মার্ভেল কমিকসের প্রিয় সব সুপারহিরোকে একসঙ্গে দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা একবারই হয়েছে দর্শকদের, দুই বছর আগে ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’ ছবিতে। দেড়শো কোটি ডলারেরও বেশি আয় করার পর দ্বিতীয় দফায় এক ফ্রেমে হাজির বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তোলা মার্ভেল কমিকসের সব সুপারহিরো।
‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’ নামের ছবিটি নিয়ে চলচ্চিত্র পর্যালোচক ও সমালোচকরা ইতিবাচক মন্তব্যই করছেন বেশি। ছবি নয়, তাদের মতে এ যেন পুরোদস্তুর অভিজ্ঞতা! ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’ তুমুল ব্যবসা করায় প্রত্যাশার যে পারদ উঠেছিলো, নতুন ছবি মুক্তির পর সেটা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য তাদের। পরেরটা কবে হচ্ছে তা নিয়েও তৈরি হয়ে যাবে প্রত্যাশা।
এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা ভরপুর উত্তেজনা, হুটোপুটি, ছোটাছুটি পাওয়া যাবে। এক মুহূর্তের জন্যেও পর্দা থেকে চোখ সরানোর উপায় নেই যেন! সাম্প্রতিক সময়ের কোনো সুপারহিরো নির্ভর ছবি বা অ্যাকশন ধাঁচের ছবি নাকি এমন জমজমাট হয়নি। ছবির নাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আসন থেকে উঠে পড়লে নাকি মিস হয়ে যাবে অনেককিছু।
মার্ভেল স্টুডিওর কাছ থেকে ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন পরিচালক জশ হোয়েডন। এবার তিনি আরও একধাপ এগিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য পর্যালোচকদের। অ্যাভেঞ্জারদের ক্ষমতা এবং অক্ষমতা, প্লটের সঙ্গে সাবপ্লট, সুপারহিরো ভাবমূর্তির সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলা দুঃখ-কষ্ট-হতাশার একটা জগৎকে মিলিয়ে দিয়েছে এই ছবি। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’ দেখলে পাওয়া যাবে সেই অনুভূতি। স্লো-মোশনের সঙ্গে দ্রুতগতি এমনভাবে মিশিয়েছেন পরিচালক, যা অসামান্য। সিজিআই (কম্পিউটার জেনারেটেড গ্রাফিক্স) খুবই উঁচুমানের। গল্পে এবারও আছে টনি স্টার্কের রসবোধ, হাল্কের সঙ্গে ব্ল্যাক উইডোর বন্ধুত্ব এবং প্রেমের সম্পর্ক।
আগামী ১ মে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাবে এটি। ২ ঘণ্টা ২১ মিনিট ব্যাপ্তির ‘অ্যাভেঞ্জার্স : এজ অব আলট্রন’ পরিবেশনার দায়িত্বে আছে ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওস মোশন পিকচার্স। একই দিন ছবিটি আসছে ঢাকায়ও। বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য আনন্দের ব্যাপার হলো -দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি গত বছর বাংলাদেশে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির জাহাজভাঙা অঞ্চলে এর একটি দৃশ্যের চিত্রায়ন হয়।
মার্ভেল কমিকসের অ্যাভেঞ্জার্স মানেই সব সুপারহিরো মিলে দুনিয়া বাঁচাতে এগিয়ে আসা। অ্যাভেঞ্জারদের কেউ দেবতা, কেউ লৌহমানব, কেউ আবার সবুজ দৈত্য! অদ্ভুত তাদের প্রযুক্তি, বিচিত্র তাদের ক্ষমতা। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কড়ায়-গন্ডায় বিনোদন উপহার দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’ সেখানেই সফল। অ্যাভেঞ্জার্সদের দল ফুটবল টিমের মতোই। কে স্ট্রাইকার, কে ডিফেন্ডার, কে উইঙ্গার, কে-ই বা গোলকিপার, তা নিয়ে মাথা ঘামালে বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’-এ সেটা হতে দেননি পরিচালক জস হোয়েডন। পুরো চ্যাম্পিয়ন্সস লিগের সেরা টিমের মতো খেলার সুযোগ দিয়েছেন সবাইকে। কোনও বাড়তি গুরুত্ব পাননি কেউই।
এবারের ছবির প্রেক্ষাপট পেতে হলে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য উইন্টার সোলজার’ (২০১৪) দেখা থাকা চাই। ওই ছবিতে মার্ভেল দুনিয়ায় ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস দমনকারী এজেন্সি ‘শিল্ড’ বন্ধ করে দেয়। এরপর পৃথিবীতে সম্ভাব্য ভিনগ্রহী আক্রমণ প্রতিরোধের কথা ভেবে টনি স্টার্ক ওরফে আয়রনম্যান (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র) তৈরি করে আলট্রন (কণ্ঠ জেমস স্পেডার)। ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’ ছবিতে সেই আক্রমণ দেখা গেছে। আলট্রন হলো বিশ্বশান্তি বজায় রাখার একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যার অবয়ব না থাকলেও মস্তিষ্ক আছে। সেই আলট্রনই একসময় অ্যাভেঞ্জার্স দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পুরো মানবজাতিকেই আসলে বিলীন করে দিতে চায় সে। তাই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে আবার একজোট হয়ে আলট্রনের মোকাবিলা করে অ্যাভেঞ্জাররা। আয়রনম্যান, হাল্ক (মার্ক রাফেলো), ক্যাপ্টেন আমেরিকান (ক্রিস ইভানস), থর (ক্রিস হেমসওয়ার্থ), ব্ল্যাক উইডো (স্কারলেট জোহানসন) এবং হকআই (জেরেমি রেনার) একসঙ্গে মুখোমুখি হয় আলট্রনের। এ ছবিতে আরও কয়েকজন বিশেষ ক্ষমতাধর কুইকসিলভার (অ্যারন টেলর-জরসন), স্কারলেট উইচ (এলিজাবেথ অলসন) এবং ভিশনের(পল বেটানি) সঙ্গেও লড়তে হয় অ্যাভেঞ্জারদের।
টুকিটাকি ১০
* মার্ভেল, সনি ও ফক্সের মধ্যে স্বত্ত্ব নিয়ে ঝামেলা চললেও ‘এক্স-মেন’ সিরিজের উলভারিন চরিত্রের অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এর নতুন পর্বে কাজ করতে চেয়েছিলেন। আয়রনম্যানের সঙ্গে উলভারিন মারামারি করছে, এটা দেখার ইচ্ছা ছিলো তার।
* মার্ভেল স্টুডিওর অন্য সব ছবির চেয়ে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’-এ সবচেয়ে বেশি (তিন হাজার) ভিএফএক্স দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে ‘গার্ডিয়ান্স অব দ্য গ্যালাক্সি’ (২০১৪) ছবিতে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ৭৫০টি ভিএফএক্স দৃশ্য ছিলো।
* ছবিটির ট্রেলার প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ইউটিউবে দেখা হয় রেকর্ডসংখ্যক ৩ কোটি ৪০ লাখ বার। এর আগের রেকর্ডটি ছিলো ‘আয়রন ম্যান থ্রি’র (২০১৩) দখলে।
* ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’ ছবির দৃশ্যধারণ চলাকালে অন্তঃসত্ত্বা হন স্কারলেট জোহানসন। এ কারণে ভাড়া করা হয় তার মতো দেখতে তিনজন স্টান্টকে। কাজ চলাকালে অন্য অভিনয়শিল্পীরা দ্বিধায় থাকতেন তারাই জোহানসন কি-না! এ ছাড়া সন্তানসম্ভবা বোঝা যাওয়ার আগেই স্কারলেটের দৃশ্যগুলোর কাজ হয়।
* মজার বিষয় হলো, ব্ল্যাক উইডো চরিত্রের অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন ও হাল্ক রূপী মার্ক রাফালোর জন্মদিন একই!
* এবারের ছবির খলনায়ক আলট্রন চরিত্রে জেমস স্পেডারের প্রথম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন অন্য অভিনয়শিল্পীরা। ৫৫ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেতার প্রশংসায় হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন তারা।
* ছবিটিতে মার্ভেল কমিকস থেকে নতুন আরও যুক্ত হয়েছেন কুইকসিলভার এবং স্কারলেট উইচ। তবে অ্যাভেঞ্জারদের দলে নয়, তারা থাকছে আলট্রনের পাশে। এ দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে অ্যারন টেলর-জনসন ও এলিজাবেথ ওলসেন। ‘গডজিলা’র (২০১৪) পর অ্যারন টেলর জনসন ও এলিজাবেথ ওলসেন এ নিয়ে দ্বিতীয়বার একসঙ্গে কাজ করলেন। তাদের মধ্যে অ্যারনকে ওজন ও পেশী কমাতে বলা হয়। কারণ কুইকসিলভার চরিত্রে দৌড়ের জন্য তুলনায় বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছিলো তাকে।
* নতুন ছবিতে হকআইয়ের নতুন পোশাক বানানো হয়েছে তার মূল মার্ভেল কমিকস, আলটিমেট মার্ভেল ও তার রনিনের পরিচিতির সম্মিলনে।
* আগের ছবির মতো এবারও মারিয়া হিল চরিত্রে অভিনয় করেছেন কোবি স্মালডার্স। কানাডিয়ান এই অভিনেত্রী ২৫ বছর বয়সে গর্ভাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন তার বয়স ৩৩ বছর।
* মার্ভেল স্টুডিওর ছবিতে কাজ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গোপনীয়তার চুক্তি করতে হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু হলিউডের বাঘা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্স সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ায় ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন’ ছবির চিত্রনাট্য গোপন রাখার জন্য প্রতিদিনের দৃশ্যধারণ শেষে চিত্রনাট্যের পাতা পুড়িয়ে ফেলা হতো। অভিনয়শিল্পীদেরকে কখনও চিত্রনাট্য ই-মেইল করা হয়নি। নিরাপত্তা রক্ষীরা হাতে হাতে চিত্রনাট্য দিতেন তাদেরকে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ