ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

রমজানের চাঁদ দেখে আনন্দ মিছিল করে নাইজেরিয়ানরা

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৫
রমজানের চাঁদ দেখে আনন্দ মিছিল করে নাইজেরিয়ানরা

নাইজেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। রাজধানীর নাম আবুজা।

তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এর পশ্চিমে বেনিন, পূর্বে চাদ ও ক্যামেরুন, উত্তরে নাইজার এবং দক্ষিণে গিনি উপসাগর অবস্থিত।

বিভিন্ন কারণে নাইজেরিয়া এখন সংবাদের শিরোনাম। যা অালোচনার জন্য খুব একটা সুখকর নয়। তার পরও বলা যায়, ইসলামের রীতি-নীতি পালনের ব্যাপারে নাইজেরিয়ানদের রয়েছে স্বকীয়তা। ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই তাদের মধ্যে। নীরবে-নিভৃতে বেশিরভাগ নাইজেরিয়ান মুসলমান নিয়মিত নামাজ পড়েন। নীরবে-নিভৃতে যে যার ধর্ম পালন করে অন্যসব ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে।

এরই সূত্র ধরে একজন সম্মানিত অতিথির মতো উষ্ণ আন্তরিকতায় রমজানকে বরণ করে নাইজেরিয়ানরা। রমজানের চাঁদ ওঠার পর আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয় সেখানে। পূণ্য ও বরকতের মাস রমজানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বের হয় এ শোভাযাত্রা বা আনন্দ মিছিল। শোভাযাত্রায় বিশেষ ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এমন শোভাযাত্রা তারা ঈদুল ফিতরের দিনও বের করে। বলা চলে, এটা নাইজেরিয়ানদের একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্য।  

নাইজেরিয়ান মুসলিম সমাজ পবিত্র রমজান মাসের জন্য মানসিক ও বস্তুতগত উভয়ভাবে  প্রস্ততি নেয় অাগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মূলত তারা রমজানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে রাখে। সেই সঙ্গে প্রস্তুত হয় রমজানের বিশেষ আমল ও ইবাদত-বন্দেগির জন্যও। রমজানের পূর্বেই তারা দিনে রোজা ও রাতে তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে। নাইজেরিয়ায় রমজান মাসে সর্বত্র এক অপার্থিব প্রশান্তি বিরাজ করে।

রমজান নাইজেরিয়ানদের কাছে পূণ্য ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করার মাস। রমজানে প্রত্যেকে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের সঙ্গে দেখা করে এবং তাদের উৎসাহিত করে রমজানের ধর্মীয় পবিত্রতা, গাম্ভীর্য ও শিক্ষা মান্য করে চলতে। নাইজেরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। অধিকাংশ মসজিদে আসরের নামাজের পর  বিশেষ নসিহত, কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআনের তাফসির করা হয়। কোথাও কোথাও হয় এশার নামাজের পর।

ইফতারে সামান্য পূর্বে নাইজেরিয়ান পরিবারগুলো পরস্পরে মধ্যে ইফতার বিনিময় করে। ইফতার আয়োজনে ‘হুম’ ও ‘কোকো’ নামীয় বিশেষ পানীয় তাদের পছন্দের শীর্ষে। যা গম ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। নাইজেরিয়ানরা সামান্য পরিমাণে ইফতার গ্রহণ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে তারা রাতের খাবার গ্রহণ করে। এ সময়ের আয়োজনে থাকে গোশত, ভাত ও আলু। খাবার শেষে তারা চা পান করে।

নাইজেরিয়ান মুসলিমদের আরেকটি ইফতার সংস্কৃতি হলো, প্রতিবেশী কয়েক ঘরের লোক কোনো বাড়ির আঙ্গিনায় একত্র হয়ে ইফতার করা। এছাড়াও নাইজেরিয়ানদের কাছে রমজানে প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে, ‘আসিদা’, দাউয়্যাহ’, ‘উনজুঝি’ ও ‘লুবিয়া। ’ যা গম, আলু ও গোশতের সমন্বয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। তারা বিশেষ জাতের সেমাই খুব পছন্দ করে।

নাইজেরিয়ায় তাবারির নামাজ আদায় করতে পুরুষরা মসজিদে যায় এবং শিশুরা ঘরে আলাদা জামাত করে। তারাবির নামাজ শেষ করে তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে কিছু সময় অতিবাহিত করে। এটি নাইজেরিয়ান সমাজের সৌন্দর্য।

নাইজেরিয়ান মহিলারা রমজানে হরেক পদের খাবার তৈরি করে। আর যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখে তারা তাদের সন্তানাদিদের ইসলামি আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। আবার কোনো কোনো পুরুষ স্ত্রীদেরকে তাদের সঙ্গে মসজিদে নিয়ে যায়। রমজানের শেষাংশে জাকাত ও ফেতরা আদায় করে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নাইজেরিয়ায় আক্ষরিক অর্থেই রমজান এক ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে। যার প্রতিফলন দেখা যায় তাদের জীবনযাত্রায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘন্টা, জুন ২৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।