ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল প্রীতির। নিজের ঝুলিতে স্কুল পর্যায়ে পড়েছে অনেক পুরস্কার।
তবে দমে যাননি। মা-বাবাকে রাজি করাতে লেগে ছিলেন। তিন দিন কান্নাকাটি করার পর মা রাজি হন। অতঃপর ২০১০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি যে মেয়ে বিকেএসপিতে চান্স পাবে। অতঃপর ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হলেন। শুরু হলো জীবন যুদ্ধ।
স্কুল পর্যায়ে ভালো ব্যাডমিন্টন খেলার কারণে চ্যাম্পিয়ন গার্ল নামে পরিচিত ছিলেন প্রীতি। তবে তখন বিকেএসপিতে ব্যাডমিন্টন ছিল না। টেনিস খেলার পরামর্শ দেয় প্রশিক্ষকরা। টেনিস খেলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। তবে, নতুন যেকোনো খেলাই তাকে মুগ্ধ করতো, শিখতে আগ্রহী করতো, ‘যদিও এই খেলা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না আমি। নতুন খেলার প্রতি আগেই আগ্রহ থাকতো আমার। টেনিস চর্চা শুরু করি। কিন্তু বাবা-মা’র খুব একটা সমর্থন পেতাম না। তারা বলতো, মেয়ে হয়ে কতদূর আর যেতে পারবা। আমার আগ্রহ অনেকটা বেশি ছিল। ’
এরপর একে একে বিকেএসপির সিনিয়রদের হারালেন। তবে সিনিয়রদের সঙ্গে খেলেও শুনতে হয়েছে দুয়োধ্বনি, ‘যখন জুনিয়র হয়ে সিনিয়রদের সাথে খেলতাম তখন ওই সার্কেলে আমিই একমাত্র জুনিয়র ছিলাম। তারা বলতো, আমাদের মাঝে কেন জুনিয়র থাকবে। এভাবে অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝে আমি বড় হই। ’
নিন্দুকেরেই যে প্রীতি বেশি ভালোবাসেন। সেই সমালোচনাকেই শক্তি হিসেবে রূপান্তর করে জয়ের পর জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। অনূর্ধ্ব-১৪ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপে মহিলা এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়েন। অবশেষে গত বছর দেশের প্রথম উন্মুক্ত টেনিস টুর্নামেন্টে নারী বিভাগের এককে চ্যাম্পিয়ন হন প্রীতি।
কম বয়সেই বড় তারকাদের হারিয়ে দেশের সর্বোচ্চ শেখড়ে গিয়েও যেন অতৃপ্তি তার মুখে, ‘আমি আরও জিতচে চাই। দেশের হয়ে অনেক কিছু জিততে চাই। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চাই। ’
১৪ বারের গ্রান্ডস্লাম জয়ী স্পেনের রাফায়েল নাদালকে অনুসরণ করেন প্রীতি। নাদালের মতো হতে চান। জিততে চান আন্তর্জাতিক পুরস্কার। দেশের সুনাম বয়ে আনতে চান।
একই সাথে দেশের নারীদের আগমনী বার্তা দিতে চান, দেশের নারীদের এগিয়ে নিতে চান। প্রীতি বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা প্রপার ট্রিটমেন্ট পায় না। সুযোগ পায় না। যারা বিকেএসপিতে পড়ে তারা সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব জন্মে। আমাদের মেয়েরা সেই সুযোগ পেলে ভালো করবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ৮ই মার্চ, ২০১৭
জেএইচ/এমএমএস
আরও পড়ুন...
**অদম্য চার নারীর হার না মানার গল্প