গলার চেইনটা চোখে পড়ে কি পড়ে না। সোনালি রঙা ওই হার গায়ের ফরসা রঙে মিলেমিশে একাকার! কানের দুলজোড়া নজর কাড়ে দূর থেকে।
‘আমার বেলা যে যায়’ টেলিছবির মাধ্যমে অভিনয়ে ফিরেছেন পূর্ণিমা। আরিফ খানের পরিচালনায় এর দুটি দৃশ্যধারণের পরই বললাম, এবার চলুন আপনাকে নিয়ে ছাদে যাই। ছবি তুলতে, গল্প করতে। ছাদে যেতে যেতে মনে পড়লো, প্রায় তিন বছর আগে নুজহাত আলভী আহমেদের পরিচালনায় ‘স্বপ্নতরী’ নাটকের জন্য সর্বশেষ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। পূর্ণিমা সামনে মানেই ঝলমলে আলো! মৌসুমী, শাবনূর, পপির পর রূপালি পর্দার আশার ফুল তো তিনিই ছিলেন। কতো ছবিতেই না দর্শকদের মোহিত করলেন!
পূর্ণিমার অ্যালবাম থেকে নেওয়া বিভিন্ন সময়ের ছবি দিয়ে ফটোফিচার করেছিলাম গত ঈদে প্রকাশিত বাংলানিউজের পাঁচ বছর পূর্তির ম্যাগাজিনে। এগুলোতে পাওয়া যায় তার জীবনের গল্প, ফেলে আসা দিনের কথা, স্মৃতির জানালা। তার সঙ্গে দেখা হবে জানতাম, তাই ম্যাগাজিনটির সৌজন্য সংখ্যা বয়ে নিয়ে গেলাম। বাংলানিউজের প্রথম ছাপা ম্যাগাজিনে নিজের শৈশব-কৈশোর ও চলচ্চিত্র জীবন নিয়ে এমন আয়োজন দেখে পূর্ণিমা খুশি হলেন, এরপর হাসিমুখে ম্যাগাজিনটি নিলেন হাত বাড়িয়ে। এরপরই বললেন, ‘আপনি আমার ফেসবুকে আছেন না?’
পর্দায় খুব একটা না থাকলেও ফেসবুকে পূর্ণিমা নিয়মিতই থাকেন। নানান সময়ে রান্না করা খাবারের ছবি পোস্ট করেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিজের বেশকিছু নকল আইডি নিয়ে বিরক্ত হতেও দেখা গেছে তাকে। সংসার-সন্তান সামলে যতোটা সময় পান, ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করেন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। মা-ই রেখেছেন মেয়ের নাম। ওর পুরো নাম কী? ছাদে ওঠার লিফট থেকে নামতে নামতে বললেন, ‘আরশিয়া উমায়জা’। মেয়ের প্রথম জন্মদিন ঘরোয়াভাবে উদযাপন করেছেন তিনি। জানালেন সেকথাও।
পূর্ণিমা অভিনয় করছেন ১৭ বছর হয়ে গেলো। মানে প্রায় দেড় যুগ। এখনও তাকে কোথায় যেন কলেজ পড়ুয়াই মনে হয়! কার না জানা, তার প্রথম ছবি ‘এ জীবন তোমার আমার’। তখন তিনি প্রায় পিচ্চি মেয়ে! কোন ক্লাসে যেন পড়তেন? ‘নবম শ্রেণীতে। ’ তার চোখে-মুখে এখনও চাঞ্চল্য খেলা করে। তবে ছাদে দেয়াল ধরে একপাশে হেলে নায়িকাদের মতো পোজ দিতে চান না এখন। রসিকতার সুরে বললেন- ‘আমার বয়স হয়েছে!’
ছবি তোলা শেষে ছাদ থেকে নামার জন্য ফের লিফটে উঠতেই জানতে চাইলাম, আরশিয়ার বয়স কতো? উত্তর এলো- ‘১৫ মাস। ’ সেজন্যই নতুন কোনো ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। বড় পর্দায় গত বছর সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ছবিতে সর্বশেষ দেখা গেছে পূর্ণিমাকে। তবে ওটার কাজ হয়েছিলো তার বিয়ের আগেই।
চলতি মাসের শেষের দিকে আরেকটি নাটকে কাজ করবেন। নাম ‘প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাত দিন’ (নূর সিদ্দিকীর রচনায় পরিচালনা করবেন তুহিন হোসেন)। এখানে তার সহশিল্পী থাকবেন মোশাররফ করিম ও ইরেশ যাকের। একটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কয়েকদিন আগে মডেল হয়েছেন পূর্ণিমা। নতুন দুটি কাজ নিয়ে পূর্ণিমার কথা- ‘আফজাল ভাই, সুবর্ণা আপা আর মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে এক সেটেই কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। তাই সহশিল্পীর কথা শুনেই ‘আমার বেলা যে যায়’ টেলিছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি। ’ বিরতি ও ফেরা প্রসঙ্গে যোগ করে বললেন, ‘মা হওয়ার কারণে বিরতিতে ছিলাম। আমার বাচ্চা এখনও ছোট। ওকে রেখে কাজ করতে অনেক অসুবিধা হয়। তবে ভালো লাগা থেকে টুকটাক অভিনয় করবো। ’
আর বড় পর্দা থেকে বিদায়ের যে একটা গুঞ্জন আছে, সেটা কি ঠিক? প্রশ্নটা শুনে মুখ খোলার আগে হাসলেন পূর্ণিমা- ‘ভবিষ্যতে কি হয় তা এখন বলতে পারছি না। বেছে বেছে ভালো কাজ করতে পারি। হতে পারে চলচ্চিত্র, নাটক কিংবা বিজ্ঞাপন। সংসারী হয়েই এখন আমি খুশি। ’
বিদায়বেলায় পূর্ণিমাকে ফিরে দেখি। ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘রাক্ষুসী’- এমন প্রায় ৮০টি ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ ছবির জন্য ২০১০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার আছে তার ঘরে। সেই ঘরটা সাজিয়ে সুখী তিনি। এই সুখের হাওয়া বইতে থাকুক।
বাংলাদেশ সময় : ২১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
জেএইচ