চট্টগ্রামের আর দশটা সাধারণ ছেলের মতোই সাব্বির হোসেনের ক্রিকেটের শুরু। গুরু তপন দত্তের কাছে ক্রিকেটের হাতেখড়ি।
পাঁচ বছরের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারের বেশির ভাগটাই কেটেছে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে। এর আগে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছেন। তবে সাব্বির আলোচনায় এসেছেন এ বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে। ১৬ ম্যাচে প্রায় ৭০ গড়ে ৫ ফিফটি ৩ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৯০৫ রান। নিজের দল র্যাপিড ফাউন্ডেশনকে তুলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।
তবে বছরের পর বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলা টিকে থাকা সহজ ছিল না সাব্বিরের জন্য। অনেকবারই মনে হয়েছে হাল ছেড়ে দেই, কিন্তু লড়াই করতে পারার আত্মবিশ্বাস নিয়ে টিকে থেকেছেন। তাতে কী হয়েছে? বিসিবির এবারের হাই পারফরম্যান্স দলে ডাক পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
ফোন করে অনুভূতি জানতে চাইতেই স্পষ্ট বোঝা গেল সাব্বিরের আনন্দ, বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে জানালেন ক্যাম্প থেকে নিজেকে করতে চান পরিপূর্ণ ক্রিকেটার, ‘সত্যি কথা বলতে আমার বিশ্বাস ছিল কিন্তু নিজেকে হয়তো ওভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি এতদিন। এবার ভাগ্য পক্ষে থাকায় হয়ে গেছে। ক্যাম্পে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা থাকবে ভুল শুধরে কীভাবে নিজেকে আরও পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে পারি। ’
ক্রিকেটটাকে হৃদয় থেকে ধারণ করেন সাব্বির। কাভার ড্রাইভ খুব ভালো খেলেন, নিজের প্রিয় শটও। দেশের হয়ে টেস্ট খেলার ইচ্ছে মনে লালন করেন, স্বপ্নটা পূরণ হলে সেটাই হবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন। প্রিয় ক্রিকেটার কেন উইলায়মসনও এই ফরম্যাটের বড় বিজ্ঞাপন।
সাব্বির অবশ্য প্রত্যাশা করেননি এসবের কিছুই, ‘আসলে সত্যি বলতে ওই রকম প্রত্যাশা ছিল না। আমি মৌসুমটা শুরু করেছি এই বছর যেন টপ কিছু করতে পারি এমন লক্ষ্য নিয়ে। এই ধরনের একটা মানসিকতা নিয়ে অনুশীলন করেছি মৌসুম শুরুর আগে, সেটাই কাজে লেগে গেছে। ’
‘আমার হাতে একটা জিনিসই আছে ঘাম ঝরানো বা পরিশ্রম করা। সত্যি কথা বলতে আমি কখনো প্রত্যাশা করিনি এমন কিছু। এর আগেও অনেকে প্রথম বিভাগে পারফর্ম করে অনেক ভালো জায়গায় গেছে। আমারও তেমন ইচ্ছে ছিল আর সঙ্গে লক্ষ্য ছিল যে আমার দলকে প্রিমিয়ার লিগে তুলব। ’
দিশাহীন ক্যারিয়ারটা এখন একটু হলেও গুছিয়েছে সাব্বিরের। এইচপির ক্যাম্পে থাকা মানে বিসিবির নজরে আছেন। ভালো কোচদের সাহায্য পাওয়া যাবে। উন্নতির তাড়নাটা আছে তার নিজের মধ্যেও। কী শিখতে চান জানতে চাইলে সাব্বির বললেন, ‘নিজের স্কিল আর ফিটনেসে উন্নতি চাই। আমি উইকেটরক্ষক যেহেতু, সেটার উন্নতিও। এত বড় মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে পারা আমার জন্য অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার। ’
অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। চট্টগ্রামে শুরু হওয়া ক্যারিয়ার এখন এইচপি ক্যাম্পে। যেখান থেকে উন্নতি করতে পারলে কোথায় যাওয়া যাবে, নিশ্চয়ই অজানা নয় সাব্বিরের। তবে তিনি জানতেন বা জানেন, একটা মাস কিংবা মৌসুমই বদলে দিতে পারে সবকিছু।
‘ক্রিকেটের জীবনটা এমন- আপনাকে কখন, কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ বলতে পারবে না। মনে করেন, এই বছর ভালো গেছে বা একটা মৌসুম, পুরো জীবনই বদলে যায়। আসলে ওই বিশ্বাসটা নিয়েই প্র্যাক্টিস করতাম, এমন একটা বিশ্বাস ছিল যে একটা বছর আমার আসলে হয়তো আমার জীবনও বদলে যাবে। ’
শেষে এসে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের কথাও বললেন সাব্বির, ‘সবার স্বপ্ন থাকে, আমারও আছে। আমি ডমিনেট করে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে চাই। যদি খেলতে পারি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হবে। ’ সাব্বিরের স্বপ্ন সত্যি হলে, দেশের ক্রিকেটেরও নিশ্চয়ই লাভই হবে!
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
এমএইচবি