এই বিস্ময় বালকের নাম দ্বীন ইসলাম হোসেন হৃদয়। বয়স মাত্র ১৪ বছর।
দু'কুলে মা-বাবা ছাড়া কেউ নেই তার। কিন্তু, পরিবারের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়ার দরুণ পড়ালেখার চিন্তা থেকে সরে আসেন। কাঁধে তুলে নেন সংসারের ভার। শুরু করেন বাদাম বিক্রি। যেই বয়সে তার প্রতিবেশিদের ছেলেমেয়েরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতো সেই বয়সে তিনি কাঁধে বাদমের টুকরি নিয়ে ছোট্ট বাসা থেকে বের হতেন।
ফেরিওয়ালা হয়ে রাজধানীর অলিগলি ঘুরেছেন। সবই তার চেনা। ঢাকার প্রত্যেক রাস্তায় তার পদচারণা আছে। কিন্তু, এ পেশায় যে তার মন টানে না। তার ভালো লাগে স্কেটিং করতে। পড়াশুনা করতে। এ যুগে স্কেটিং তরুণ সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। সেই ভালোলাগাটাও মানুষের দেখে দেখে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা তারপর নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
স্বপ্ন থাকলে কঠোর পরিশ্রমে যে সেটা ধরা যায় তার অনন্য উদাহরণ হৃদয়। রায়েরবাজার শাখার ইউসেফ স্কুলে ঢুকে শুরু করেন স্কেটিং। এরপরে স্বপ্নের গল্পটা পরিবর্তন হয়। সুযোগ মেলে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিংয়ে অনুশীলন করবার।
উঠতি প্রতিভা দেখে স্কুল থেকে ৪০ হাজার টাকা উপহার দেয়া তাকে। তা নিয়ে স্কেটিং সামগ্রী কেনেন তিনি। শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। এরপরেই ফেডারেশনের নজর কাড়েন। সুযোগ মেলে রোল বল পুরুষ দলে।
এ পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন হৃদয়। এ দেই ম্যাচেই দ্যূতি ছড়িয়েছেন। পেয়ে যান বিশ্বকাপে সেরা ছয়ে খেলার টিকিট। আর চলমান রোল বল বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে অংশ নিয়ে করেছেন রেকর্ড সংখ্যক ১৫ গোল। যা যে কোন বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
উচ্চতায় ছোট হওয়ায় দলে তাকে মেসি বলে ডাকা হয়। তার সবচেয়ে বড় গুণ গতি ও ড্রিবলিং। কাউন্টার অ্যাটাকে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
এ তো শুরু। সামনে বিশ্ব দরবারে নিজেকে আরো তুলে ধরতে চান তিনি। হৃদয় বাংলানিউজকে জানান, 'আরও গোল করতে চাই। দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চাই। রোল বলে নিজেকে আরও বড় হিসেবে দেখতে চাই। '
পাশাপাশি দেশের উঠতি হাজারো উদীয়মান খেলোয়াড়দের যত্ন নিতে ফেডারেশনকে অনুরোধ জানান তিনি বলেন, 'অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে, তাদের খুঁজে এনে যত্ন নিলে দেশ আরও ভালো করবে। '
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
জেএইচ/এমআরএম