ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর: বীরত্বপূর্ণ ৯ ডিসেম্বরের সম্মুখযুদ্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর: বীরত্বপূর্ণ ৯ ডিসেম্বরের সম্মুখযুদ্ধ

৯ ডিসেম্বর ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন কাজী সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর ৬ যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।

৯ ডিসেম্বর ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন কাজী সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর ৬ যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।

সালাউদ্দিন ছাড়াও সেদিন শহীদ হন নওফেল, ওহাব, মুজিবর, দেলোয়ার, আদেল ও সোহরাব।  

বিজয়ের ৪৫তম বর্ষপূর্তিতে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই যুদ্ধের ঘটনা তুলে ধরতে চাই।

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর দুপর ১২টার দিকে যশোর-ফরিদপুর সড়কের করিমপুর এলাকায় এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন সেনাবাহিনীর জিপ নিয়ে ঢুকে পড়েন। কমান্ডার সালাউদ্দিন ওই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গর্জে ওঠে তার হাতের এলএমজি। রক্তে ভেসে যায় পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের জিপ। এর আধা ঘণ্টা পর যশোর থেকে আসা সেনা সাঁজোয়া বহর তিনদিক থেকে সালাউদ্দিন বাহিনীর ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘিরে ফেলে।

শুরু হয় তুমুল সম্মুখযুদ্ধ। বাকি সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহসী সালাউদ্দিন এলএমজি হাতে পাকিস্তানি সেনাবহরের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে থাকেন। তার ব্রাশ ফায়ারে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।

সালাউদ্দিনের এ অসীম সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে। একটু পরেই সংগঠিত হয়ে ফের হামল‍া চালায় সালাউদ্দিন বাহিনীর ওপরে।

ততোক্ষণে সালাউদ্দিনের গুলির মজুদ প্রায় শেষ। পরিস্থিতি বুঝে কৌশল পাল্টালেন তিনি। তার নির্দেশে জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলেন সহযোদ্ধারা। জীবন বাজি রেখে বুক চিতিয়ে এলএমজি’র ট্রিগার চাপতে থাকেন সালাউদ্দিন।

পাকিস্তানি হানাদারদের বহরে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে সংখ্যায় বেশি হওয়ায় এক পর্যায়ে সালাউদ্দিনকে ঘিরে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা। ছুটে আসতে থাকে অসংখ্য গুলি। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের একটি বুলেট এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় সালাউদ্দিনের এলএমজি’র ম্যাগজিন। আর একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় পিঠে। রক্তাক্ত সালাউদ্দিন সাতশ’ গজ দূরে একটি বাড়ির ঘরের পাটাতনে আশ্রয় নেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই বাড়িতে ঢুকে বাড়ির সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর গুলিবিদ্ধ সালাউদ্দিনকে ঘরের ভেতর রেখে বাড়ি শুদ্ধ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে  দেয়। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে শহীদ হন ২২ বছর বয়সী তরুণ যোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হলে সেই বাড়িতে শহীদ সালাউদ্দিনের কঙ্কাল শনাক্ত করা হয়। সেদিনই তাকে ফরিদপুর শহরের আলিপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বিজয়ের ৭ দিন আগে ৯ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য করিমপুরের এ সম্মুখযুদ্ধে সালাউদ্দিন বাহিনীর এ মহান আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গর্বের ইতিহাস।

আমাদের মতো আজকের তরুণ প্রজন্ম যারা যুদ্ধ দেখিনি, শহীদ সালাউদ্দিন ও তার সহযোদ্ধাদের দেশের জন্য এই মহান আত্মত্যাগ আমাদের দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে আমরাও জীবন উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করবো না। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, সে দেশকে আমরাই গড়ে তুলবো একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে।

ডা. কাজী নাজিব হাসান: শহীদ কাজী সালাউদ্দিন এর ভ্রাতুষ্পুত্র

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।