ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কমিটি

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কমিটি

ঢাকা: বিএনপির রাজনীতির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিগত দিনে বিএনপি যত আন্দোলন করেছে, তার অগ্রভাবে ছিল ছাত্রদল।

 

১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মূল দলের ছাত্রসংগঠন হিসেবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠন করেন। সংগঠনটির বয়স এখন ৪৩।  

দীর্ঘ এই পথ চলায় কখনোই গঠনতান্ত্রিকভাবে সময়মতো কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে পারেনি ছাত্রদল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিটির মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হলেও করতে পারেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ার জন্য নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে করোনা মহামারিকে দায়ী করছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক।  

অপরদিকে হতাশায় নিমজ্জিত পদপ্রত্যাশীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ার জন্য সভাপতি ও সম্পাদককেই দায়ী করছেন। তাদের বক্তব্য, দেড় বছরের করোনা মহামারির মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। হয়েছে কমিটি বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্য দীর্ঘ সময় ধরে চালাতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হন।  

জানতে চাইলে করোনার বিষয়টি সামনে এনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কমিটির মেয়াদ ১৮ সেপ্টেম্বর দুই বছর পূর্ণ হলো। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এদিন আমাদের মেয়াদ শেষ। দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ না দিতে পারাটা ব্যর্থতা বলতেই হবে। তবে সফলতাও কম নয়। ইতোমধ্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এক হাজার ৭০০ এর মতো কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিছু কমিটি বাকি আছে, আশা করি সেগুলো শিগগিরই অনুমোদন দেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।  

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজীল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি কবে পূর্ণাঙ্গ হবে তা জানি না। তবে নতুন করে কমিটি দেওয়ারও দাবি উঠেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষে নতুন কমিটির দাবি অযৌক্তিক কিছু নয়। তবে আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।  
 
তিনি আরও বলেন, আমি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের (১-ক) সদস্য সচিব হিসেবে বলতে চাই, ঢাকার চারটা বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঁচটা কলেজের কমিটি ১১ মাস আগে জমা দিয়েছি। কিন্তু সভাপতি ও সম্পাদক সেই কমিটিগুলো এখনও কেন অনুমোদন দেননি, সেটা তারাই বলতে পারবেন। আমরা চাচ্ছি আগে এই সুপার ইউনিটগুলো দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হোক।  

আপনি নিজেও আংশিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ার ব্যর্থতা আপনার ওপরে কি পড়ে না? এর জবাবে তানজীল হাসান বলেন, আমি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি সেটা সঠিক। একই সঙ্গে ঢাকার সাংগঠনিক টিমের সদস্য সচিবের দায়িত্বেও আছি। আমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঁচটি কলেজের কমিটি ১১ মাস আগে জমা দিয়েছি। ঘোষণা তো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেবেন, সেটার দায়িত্ব আমাদের না।  

হতাশায় পদপ্রত্যাশীরা
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়ার আশায় বহু নেতা অপেক্ষায় আছেন। তাদের ছাত্রজীবন অনেক আগে শেষ হলেও নতুন বিভাগে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করছেন। ছাত্রদল ত্যাগের আগে অন্তত একবার হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলে নিজেদেরকে ধন্য মনে করবেন।  

ওই নেতারা বলছেন, দুটি বছর পার হলেও ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়ে আর পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। ফলে আমরা পদপ্রত্যাশীরা হতাশার মধ্যে আছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক অভিভাবক সভাপতি-সম্পাদককে বললেও তারা কেন কী কারণে দিচ্ছেন না, তা আমরা জানি না। তবে এর পেছনে কমিটি বাণিজ্য থাকতে পারে।  

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়ার আশায় বসে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অন্তত ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, শেখ আল ফয়সাল, মুহাছিম বিল্লাহ, খায়রুল আলম সুজন, ঝলক মিয়া, মো. রেজোয়ান আহমেদ, এমএম মুছা, রোকুনুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, ইব্রাহিম খলিল ফিরোজ, আনোয়ার পারভেজ, মনজুরুল আলম রিয়াদ, সফিকুল ইসলাম সফিক, ইমরান হোসেন, আব্দুস সাত্তার রনি, নাজমুল হাসান, সাকির আহমেদ, সালেহ আদনান, মুস্তাফিজুর রহমান ফরহাদ, শরিফুল ইসলাম, জিএম ফকরুল হাসান ও দিপু পাটোয়ারী।

এছাড়া অন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পদপ্রত্যাশী যারা আছেন তারা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরুজ মন্ডল, আসাদুজ্জামান আসলাম, আতাউর রহমান বুলেট ও আবুল খায়ের ফরাজী।  

ঢাকা কলেজের সাইফুল ইসলাম তুহিন, আলীজা মিজান, জহির হাসান মোহন, দেউয়ান মামুন, আসিক আহমেদ ও মারজান।

কবি নজরুল কলেজের আরিফুর রহমান আরিফ, মিলন হাওলাদার। তিতুমীর কলেজের আবুল হাসান চৌধুরী, রিয়াজ হোসেন ও রেজাউনুল হক সবুজ। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু আহমেদ, শিমুল। ঢাকা মহানগরের জসীম উদ্দিন সরদার জীবন, আসাদুজ্জামান আশা, তানভীর আল হাদি, আব্দুস সালাম হিমেল ও হিমেল আল ইমরান।  

যোগাযোগ করা হলে তাদের অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রজীবনের পুরোটা সময় ছাত্রদলের পেছনে ব্যয় করেছি। মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। কারাবরণ করেছি। শিগগিরই আমাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে। তার আগে আমাদের একটাই প্রত্যাশা, অন্তত কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম লেখানো। সেটা যদি না হয় তাহলে দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ভেঙে যাবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খায়রুল আলম সজুন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল আমার ব্যাচমেট। সে সাধারণ সম্পাদক হয়েছে। আমরা এখনও পদের আশায় ঘুরছি। আশা করি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে হতাশায় থাকা ছাত্রনেতাদের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।  

ঢাবি শিক্ষার্থী পদপ্রত্যাশী মুতাছিম বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দাবি একটাই, সংগঠনের গতিশীলতা ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় নিশ্চিত করতে দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হোক। দেশজুড়ে ছাত্রদলের চলমান বিশাল কর্মযজ্ঞে আমরাও শামিল হতে চাই, কাজ করার সুযোগ চাই। সংগঠনকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করার মাধ্যমেই সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে রুখে দিতে সক্ষম হব।

তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবিতে পদপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে কয়েক দফা আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করেছে। দলের স্বার্থে বৃহত্তর কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
এমএইচ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।