ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

তারার ফুল

এবার জটায়ুকে খুঁজবেন স্বয়ং ফেলুদা!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এবার জটায়ুকে খুঁজবেন স্বয়ং ফেলুদা! সন্দীপ রায়-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: ‘উটেরা কি কাঁটা বেছে খায়?’— এই সংলাপ বাংলা চলচ্চিত্রে একজনই বলতে পারেন। কে তিনি? লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে জটায়ু। তার সবুজ অ্যাম্বাস্যাটার গাড়ি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, জং ধরবে না এমন কুকরি আর বিখ্যাত বুমেরাঙের হদিস সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা ভক্তরা ভালোই জানেন। কলকাতার রাস্তা থেকে অকালেই বিদায় নিয়েছে অ্যাম্বাস্যাটার। ঠিক যেমন অকালে বিদায় নিয়েছেন জটায়ূর ভূমিকায় অভিনয় করা সন্তোষ দত্ত। 

এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন ‘ফেলুদা অন্য কেউ হতে পারে, কিন্তু জটায়ু নয়। ’ মহান চলচ্চিত্র পরিচালকের কথা মিলে গেছে অক্ষরে অক্ষরে।

এই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রবি ঘোষ, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রশ্নাতীত শক্তিশালী অভিনেতারা। কিন্তু আজও লালমোহন বাবুর কথা উঠলে ঢাকায় জন্ম নেওয়া সাবলীল অভিনেতা সন্তোষ দত্তর ছবিটাই ভেসে আসে।

সন্তোষ দত্ত প্রয়াত হওয়ার পর ফেলুদাকে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার প্রয়াণের ২৪ বছর পরও সমস্যা ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। নতুন ফেলুদা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে মেনে নিয়েছে দর্শক, কিন্তু জটায়ু! না সেই চরিত্রের জন্য যুতসই অভিনেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই একই কথা জানালেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায়।

ফেলুদার ৫০ বছর উপলক্ষে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ডবল ফেলুদা’ দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে, যদিও সেই ছবিতে জটায়ু ছিলেন না। বাংলানিউজের সঙ্গে আড্ডায় জটায়ুকে খোঁজ করার কথা জানালেন পরিচালক সন্দীপ রায়।

বাংলানিউজ: ফেলুদার চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে দর্শক আবার সাদরে গ্রহণ করেছেন। তাহলে কি তিনিই আপনার নিয়মিত ফেলুদা?
সন্দীপ রায়:
সেটা এই মুহূর্তে কি করে বলবো! তবে পরের ছবিতেও যেন সে থাকে সেটা আমিও চাই। বেণুর (সব্যসাচীর ডাকনাম) সঙ্গে অদ্ভুত একটা রসায়ন আছে আমার। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এবারও খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। আর বেণু তো ফেলুদা হিসেবে সফল।

বাংলানিউজ: সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজেই তো ফেলুদা চরিত্রে আর কাজ করবেন না বলেছিলেন। কিন্তু শুনেছি একপ্রকার জোর করেই আপনি তাকে ফিরিয়ে এনেছেন?
সন্দীপ:
সত্যিই বেণু রাজি হচ্ছিলো না। জোরপূর্বক রাজি করালাম। কারণ ‘সমাদ্দারের চাবি’ ও ‘গোলকধাম রহস্য’— দুটো গল্পতেই আমার একজন পরিণত ফেলুদার প্রয়োজন ছিলো। এ ধরণের গল্প নিয়ে আগে ছবি করিনি। বিশেষ করে ‘গোলকধাম রহস্য’র মধ্যে অদ্ভুত একটা গাম্ভীর্য রয়েছে। তাই  বেণুকেই খুব যথাযথ মনে হয়েছিলো আমার।

বাংলানিউজ: ফেলুদা থাকাকালীনই আবির চট্টোপাধ্যায় ব্যোমকেশ চরিত্রে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। আপনি তারপর ফেরালেন সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। আবির দুটো গোয়েন্দা চরিত্র করলে কি খুব অসুবিধা হতো?
সন্দীপ:
এখন তো ফেলুদা ও ব্যোমকেশ একই অভিনেতা করছেন না, ফলে সেদিক থেকে আমাদের কোনো চাপ নেই। আর দেখুন, ফেলুদা চরিত্রে আবির আর ফিরবে না। কারণ ব্যোমকেশ নিয়ে সে এখন ব্যস্ত। ফলে এটাই ঠিক আছে। কারণ একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস যে হয়, সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না। একই অভিনেতা যদি দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, বিশেষ করে গোয়েন্দার ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে তো সমস্যা হবেই।

বাংলানিউজ: জটায়ু নেই এমন গল্পের ভাঁড়ারে তো এবার টান পড়ছে। জটায়ুর খোঁজ  কি পাওয়া গেল?
সন্দীপ:
সঠিক কথা বলেছেন। জটায়ু ছাড়া গল্প সত্যিই কমে যাচ্ছে। তবে আমি বসে নেই। জটায়ু খোঁজার কাজও শুরু হয়েছে। প্রচুর ছবি আসছে। কিন্তু কোনোটাই তেমন মনোঃপুত হচ্ছে না। একই কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত। দেখা যাক কী হয়! অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

সন্দীপ রায়, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: পরের ছবিতে তাহলে আমরা জটায়ুকে পাবো?
সন্দীপ:
না, পরের ছবিতে নয়। এরপর ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’ নিয়ে ছবি করবো ভাবছিলাম। বাবা (সত্যজিৎ রায়) ‘সোনার কেল্লা’ লিখেছিলেন এই গল্পের পর। ‘সোনার কেল্লা’ গল্পেই প্রথম জটায়ুর আবির্ভাব ঘটে। গ্যাংটকে গণ্ডগোল গল্পে জটায়ু নেই। কিন্তু সেখানে আবার তরুণ ফেলুদাকে দরকার। কারণ ফেলুকে সেখানে অ্যাকশন ও ছোটাছুটি করতে হবে। তাছাড়া সিকিমের ডকুমেন্টারির সময় বাবা যে গ্যাংটককে দেখে এই গল্পটা লিখেছিলেন সেই শহরের সঙ্গে আজকের গ্যাংটকের কোনো মিলই নেই। অনেক পাল্টে গেছে। রুমটেক মনেস্ট্রি নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু বাকি সব বদলেছে। তাই এখন আমাদের আর একটু এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলানিউজ: এগিয়ে যাওয়া মানে?
সন্দীপ:
একটু পরের দিকের ফেলুদা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ আমার খুব পছন্দের গল্প। কিন্তু সেখানেও জটায়ু। ফলে আমাদের এখন মুখ্য ও প্রধান কাজ হচ্ছে জটায়ুকে খুঁজে বের করা।

বাংলানিউজ: এবার তো ফেলুদার ৫০ বছর। স্পেশাল কিছু হচ্ছে? সন্দেশ (সত্যজিৎ রায় এই পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেছিলেন) -এর খবর কী?
সন্দীপ:
ফেলুদার ৩০ বছরের সময়ও একটা বিরাট ব্যাপার করেছিলাম। সন্দেশের তিনটে সংখ্যা পরপর বেরিয়েছিলো। এখন ৫০। তাই নানা পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছি। সেজন্যই দুটো গল্প নিয়ে ‘ডাবল ফেলুদা’, বেণুকে ফিরিয়ে আনা। কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হবে সন্দেশের বিশেষ সোনার কেল্লা সংখ্যা।

বাংলানিউজ: ফেলুদার স্বত্ত্ব রায় পরিবার মানে আপনাদের পরিবারের হাতে। অন্য অনেক পরিচালকও ফেলুদা নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী। অনুমতি দেবেন?
সন্দীপ:
না, কারণ পুরোটাই হাতের বাইরে চলে যাবে। তবে অন্য ভাষার জন্য  করতেই পারেন। আমরাও তো হিন্দিতে ফেলুদা করেছি। খুব আনন্দ নিয়ে করেছিলাম। তবে সেটা অ্যাডভেঞ্চার ছবি হলেও ফেলুদা হয়নি। কারণ হিন্দিতে ফেলুদা করা খুবই মুশকিল। ‘উটেরা কি কাঁটা বেছে খায়’— এটাকে হিন্দিতে কীভাবে অনুবাদ করা হবে তা আমি জানি না। ফেলুদার ‘ফ্লেভারটা’ নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা আমি হিন্দি ছবি করতে গিয়ে বুঝেছি। তবে হিন্দিতে প্রদীপ সরকার ফেলুদা করবেন।

বাংলানিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি দ্রুত জটায়ুকে খুঁজে পাবেন।
সন্দীপ:
অনেক ধন্যবাদ, সকলে ভালো থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
ভিএস/এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ