পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে।
সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গন ২০ এপ্রিল জাতীয় জাদুঘরের সামনে যৌনসন্ত্রাসের প্রতিবাদে এক সংস্কৃতি সমাবেশের আয়োজন করে। দেশের নানা পেশার সচেতন নাগরিক ও শিল্পীবৃন্দ এখানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, মূকাভিনয় পরিবেশন করেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ নিন্দামূলক ভিডিও পোস্ট করেছ্নে, কেউ কেউ নিজের কাভারে নারী নির্যাতন বিরোধী প্রতীকের ছবি রেখেছেন। কয়েকজন তারকার মন্তব্য সংগ্রহ করে দেওয়া হলো।
ওমর সানি
হায়েনা না আমরা। নিজেদেরকে মানুষ বলি। আশরাফুল মাকলুকাত। মেয়েরা মায়ের জাত, আসুন সবাই তাদের সম্মান করি। আর সম্মান করতে অক্ষম হলে চলেন নিজেরাই চিড়িয়াখানার পশু হয়ে খাঁচা বন্দি করে রাখি আমাদেরকে। লজ্জা। ছি!
কুসুম সিকদার
বাজে দৃষ্টিভঙ্গি ও বাজে অঙ্গভঙ্গি দেখলে এবং উক্ত্যক্তকর শিস শুনলে তড়িঘড়ি রুখে দাঁড়ান। এখন আমাদের নারীদের সময়।
পূর্ণিমা
ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ভারতকে নিয়ে এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আমরা করেছি। কিন্তু আমাদের দেশে টিএসসিতে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো। কারও কোনো প্রতিবাদ নেই কেনো? সবাই এখন চুপ কেন?
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি
তো, সেদিনতো শড়িই পড়া ছিল! সবচেয়ে ভদ্র, মার্জিত পোশাক হিসেবে ইহার সুনাম শুনা যায়। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনি। যে হাত উসখুশ করে নারীর শরীর চাপাচাপির জন্য সে হাত শাড়ী, বোরখা কিংবা শর্টসের ধার ধারে না। শাড়ির ফাঁকে পেট, শর্টসের খোলা পা অথবা বোরখার ওপরে উঁচু বুক- সব দিকেই অসুস্থ চোখ নজর দেয়। তাদের আগ্রহটা কেবল নারীর শরীরে। তাহলে কেন শুধু শুধু তাদের জন্য রেখে ঢেকে ভালো মেয়ে সাজার চেষ্টা! আপনার যা ভালো লাগে তাই পরেন না! আর সেই অসভ্য নজর থেকে পালানো আর কতদিন? হোক পাল্টা আঘাত। বিষয়টা তো পোশাকের না, বিষয়টা মানসিকতার , শিক্ষার! আর পোশাক আর শিক্ষা তো ভাগাভাগি হয়ে যায় অংকুরেই, যেদিন স্কুলে একদল জামা-জুতা, একদল পাঞ্জাবি-টুপি আরেকদলের গলায় টাই। অন্য এক দলের তো জামা- জুতাও থাকেনা। আরেকদলতো এসব কিছুই দেখেনা, তাকে বড় করা হয় কেবল বিয়ের জন্য! এত শ্রেণিভেদ যেখানে সেখানে এর চাইতে ভালো আর কি আশা করা যায়? পরিবার, পারিপার্শ্বিকতা, সমাজ আর তার একেকজন নতুন মানুষ প্রচলিত ব্যাবস্থায় তাল মেলাতে না পেরে হয় বেতাল কিংবা অসুস্থ। মানুষ হয়ে উঠার মানসিকতা হারায় কেউ কেউ। যার ফল ভোগ করতে হয় অন্যদের। এভাবে আর কত দিন ? রাষ্ট্র ব্যার্থ হলে কি আর করা! এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই।
শামীমা তুষ্টি
তরুণ, যুবা, বৃদ্ধ মিলে,
হোক প্রতিবাদ, হোক প্রতিবাদ।
ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরজীবী,
হোক প্রতিবাদ, হোক প্রতিবাদ।
তুমি, আমি, আমরা মিলে,
হোক প্রতিবাদ, হোক প্রতিবাদ।
অভিনেত্রী ঈশিকা খান
এ দেশকে স্বাধীন দেশ আর বলবেন না দয়া করে। যেখানে মেয়েদের রাস্তাঘাটে ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। যেদেশে মেয়েরা এখন রাস্তায় নামার সময় আতঙ্কে থাকে। যে দেশে ১৪ এপ্রিল এত জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে এবং ছয় দিন হয়ে গেলো দোষী কাউকেই ধরচ্ছে না, গ্রেফতার হচ্ছে না, শাস্তি তো অনেক দূরে থাক। এদেশে ৪০ বছর পরও যদি রাজাকারদের শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে ১৪ এপ্রিল যারা ওই জঘন্য কাজটি করলো তাড়া আমার মতে রাজাকারদের থেকেও খারাপ। তাদের ছবি সবার ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে। তা-ও তাদেরকে কেন ধরতে পাড়চ্ছে না? এবং কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? জানি এর কোন বিচারই হবে না। কিছুদিন ঝড় বইবে ফেসবুক, পত্রিকার পাতা এবং টিভি চ্যানেলে। তারপর সবাই ভুলে যাবে। এবং আবার হয়তো কোনো একদিন অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে এমন হবে। হয়তো সেই মেয়েটি আমিও হতে পারি, হতে পারে আপনার মা, বোন, বউ বা মেয়ে।
* অভিনেত্রী টয়ার নিন্দামূলক ভিডিও :
বাংলাদেশ সময় : ২২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
জেএইচ