করোনা মহামারির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এতে আইপিএলের দরজা খুলে গেছে।
শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নয়, এবারের এশিয়া কাপও বাতিল করা হয়েছে। দুটি আসর স্থগিতের জন্য আইপিএলকেই দায়ী করেছেন শোয়েব আখতার। পাকিস্তানের ‘জিও ক্রিকেট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এশিয়া কাপ হতে পারত। ভারত এবং পাকিস্তানের জন্য একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার দারুণ একটি সুযোগ ছিল। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। ’
শোয়েব বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও হতে পারত। কিন্তু আমি আগেই বলেছি তারা এটা হতে দেবে না। বিশ্বকাপ গোল্লায় যাক, আইপিএলের ক্ষতি হওয়া চলবে না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এশিয়া কাপ কিছুতেই হতো না, আপনারা শুধু হাওয়ায় ভরসা করেছেন, যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, তারা এটা হতে দিত না। ’
এভাবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বাতিল করে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগগুলোকে ছাড় দেওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না শোয়েব। তার মতে, এটা অনৈতিক। এভাবে চলতে থাকলে শুধু দুটি বিশ্বকাপ আর কয়েকটা টি-টোয়েন্টি লিগই টিকে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলি কি, যদি আগামী দুই বছর আমরা সুবিচারের পথে না যাই, পরবর্তীতে শুধু দুটি বিশ্বকাপ এবং ১০টি টি-টোয়েন্টি লিগ থাকবে। আইসিসি যদি সেদিকে যেতে চায়, তাহলে তাই হোক। এটা তাদের ইচ্ছা, আমরা শুধু ক্রিকেট ধ্বংস হওয়া নিয়ে কথা বলতেই পারি, কিছুই করতে পারি না। ’
রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস আরও বলেন, ‘এখনও যদি আপনি সুবিচারের পথে না যান, তাহলে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আরও কমবে। আপনি যদি চান কেউ অদ্ভুতভাবে ২০ হাজার রান করুক, সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু এটা আমাদের যুগের ক্রিকেটে ছিল না। আমাদের সময়ের সমর্থকরা এখনও আমাদের ভক্ত। আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি তা সারাজীবন স্মরণ করা হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুগ, কিংবা নব্বই দশকে আমাদের যুগ এবং এরপরের যুগেও, অনেক বড় বড় নাম ছিল। মানুষ ওই যুগ মনে রাখবে। ’
ভারতের প্রভাবে ক্রিকেটে যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে হতাশ শোয়েব বলেন, ‘আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে ভারতের উচিত ক্রিকেট বাঁচানো। কিন্তু তারা তা করবে না। ঠিক আছে, এটা আমার যুগকে প্রভাবিত করতে পারবে না। শচীনের সঙ্গে আমার ম্যাচগুলো এখনও স্মরণ করা হয়। কিন্তু এখন আপনি কোয়ালিটি ক্রিকেট দেখতে পারবেন না। আমি যখন স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে ছিলাম, তখন ৮০ মিলিয়ন দর্শক ছিল এবং আমি ছেড়ে আসার পর শুধু ভারতেই তাদের দর্শক সংখ্যা ৪৫ মিলিয়নে নেমে গেল। ’
শোয়েবের মতে, প্রভাবশালী ক্রিকেট কর্তারা শুধু বিশ্বকাপ আর কয়েকটা লিগ নিয়েই ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে অর্থ যাচ্ছে তা থামানোই নাকি এদের লক্ষ্য। বিশ্ব ক্রিকেটে বিসিসিআই’র হস্তক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শোয়েব। এ প্রসঙ্গে তিনি অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে বর্ণবাদী গালি দিয়েও হরভজন সিংয়ের বেঁচে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে সিডনিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির ম্যাচে হরভজনের বিরুদ্ধে তাকে ‘বানর’ বলে গালি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন সাবেক অজি অলরাউন্ডার। যদিও সাবেক ভারতীয় স্পিনার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির বলের রেকর্ডধারী শোয়েব বলেন, ‘অনেক সময় তারা (ভারত) মেলবোর্নে সহজ উইকেট পায়, একইসঙ্গে একজন আরেকজনকে বানর বলে ডাকলেও কোনো সাজা পায় না। এমন কিছু হলে তো সিরিজ বয়কট করার কথা, আমি অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে জানতে চাই, তাদের নীতি কোথায়?’
‘তোমরা বল ঘষার জন্য বাচ্চাদের কাঁদাতে পারো আর তারা একজনকে বানর ডেকেও পার পেয়ে যায়। তারা (বিসিসিআই) সিরিজ শেষ করে দিতে চেয়েছিল আর তারা (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) বলল, তেমন কিছুই হয়নি। এটাই তোমাদের নৈতিক অবস্থান? স্ট্যাম্প মাইকে কি তোমরা আওয়াজ পাওনি? নাটক বন্ধ করো, সোজা বলে দাও, বিসিসিআই তোমাদের টাকা দিয়েছে এবং তোমরা এখন চুপচাপ মেনে নিচ্ছো,’ শেষ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস