন্দ-উল্লাস। জেলা সদর ছাড়াও বেলকুচি, সলঙ্গা, শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলার নেতাকর্মীরা মেতে ওঠেন আনন্দে। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যায় দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন নতুন দুই নেতাকে। নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার খুশিতে রোববার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে গরু জবাই দিয়ে খিচুরি মাংসে ভূরিভোজ করেন এতোদিন দলে মূল্যায়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা।
এ সময় ‘দল ও দলের অফিস মুক্ত হলো’- উচ্চস্বরে এমন কথা বলতে শোনা যায় অনেক নেতাকর্মীকে। এছাড়া দলকে হাইব্রিডমুক্ত করার দাবিও জানান নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে দলীয় কার্যালয়ে ভিড় জমান নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, দলের প্রধান শেখ হাসিনা তৃণমূলের মনের ভাষা বুঝতে পেরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের ত্যাগী নেতারা ছিলেন বঞ্চিত। বিএনপি থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের দখলে ছিল দল। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী পার্টি অফিসেই আসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এবার শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে দল আবার চাঙ্গা হবে।
যাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা দু’জনেই তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ। সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তারা। এ কারণে তাদের হাতে দল সুসংগঠিত হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সুর্য ও প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো বলেন, দীর্ঘদিন একক সিদ্ধান্তে দল চালানো হয়েছে, এ সময়ে দলীয় কোন্দলের কারণে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যাকাণ্ড, বেলকুচিতে পরপর কয়েকটি সংঘর্ষসহ জেলাজুড়ে নানা বিতর্কিত ঘটনার কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। পক্ষান্তরে দল হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেছে। এ অবস্থায় নেতৃত্ব পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী।
এর আগে রোববার রাতে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে. এম হোসেন আলী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন পর দল শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। আমরা এখন মুক্ত। দলীয় অফিস এখন আর বন্ধ থাকবে না। নিয়মিত খোলা হবে, রাজনৈতিক সব কার্যক্রম অফিস থেকেই পরিচালিত হবে, কোনো বাড়ি থেকে নয়। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের মনের ভাষা বুঝতে পেরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তের কারণে দল আবার চাঙ্গা হবে। আমরা সবাইকে নিয়েই এ কাজগুলো করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
নতুন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, এ দায়িত্ব আমাদের জন্য পরীক্ষা। পুরো জেলাজুড়ে ত্যাগী ও বঞ্চিতদের নিয়ে দলকে সচল করতে হবে। সভানেত্রী যে বিশ্বাস নিয়ে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা তার মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
এসআই