ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

এই বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের জন্য: বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এই বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের জন্য: বিএনপি

ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবতা বর্জিত অভিহিত করেছে বিএনপি। বলেছে, এটা কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট,  ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের জন্য করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপনের দুইদিন পর শনিবার (১১জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত। এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, পাচারকারীদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোজ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট তৈরি করা হয়েছে। আরও পরিষ্কারভাবে বললে সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও স্বজনদের অর্থ পাচারের সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, লবন, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল নেই। শুধুমাত্র নিজেদের বিত্ত-বৈভব বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।

তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে ‘কর ছাড়’ এর প্রস্তাবকে আইনের পরিপন্থী। এই প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত, সেখানে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক। গত ১৪ বছরে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এখন এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার সেসব পাচারকারীর অবৈধ অর্থকে বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দিল। যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যে কোনো মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য। আমরা পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা এবং এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে ‘অবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রস্তাবিত বাজেটের নানাদিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই বাজেট হচ্ছে অব দ্যা বিজনেস ম্যান, বাই দ্যা বিজসেন ম্যান এবং ফর দ্যা বিজনেস ম্যান। অর্থাৎ এটি ব্যবসায়ী বান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি। মূল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস বের হওয়ার মতো অবস্থা, তখন তাদেরকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো কথা নেই।   করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্তরা। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত মধ্যবিত্তরাই। মেডিটেশনের উপরও ৫% কর আরোপ করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামান্য কিছু চাল বিক্রি হতো তার দাম ১৫ টাকা করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিল ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ সবই গতানুগতিক। করোনাকালে এই খাতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো পূরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ ও দিক নির্দেশনা বাজেটে নেই। করোনাকালে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছিলেন, বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। আমরা মনে করি, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়েছে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি কাজ করছে না। এখন কাজ করছে আওয়ামী ইকোনমিক মডেল, তাদেরকে উপকার করার জন্য, তাদের দুর্নীতির জন্য, তাদের পকেটে টাকা নেওয়ার জন্য, তারা রাষ্ট্রের পেট্রোনাইজেশনের ব্যবসা করার জন্য। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান,  নাসের রহমান, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।