ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন

শিহাবউদ্দনি কিসলু, নিউইর্য়ক থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১২
ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশে ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রস্থ নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। মহান একুশের আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টার অডিটরিয়ামে এ আলোচনা সভার আযোজন করা হয়।

‘ঘরের ভাষা বাংলা চাই’ প্লাকার্ড হাতে হল জুড়ে শিশু-কিশোরদের মার্চপাস্ট ও একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান প্রর্দশন করা হয়।

সন্ধ্যায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ছবি অাঁকা, রচনা ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

এরপর মূলধারার রাজনৈতিক নেতা, প্রবাসী সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণে ‘আমি কি ভুলিতে পারি’ শীর্ষক আলোচনা সভা, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের গান এবং কবিতা পাঠের আসর অনুর্ষ্ঠিত হয়।

নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’র সভাপতি ও মূলধারার রাজনীতিবিদ হাসানুজ্জামান হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ফাউন্ডেশন’র প্রধান উপদেষ্টা নাসির খান পল। ফাউন্ডেশন’র সেক্রেটারি মোঃ আবুল কাশেম, একুশ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক কামাল পাশা, সদস্য সচিব রাকিবুজ্জামান খান তনু ও প্রধান সমন্বয়কারী শফিকুল ইসলাম ডাবলু একুশের চেতনার ওপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও পিপল এন টেক’র স্বত্ত্বাধিকারী আবু হানিফ বিজয়ী প্রতিযোগীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করে বলেন, একদিন হয়তো এমন দিন আসবে, যেদিন এই নিউইয়র্কের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে বেছে নেওয়া হবে। অবশ্য এজন্য বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞানী ও কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন্নবী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের জন্য তাদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখানে বেড়ে ওঠা শিশুদের বাংলাকে ধারন করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হচ্ছি। এর দায়-দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। ’  সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, আজ ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পেরিয়ে গেলেও সমাজের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরেও মেলেনি অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলা ভাষাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও চিকিৎসক ডা. মাসুদুর রহমান বাংলা ভাষা সংরক্ষণের জন্য ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার আহŸান জানান। তিনি বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে আজ বিকৃত ভাবে ভাষা উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা নিয়ে হাইকোর্টকে মুখ খুলতে হচ্ছে। ’

নিউইয়র্কের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট টিউটরিং সেন্টার’র তত্ত্বাবধানে এবং প্যারেন্টস ক্লাব’র পরিচালনায় আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী শিশুদের প্লাকার্ড হাতে অডিটোরিয়াম প্রদর্শনী উপস্থিত দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। প্লাকার্ডে বাংলায় লেখা ছিল- ‘ঘরের ভাষা বাংলা চাই’।  

অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন ইস্ট-ওয়েস্ট’র অন্যতম পরিচালক মোশাররফ হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন উম্মে কুলসুম পপি, আকলিমা চৌধুরী রানা, রোকসানা বেগম পপি, পিয়া খান ও নাসিমা আক্তার।

শিশু কিশোরদের প্রতিযোগিতা শুরুর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি লিডার ও এটিএন টিভি ইউএসএ’র পরিচালক ফখরুল আলম, সোনালী এক্সচেঞ্জ’র সিইও প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান এ সময় ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন বিশ্বজিৎ কুমার চৌধুরী, আলম টিপু, তানবির সারোয়ার রানা, বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন ফজলে রাব্বি। কবিতা ও রচনা প্রতিযোগিতায় ছিলেন- সোনালী এক্সচেঞ্জ’র সিইও আতাউর রহমান, ছাড়াকার, বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠক মঞ্জুর কাদের, কবি সাহিত্যিক এবিএম সালেহ উদ্দিন এবং বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপিকা সুলতানা পারভিন। বিজয়ী প্রতিযোগীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন আবু হানিফ, ডা. নুরুন্নবী, কৌশিক আহমেদ, ডা. ওয়াজেদ এ খান এবং ইস্ট-ওয়েস্ট টিউটরিং’র স্বত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট সংগঠক জাহাঙ্গীর হাওলাদার।

বিজয়ী শিশুরা হচ্ছে, চিত্রাঙ্কন এ গ্রæপে প্রথম আলভান, দ্বিতীয় আফরিদা তাসনিন ও তৃতীয় হিমকা, বি গ্রæপে প্রথম ফারিয়া হায়দার, দ্বিতীয় আফিফা আক্তার ও তৃতীয় আনিকা তাসনিম, সি গ্রæপে প্রথম রাকিম হামিদ, দ্বিতীয় জান্নাতুল ও তৃতীয় বিরাজ দত্ত, বিশেষ পুরষ্কার নাওয়াল হাসান ও তাপসী জাহাঙ্গীর, কবিতা আবৃত্তি এ গ্রæপে প্রথম রোকেয়া ফজলে, দ্বিতীয় নাবিদ ও তৃতীয় আসিন আশরাফ, বি গ্রæপে প্রথম হায়দার, দ্বিতীয় নাফিসা অর্পি ও তৃতীয় সারোয়ান সুবা আলম, সি গ্রæপে প্রথম অরণ্যা শফি, দ্বিতীয় অদ্রিতা শফি ও তৃতীয় সার্জিল রাজিম এবং রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম বৃষ্টি দত্ত, দ্বিতীয় নাঈমা লাবনী, তৃতীয় তোর্ষা ইসলাম ও বিশেষ পুরষ্কার আনিকা হোসেন।

অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’র হাসানুজ্জামান হিরা, আবু তাহের, মনিরুল ইসলাম মনির, মোহর খান, ডা. নার্গিস রহমান, কুমিল্লা সোসাইটি’র সভাপতি মোশারফ হোসেন, উল্লাপাড়া সোসাইটি’র ইঞ্জিনিয়ার এইচএম শহিদ, দিনাজপুর জেলার ড. জিনাত নবী, গ্রেটার খুলনা সোসাইটি’র সভাপতি ফারুক হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটির বন্ধু এটর্নি প্যারিডি সিলভার। তার স্ত্রী মেরী সিলভারও উপস্থিত ছিলেন।

কবিতা পাঠের আসরে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসের জনপ্রিয় কবি আল শাম্স, মাকসুদা ভূঁইয়া, শাহানা বেগম রিনা এবং কামনা। নৃত্যে অংশ নেন দুই জমজ বোন অন্বেষা ও অর্পিতা। সঙ্গীত পর্বে অংশ নেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ্ মাহবুব টিটু, লেমন চৌধুরী, দোহা চৌধুরী, ডা. নার্গিস রহমান, গৌতম রায়, ফরহাদ হোসেন, চম্পা, নিঝুম এবং শিল্পী দম্পতি সাকিনা ডেনী ও শহিদুল হক সরকার। তবলায় ছিলেন রাকেশ ও কি বোর্ডে জামান। এ পর্বটি পরিচালনা করেন মোহর খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।