ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ধনী দেশের ইফতার

কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
ধনী দেশের ইফতার

অমুসলিম দেশগুলোতে ইসলাম এবং মুসলমানদের অবস্থা ইসলামি ভূখণ্ডের চেয়ে অনেক আলাদা। ইসলামি ভূখণ্ড বলতে বোঝায় যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এমন ভূখণ্ডে মুসলমানদের জীবনযাপন আর অমুসলিম দেশে তাদের লেবাস-পোশাক, খাদ্যাভ্যাস তথা সামগ্রিক জীবনযাপনে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আমরা জানি, মুসলমানদের বেশি পরিমাণে অভিবাসনের ফলে অমুসলিম দেশগুলোতে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে। ফলে ওইসব দেশে বসবাসরত মুসলমানদের জীবনযাত্রা, রমজান পালন, ইফতার, সেহরি ও পানাহার সংস্কৃতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে তাদের আদিবাস ও বর্তমান দেশের সংস্কৃতি মিলে আলাদা এক আবহ তৈরি হয়।

আমাদের দেশের মতো পাশ্চাত্য সমাজ খেজুর, খোরমা, ছোলা দিয়ে ইফতারপর্ব শুরু করলেও সঙ্গে থাকে নানাবিদ খাদ্যদ্রব্য। পনির, সালাদ, ফল, স্যূপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি থেকে শুরু করে ইয়াগার্ট, হট বিনস বিভিন্ন ফলের রস, বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য দ্বারা তারা ইফতার করে থাকেন। তবে একেক দেশের খাদ্য তালিকা একেক রকম। ‘দসতুর ওআরজি’, ‘জিরান’ ও ‘ইসলামস্টোরি ডট কম’র বরাতে এমনই কিছু মুসলিম সংখ্যালঘু দেশের ইফতার সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ব্রিটেন
পাশ্চাত্যের যেসব দেশে ইসলামের বিস্তার বা জাগরণ চোখে পড়ার মতো- সেসব দেশের মধ্যে ব্রিটেন অন্যতম। ইফতারিতে ব্রিটিশ রোজাদাররা খেজুর, ফল, স্যূপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি গ্রহণ করে। ব্রিটিশ মুসলিম সমাজে বিশ লাখেরও বেশি জনগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে বাঙ্গালীদের রয়েছে সরব অংগ্রহণ, এমনকি নেতৃত্বও দিচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি। তাই অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানকার খাদ্যাভ্যাস বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। আঠারো এবং উনিশ শতকে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। সে সময়েই মুসলমানরা ব্রিটেনে যেতে শুরু করে। সর্বপ্রথম যে মুসলিম দেশ থেকে মুসলমানরা ব্রিটেনে গিয়েছিল সে দেশটি হলো ইয়েমেন। সে সময় ইয়েমেনিরা ব্রিটিশদের বাণিজ্য জাহাজে নাবিক হিসেবে কাজ করতো। সেই সুবাদেই তারা ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিল। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তারা ব্রিটেনে সর্বপ্রথম মসজিদ তৈরি করেছিল। তবে ব্রিটেনের মুসলমানদের বেশিরভাগই এসেছেন ভারত উপমহাদেশ থেকে। এ কারণে ব্রিটেনের ইসলামের রং এবং স্বরূপ অনেকটাই ভারতীয়। এবং সেখানকার বেশিরভাগ মুসলমানই হানাফি মাজহাবের অনুসারী।

ইতালি
ইউরোপ মহাদেশের শেষ প্রান্তে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের কিনারায় অবস্থিত ইতালি। মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মুসলমান। এই অল্পসংখ্যক মুসলমান রমজানে খুব আগ্রহ সহকারে সিয়ামব্রত পালন করেন। ইফতারিতে তারা বার্গার জাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন ফলের রস খান। সাহরিতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করেন। ইতালির পূর্বাঞ্চলে মুসলিম কমিউনিটিগুলোতে ইফতারের সময় বেশ ভীড় পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া রোজাদারদের জন্য পার্সেলের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে ইফতার ও সাহরি সামগ্রী প্রেরণের ব্যবস্থা রয়েছে।

আমেরিকা
আমেরিকাতে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে খেজুর, খোরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, মাংস, ইয়াগার্ট, হট বিনস, স্যূপ, চা ইত্যাদি থাকে। রমজান মাসে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টি প্রথম শুরু করছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এটা বর্তমানে একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট রমজান মাসে হোয়াইট হাউসে ৫৩টি দেশের মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রণ করে ইফতার পার্টি আয়োজন করেন। অনেক অমুসলিম এই মহাপবিত্র বরকতময় মাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হচ্ছেন।

কানাডা
কানাডার রাজধানী অটোরায় সর্বাধিক মুসলমান বসবাস করে, সংখ্যাটা প্রায় ষাট হাজার। অটোয়া ছাড়াও সাসকেচুয়ান, অল্টারিও, সিনেটোবা, টরেন্টো, কুইবেক রাজ্যগুলোতে মুসলমানরা বসবাস করেন। রমজানে ইফতার পার্টির আয়োজন চলে মহাসমারোহে এবং প্রতি সপ্তাহের একদিন অটোয়া ইসলামিক সেন্টারের ইফতার পার্টিতে দেশ বিদেশের অসংখ্য মুসলমান হাজির হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্যা মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন’ ইফতার পার্টির আয়োজন করে। ইফতারিতে খেজুর, খোরমা, পনির, সালাদ, ফল, সুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।

অস্ট্রেলিয়া
খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশটিতে সবাই শিক্ষিত। মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ মুসলমান। এখানকার মুসলমানগণ ইফতারিতে স্যান্ডউইচ, পনির, মাখন, দুধ জাতীয় খাবার, নানাবিধ ফল ও ফলের রস খেয়ে থাকে। সেহরিতে বার্গার খেয়ে তারা রোজা রাখেন।

দক্ষিণ কোরিয়া
এশিয়া মহাদেশের চীন ও জাপানের মধ্যস্থানে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়া দেশটির রাজধানী হলো সিউল। দেশটিতে বেশিরভাগ অধিবাসী হচ্ছে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ। মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ মুসলমান। ইফতারিতে এখানকার মুসলমানরা নুডলস, স্যূপ, ফলের রস, বিভিন্ন প্রকারের ফলফলাদি খেয়ে থাকেন। সাহরিতে খান মাংস ও রুটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘন্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।