যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্র কাউসার মুমিন।
‘হার্ভার্ড ইন্ডিয়া কনফারেন্স-২০১২’ শীর্ষক এ সেমিনারের যৌথ আয়োজক হচ্ছে হার্ভার্ড স্কুল অব বিজনেস এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনিশিয়েটিভ এর দক্ষিণ এশীয় রাজনৈতিক সিরিজের এ বছরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সেমিনারে অংশগ্রহণপূর্বক বিষয়ভিত্তিক আলোচনার উপর নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার জন্য দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থী হিসেবে এ আমন্ত্রণ পান কাউসার মুমিন। এটি ছিল হার্ভার্ড ইন্ডিয়া বিষয়ক সেমিনারের নবম আসর। এবারের বিষয় ছিল ‘ইন্ডিয়া : দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার। ’
২৪ ও ২৫ মার্চ দু’দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সেমিনারে মূলত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) দক্ষিণ এশীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দক্ষিণ এশীয় রাজনীতি বিষয়ে আগ্রহীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সম্মেলনে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে ভারতের অবস্থান, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব উত্থান, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও দায়বদ্ধতা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে ভারতের অবস্থান এবং জাতিসংঘে ভারতের অনুসৃত কূটনীতি ইত্যাদি বিষয়ে মোট ১২টি প্যানেলে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আলোচনা এবং অংশগ্রহণকারীদের মতামত, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের প্রথম দিনের গুরুত্বপূর্ণ পর্বে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টে মূল বক্তৃতা প্রদান করেন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হারদীপ পূরি।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতীয় কূটনীতির সাম্প্রতিক সাফল্যগুলোর বিশদ বর্ণনা দেন এবং বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, সিরিয়া এবং শ্রীলংকা বিষয়ে অনুসৃত ভারতীয় কূটনীতির স্পর্শকাতর দিকগুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
আলোচনায় মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে কাউসার মুমিন বলেন, ভারতের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মানুষ খুব আশান্বিতবোধ, কেননা এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন ভারতের উন্নয়নের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। ভারত এগিয়ে গেলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া এগিয়ে যাবে। কিন্তু ভারতের নীতি নির্ধারকদের চেতনায় এবং ভারত অনুসৃত অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে এ বিষয়টির প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
সম্প্রতি শ্রীলংকা এবং মিয়ানমার বিষয়ে ভারতের ট্রাডিশনাল জাতিসংঘ কূটনীতি থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে কাউসার মুমিন বলেন, এর ফলে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা ভারতের নিরাপত্তা পরিষদের প্রার্থীতার বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে।
এছাড়া ভারত কখনো সুপার পাওয়ার হতে পারবে না বলে গত সপ্তাহে প্রকাশিত দ্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসের একটি স্পেশাল রিপোর্টের বিষয়েও রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাউসার মুমিন বলেন, ভারতে উচিত হবে তার বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া।
জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, উন্নয়নের চেয়ে ভারতের কাছে বরাবরই গণতন্ত্রের চর্চা প্রাধান্য পেয়েছে। এ বিষয়ে পরোক্ষভাবে চীনকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ না হলে বা গণতন্ত্রের সঙ্গে আপোস করতে চাইলে আরো দ্রুত উন্নয়ন করতে পারতো।
শ্রীলংকা বিষয়ে ভারতের বর্তমান জাতিসংঘ নীতির পক্ষে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, নিজস্ব জাতীয় স্বার্থে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে ভারত কখনো পিছপা হবে না, এমনকি এর ফলে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদ না পেলেও নয়। কেননা ভারতের জাতীয় স্বার্থের চেয়ে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ কখনো বড় হতে পারে না।
উল্লেখ্য, কাউসার মুমিন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশে মিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর