সিলেট: করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছর নিয়ন্ত্রিত ছিল মানুষের চলাফেরা। বেশিরভাগ সময় ঘরে সময় কাটিয়েছে মানুষ।
বাসায় তৈরি ইফতারে মন ভরে না, তাই রেস্তোরাঁর বাহারি ইফতার ছাড়া যেন তৃপ্তি মেটাবার নয়। তাইতো এবার রোজার শুরু থেকেই সিলেট নগরের রেস্টুরেন্টগুলোতে তৈরি হচ্ছে বাহারি ইফতার।
রোজার প্রথম দিকে সাধারণত বাসা-বাড়িতে ইফতার আয়োজন থাকায় রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে কম। কিন্তু এবার সিলেটে সে দৃশ্যপট ভিন্ন। রোজার প্রথম দিন থেকেই রমরমা সিলেটের ইফতার বাজার। সেসব ইফতারসামগ্রী কিনে নিতে রোজাদারদের দীর্ঘ সারি প্রত্যক্ষ করা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতে। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও নগরের আনাচে-কানাচে দোকান ও ফুটপাতে ইফতার বিকিকিনি চাঙা হয়ে উঠেছে রোজার প্রথম দিনেই।
করোনাকাল কাটিয়ে উঠা সিলেটে এবার ইফতারের নানা আয়োজন রয়েছে। ভোজন রসিকদের কাছে প্রিয় ‘পাতলা খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়িতো আছেই। দিন শেষে খালি পেটে পাতলা খিচুড়ি শরীরে ভিন্ন মাত্রা যোগায়। গ্যাস্ট্রিকের জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পেতে পাতলা খিচুড়ি পছন্দের তালিকায় থাকে এক নম্বরে। এছাড়া রয়েছে জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু।
দোকানিরা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকাইয়া আদলে তৈরি ইফতারসামগ্রীতে মজেছেন ক্রেতারা। স্পেশালের মধ্যে রয়েছে- আস্তো খাসির রান দিয়ে তৈরি বড় বাপের পোলায় খায়, আস্ত মোরগের রোস্ট, কাবাব, কোয়েল-কবুতর ভুনা, মোরগ পোলাও, পেস্তা বাদামের শরবত, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকিয়া কাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের কাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, বিফ আখনি, মুরগির আখনি, হালুয়া, হালিম, কাশ্মীরি শরবত, ইসবগুলের ভূষি, পরোটাসহ অর্ধশতাধিক জাতের ইফতারসামগ্রী।
নগরের পালকি রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ী কবির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে রোজাদাররাও পছন্দের তালিকায় থাকে ভুনা ও পাতলা খিচুড়ি। এসবের সঙ্গে ছোলা পেঁয়াজু, বেগুনি, বাখরখানি, জিলাপি ইত্যাদি তৈরি করেছি ইফতারে। করোনাকাল পেরিয়ে এবার প্রথম দিনেই ইফতারের বাজার জমে উঠেছে।
সিলেটের জিন্দাবাজার পালকি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পানসী, পাঁচভাই, পড়শী, পাকশীসহ বড় বড় রেস্তোরাঁগুলো ব্যতিরেকেও রাস্তার ধারে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও এবারের রোজায় ইফতারের আয়োজন রেখেছেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে হোটেল-রেস্তোরাঁর সামনে মালিক ও কর্মচারীদের ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। নির্ধারিত স্থানে শোভা পেতে শুরু করে ইফতারসামগ্রী। আর ইফতারের ঘণ্টা দু’য়েক আগে থেকেই পড়ে বেচাকেনার ধুম পড়েছে।
আর পথচারীসহ যারা বাইরে ইফতার করেন তাদের জন্য আসন বিন্যাস করে রাখা হয়েছে রেস্তোরাঁগুলোতে। ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই শুরু হয় রেস্টুরেন্টগুলোতে চেয়ার দখলের লড়াই। এমন চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায় বেলা শেষে।
সিলেটের অর্নব আবাসিক এলাকা থেকে ইফতার কিনতে আসা আজমল আলী বলেন, করোনাকালে ভয়ে বাইরে থেকে ইফতার কিনে নেওয়া হয়নি। প্রায় দুই বছর পর এবার ইফতারসামগ্রী বাইরে থেকে কিনে নিচ্ছি। এবার আয়োজনও রয়েছে বেশ, তবে দাম একটু বেশি।
এবারও ইফতারির বাজারে চড়া দাম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৮শ’ টাকায়। মাটন লেগ রোস্ট ৩০০ টাকা, আস্ত মোরগের রোস্ট ৩৬০, বিফ আখনি ২৮০, চিকেন আখনি ২৫০ ও মাটন আখনি ২৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি জিলাপি ১২০-১৬০ টাকা, দইবুন্দিয়া কেজি ২২০, ফিরনি কেজি ২২০, চিকেন পরোটা ছোলা ১৬০ টাকা কেজি। কাবাবের মধ্যে চিকেন রেশমি কাবাব ৬০, চিকেন ফ্রাই ৭০, চিকেন স্টিক পিস ৭০-৯০, চিকেন নার্গেট ৫০-৮০, বিফ জালি কাবাব ২০-৪৫, বিফ স্টিক ৪০-৬০ টাকা ও বাখরখনি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারের দাম বাড়ার পেছনে কারণ হিসেবে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলেন, রোজা এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। যে কারণে ইফতারসামগ্রীর দাম বাড়াতে হয়। এছাড়া এবার ভোজ্যতেলেরও দাম বেড়েছে, তা কারো অজানা নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
এনইউ/আরবি