ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার সবশেষ অবস্থা নিয়ে যা বললেন চিকিৎসক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২১
খালেদার সবশেষ অবস্থা নিয়ে যা বললেন চিকিৎসক

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘লিভার সিরোসিস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ‘মৃত্যু ঝুঁকিতে’ আছেন বলে জানিয়েছেন তার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী।

রোববার (২৮ নভেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মো. সিদ্দিকী (এএফএম সিদ্দিকী) বলেন, ম্যাডামের সিরোসিস অব লিভার (লিভার সিরোসিস)। ওনার ম্যাসিভ রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখন ম্যাডামের গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্লিডিংটা হয়নি। এখন স্ট্যাবল আছেন। কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি—এই যে স্ট্যাবল আছেন, এটা কিন্তু বিশ্বের বেস্ট সেন্টারগুলোতে এই ধরনের রোগীর ওপর প্রচুর ডাটা আছে; এ ধরনের রোগীর ম্যানেজমেন্ট যদি ফেইলিওর হয় পরবর্তী স্টেপ কী এবং তাদের কীভাবে লাইফ সেভিং করা যায়।

এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ম্যাডামের এখন যদি ‘টিপস’ মেথড অ্যাপ্লাই করা না হয় তাহলে আগামীতে আবার রি-ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা পরের সপ্তাহে ৫০%, পরের ৬ সাপ্তাহে ৬০% এবং তারপরেও যদি যায়, আল্লাহ না করুক এটা অভিয়াস ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। এটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা যা করছি, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায়। এখন আমরা কিন্তু হেলপলেস ফিল করছি। এখন এরকম একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসার কথা আপনারা বলছেন, তা করা হলে কী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এভার কেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক বলেন, আশঙ্কা করছি ওনার যদি রি-ব্লিডিং হয় তাহলে রি-ব্লিডিংটাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেটাকে বন্ধ করার মতো সাপোর্টিভ টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সে ক্ষেত্রে ওনার ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে।

‘টিপস’ পদ্ধতি কোন দেশের চিকিৎসা কেন্দ্রে হয় জানতে চাইলে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, টিপস হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। আমাদের দেশে টিপস করা রোগী আমি দেখিনি। যারা আমরা রোগী ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার তৃতীয়বার রক্তক্ষরণ হলে সারভাইভ করা খুবই ডিফিকাল্ট। এই সেন্টারগুলো আমেরিকা ও ইউরোপ বেসড। ইউএসএ, ইউকে ও জার্মানি। সেখানে এসব রোগের চিকিৎসার জন্য অ্যাডভান্স সেন্টার আছে। তারা এর চিকিৎসা করে। সেখানেও দেশব্যাপী এই রোগের সেন্টার নেই, দুই-একটা আছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, আমরা ম্যাডামের যারা ক্লোজড রিলেটিভ তাদের জানিয়েছি, যারা ওনার সঙ্গে আছেন তাদের জানিয়েছি। আমরা ওনাদের বলেছি, যত দ্রুত পারেন অ্যারেঞ্জ করেন, সেটা আমরা বলেছি।

তিনি বলেন, ম্যাডামের থার্ড টাইম ব্লিডিং হয়েছে। ওনার মতো বয়স, হার্ট ফেইলিওর, হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, ডায়াবেটিক আছে—এতো জটিলতার মধ্যে কিডনির ডিজিজ আছে, ওনার এনাল ফেইলিওর হয়ে যায়। এটা কীভাবে আমরা সাসটেইন করব যদি আমরা প্রেসারটা টিপস দিয়ে কমাতে না পারি। সেজন্য আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, ওনার পরিবারকে জানিয়েছি যত তাড়াতাড়ি পারেন অ্যারেঞ্জ করেন। কারণ, এখনো টাইম আছে। তিনি স্ট্যাবল আছেন। পরে শিফট করাটা ডিফিকাল্ট হয়ে যেতে পারে, ইমপসিবল হয়ে যেতে পারে।

সেই সময়সীমাটা কীরকম জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এটা কেউ বলতে পারবেন না পৃথিবীতে।

বাইরে থেকে চিকিৎসক ও চিকিৎসা পদ্ধতি ঢাকায় এনে করা সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনি যদি বুঝে থাকেন যে, টিপস টেকনোলজিটা, আপনি ইমাজিন করেন এটা ইউকের কিংস কলেজে। যদি যুক্তরাজ্যের অন্য হাসপাতালে কোনো রোগী এরকম হয়, ওরাই তাকে হেলিকপ্টারে ওই হাসপাতালে পাঠায়। হাইলি সিলেকটিভ। এভাবে একজন রোগীর জন্য একটা হাসপাতালকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক মো. নুরউদ্দিন, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৩ নভেম্বর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে ব্যাপক রক্তক্ষরণের কারণে খালেদা জিয়া সংকটজনক অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে এফ এম সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রথমে ১৪ তারিখ ৬টা ব্যান্ড করে একটার পর একটা ব্যান্ডিং করে ওনার তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সমর্থ হই। পরে ১৭ তারিখ আবার ব্লিডিং শুরু হয়। আমরা লাইফ সেভিং মেডিসিন দিয়ে তাকে কিছুটা স্ট্যাবল করতে সমর্থ হই। ২১ তারিখে মনে হলো যে, ওনার ব্লিডিংটা স্টপ হয়েছে। পরে ২৪ তারিখ তাকে জেনারেল ওটিতে নিয়ে এন্ডোস্কোপি করা হয়। এবার দেখা গেলো যে, ম্যাসিভ ব্লিডিংটা আরেকটু নিচের থেকে হচ্ছে বলে মনে হলো। এটার সোর্স পর্যন্ত আমরা যেতে পারিনি। আমরা আবার তাকে লাইভ সেভিং মেডিসিন দিয়েছি, আবার ব্লাড ট্রাসমিশন করেছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে ম্যাডাম এমন এক অবস্থায় অনুযায়ী একটাই রাস্তা আছে ট্রিটমেন্টের। ইফ ইউ সেন্ড লাইভ অব দ্য পেসেন্ট টু নিড টু ডু টিপস। ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টটু সিস্টেমিক সাম অর্থাৎ যে প্রেসারে ব্লাডটা ভ্যাসেলকে হাইপ্রেসারে ছিঁড়ে ফেলেছে, সেটাকে একটা বাইপাস চ্যানেল করে দেওয়া, এটা লাইফ সেভিংস।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার শরীরে হিমোগ্লোভিন লেভেল কেমন জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ওনার হিমোগ্লোবিন লেভেলটা প্রথমে ৫ দশমিক ৫ এ নেমে গিয়েছিল। আমরা সেটাকে চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে ৯/১০ এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম। আবার সেটা কমে গিয়েছিল ৭ দশমিক ৮-এ। এটা মনে রাখতে হবে যে, ওনার যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এই রক্তক্ষরণের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে—অনেক রক্ত দিয়ে আপনি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে পারবেন না। তাহলে সেটা আবার রিবিল্ড করবে। সেজন্য আইডিয়ালি হিমোগ্লোবিনকে একটা লেভেলের মধ্যে ধরে রাখতে হয়।

সংবাদ সম্মেলনের প্রথেমেই ডা. সিদ্দিকী বলেন, আমরা ম্যাডামের চিকিৎসার সাথে যারা সম্পৃক্ত, তারা দেখতে পেয়েছি যে, ম্যাডামের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ভীষণ একটা কনফিউশন অবস্থা চলছে। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা নেই যে, তার সত্যিকারের কী অবস্থা, কী হচ্ছে এবং কী পর্যায়ে তিনি আছেন। সেজন্য আমরা যারা ওনার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত তারা নিজেরা ভেবে দেখেছি যে, আমাদের মধ্য থেকে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাই এবং দেশবাসীর সঠিক তথ্য জানার অধিকার আছে। এখন এটা আমাদের একটা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে যে আমরা ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, এ বিষয়টি গতকাল তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি।

আরও পড়ুন:
খালেদার লিভার সিরোসিস শনাক্ত, দেশে চিকিৎসা নেই

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।