ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

দেশে ফিরলে হুদার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১০
দেশে ফিরলে হুদার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা

ঢাকা: দেশে ফিরলে ভাইসচেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।



দলীয় সূত্র জানিয়েছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার হুদাবিরোধী অবস্থানের কারণে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার কথা ভাবছেন।

এছাড়া ঢাকা জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিরোধের কারণে নাজমুল হুদাকে কোণঠাসা করতে চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া’র মতো নেতারা।

দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর পক্ষে দেশ-বিদেশে জনমত গঠনের যে উদ্যোগ নাজমুল হুদা নিয়েছেন সেটাকে ‘পাগলামি’ বলেও আখ্যায়িত করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা। কেউ কেউ মনে করছেন, হুদার এ উদ্যোগ বন্ধ না হলে বিএনপিকে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

আবার শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই নাজমুল হুদার জনমত গঠনের উদ্যোগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হালে পানি না পাওয়া  ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র নয়া উদ্যোগ বলে মনে করছেন। তাই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে উঠছে নাজমুল হুদাকে বহিষ্কারের দাবিও।

বৃহস্পতিবার মুলতবি বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, নাজমুল হুদার সাম্প্রতিক উদ্যোগে খোদ খালেদা জিয়াও অসন্তুষ্ট। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান নেওয়ার নজির অনেক আছে। নাজমুল হুদার ব্যাপারেও তিনি সম্ভবত কঠিন সিদ্ধান্তে যাবেন।

স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘নাজমুল হুদা দুই নেত্রীকে এক করার উদ্যোগ নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা চেয়ারপারসনকে অবহিত করেছি। তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছেন। এ ব্যাপারে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। ’

ওই নেতা আরও বলেন, ‘দলের একজন ভাইসচেয়ারম্যান হয়ে হাই কমান্ডের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই দুই নেত্রীকে এক করার কথা বলেছেন নাজমুল হুদা। এতে স্পষ্টতই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। এজন্য আমরা চেয়ারপারসনের কাছে নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। চেয়ারপারসন আমাদের অনুরোধ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নাজমুল হুদার এ নয়া উদ্যোগ সম্পর্কিত খবর গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রকাশ পায় বাংলানিউজে। পরদিন ১৫ অক্টোবর স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাতকারে নাজমুল হুদা তার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

ওই সাক্ষাতকারে তিনি জানান, জাতীয় স্বার্থে দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর জন্য জনমত গঠন শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

নাজমুল হুদা আরও জানান, দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গঠন ও সচেতনতা তৈরি করতে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।

নাজমুল হুদার পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর জনমত গঠনের জন্য জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে র‌্যালি, মানববন্ধন, কর্মশালা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ঢাকায় আয়োজন করা হবে গ্র্যান্ড র‌্যালি। ঢাকার র‌্যালিতে দুই নেত্রীর মধ্যে মধ্যস্থতা করবেন এমন তিন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হবে।

জনমত গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে প্রবাসী বাঙালিদের ভেতর সচেতনতা তৈরিতে এরই মধ্যে সপ্তাহ তিনেকের সফরে বিদেশ গিয়েছেন হুদা।

সিঙ্গাপুর ও জেদ্দায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এখন তিনি অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

আগামী ৭ অক্টোবর সৌদি এয়ারলাইন্সে জেদ্দা হয়ে দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার। আর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তিনি সারাদেশে মতবিনিময় শুরু করবেন বলে জানিয়েছে তারই এক ঘনিষ্ঠ সূত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।