ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নরসিংদীতে আ’লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
নরসিংদীতে আ’লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১

নরসিংদী: আধিপত্য বিস্তার ও গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রুবেল মিয়া (৩২) নামে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন।

এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নূরুল হক (১৯) নামে একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাশঁগাড়ী ও মির্জাচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশসহ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  

নিহত রুবেল মিয়া রায়পুরার মির্জাচর ইউনিয়নের মির্জাচর এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি মির্জাচরের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত নূরুল হক বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের সাধন মিয়ার ছেলে। তারা দুইজনই নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান অশ্রাফুল হকের সমর্থক।

জানা যায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সঙ্গে বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিক বার হামলা-পাল্টা-হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় একাধিক লোক নিহতসহ প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তৎকালীন চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জাকির হোসেন রাতুল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়।  

এদিকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে নির্বাচনের দিন ভোর রাত থেকেই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। এরই জের ধরে রাত ৩টার দিকে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের সমর্থকরা দেশি-বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে নির্বাচনের দিন সকালে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাতুলের ২ সমর্থক ও আশ্রাফুলের ১ সমর্থকসহ ৩ জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে শতাধিক মানুষ। ১১ নভেম্বর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রাতুল বিজয়ী হওয়ার পর এলাকা ছাড়া হয়ে পড়ে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা। এদিকে, নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয়ের পর মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলাম ও তার সমর্থকরাও গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েন।

প্রায় আড়াই মাস গ্রাম ছাড়া থাকার পর বাশঁগাড়ী ও মির্জাচরের নৌকা প্রতীকের লোকজন সম্মিলিত হয়। পরে রোববার সকালে প্রথমে তারা আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকদের নিয়ে বাশঁগাড়ী গ্রামে ফেরেন। এতে বাধা দেয় বাশঁগাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল সমর্থকরা। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় নূরুল হক (১৯) গুলিবিদ্ধসহ আরো ৫ জন আহত হন। পরে আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা গ্রামে ফেরার পর তাদের সহায়তা নিয়ে মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের সমর্থকরা মির্জাচর গ্রামে ফেরেন। ওই সময় মির্জাচরের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকরা বাধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অরো ৫ জন। পরে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকদের বাধার মুখে ফারুকুল সমর্থকরা গ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
 
মির্জাচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম বলেন, বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে  মির্জাচর থেকে লোকজন বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে তাদের ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর পাঠালে বাশঁগাড়ীর রাতুল চেয়ারম্যানের হয়ে মির্জাচরের মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার চাচাতো ভাই রুবেল মারা যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল ও মির্জাচরের ফারুকুল ইসলাম এক গ্রুপ। তারা একে অপরকে বরাবরই সহায়তা করে। রোববার আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে ফারুকুলের লোকজন লাঠিয়াল হিসেবে বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে রাতুল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর এনে গণ্ডগোল করেন। এতে হতাহত হয়। এখানে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এ ঘটনায় আমার ৪ থেকে ৫ জন লোক আহত হয়েছে।
 
নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সঘর্ষে ১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এই মুহূর্তে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সংহিসতা রোধে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।