এ মুখোশ শিল্পও বহু যুগ ধরে চলে আসছে। ষোড়শ শতকে শঙ্কর দেব যখন সত্র চালু করেন তখন থেকেই এ মুখোশ শিল্পের জন্ম।
সত্র ও বিভিন্ন নামঘরে ভাওনা (যাত্রাপালার মতো, তবে তা ধর্মীয় সামাজিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে হয়) অনুষ্ঠিত হয়, তখন শিল্পীরা এসব মুখোশ পড়ে অভিনয় করেন। শুধু মুখোশই নয়, বাঘ, হাতি, হরিণের মতো বড় বড় প্রাণির পুতুল তৈরি করা হয় ভাওনার চরিত্রের প্রয়োজনে। এগুলোতে একাধিক শিল্পী ব্যবহার করে অভিনয় করে থাকেন। মাজুলীর চামগুরি সত্রে একমাত্র মুখোশ তৈরি করা হয়। এখানে সংগীত নাটক একাডেমির সহায়তায় চামগুরি সত্রে আগ্রহী ছেলে-মেয়েদের মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
চামগুরি সত্রে গিয়ে দেখা গেছে, আগ্রহী ছেলেরা মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেউ বাঁশ থেকে নমনিয় বেত তৈরি করছেন, আবার কেউ নিপুণ হাতে মুখোশের প্রকৃত চেহারা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত।
মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণরত অঙ্কুর বরুয়া নামে একজন বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় উপকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় মুখোশ। এখনো একই পদ্ধতি মেনে মুখোশ তৈরির কাজ হয়। প্রথমে বাঁশ-বেত দিয়ে মুখোশের কাঠামো তৈরি করা হয় তারপর ওপরে কুমার মাটি গুলিয়ে পানিতে ভেজানো প্রলেপ লাগানো হয়। এরপর গোবর দিয়ে মুখোশের চেহারার প্রাথমিক রূপ দেওয়া হয়, চতুর্থ স্তরে আবার মাটি ও কাপড়ের প্রলেপ লাগিয়ে মুখোশের প্রকৃত চেহারা দেওয়া হয়। সবশেষে রোদে শুকিয়ে রং করা হয়।
সমগ্র আসামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মুখোশ নাটক অভিনয় হয়, সেই সকল স্থানে এখান থেকে মুখোশ সরবরাহ করা হয়।
আগে মূলত মুখা ভাওনা নাটকের জন্য মুখোশ তৈরি হতো কিন্তু এখন নাটকের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের মিউজিয়ামে রাখার জন্য ও মাজুলীতে আসা পর্যটকরা স্মৃতি স্মারক হিসেবে মুখোশ কিনে নিচ্ছেন। মাজুলীর তৈরি মুখোশ ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, জার্মানী, ইসরায়েল, চীন, জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিউজিয়ামসহ অভিজাত মানুষের বাড়ির ড্রয়িং রুমে শোভা পাচ্ছে এ মুখোশ।
সেখানে প্রশিক্ষণরত ছাত্ররা আরও জানালো মাজুলীর মুখোশ এ জন্য বিখ্যাত কারণ প্রথাগত পদ্ধতি বজায় রেখে দিন দিন মুখোশের উন্নতি ঘটানো হচ্ছে যেমন মুখোশের চোখের পাতার নড়াচড়া, মুখ খোলা ও বন্ধ করা। এ সকল কারণে মুখোশ নাটক আরো জীবন্ত হয়ে উঠে। নাটক দেখে মানুষ বেশি আনন্দ পায়। তাই মুখোশের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুখোশ তৈরির প্রচলন রয়েছে ও মুখোশ নৃত্যসহ মুখোশ অভিনয়ের প্রচলন রয়েছে।
আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি ছেলে-মেয়ে মুখোশ তৈরির কাজে আগ্রহী। চামগুরি সত্রের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের বিভিন্ন সময় কর্মশালার আয়োজন করা হয় ও এখান থেকে বাছাই করে ছাত্রদের দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও জানানো হয়।
সত্রের যে ঘরে মুখোশ তৈরি হয় এ ঘরের ভেতর ছোট বড় বিভিন্ন আকারের তৈরি, অর্ধেক তৈরি মুখোশ ও মুখোশ তৈরির সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসা মানুষ নিজেদের পছন্দ মত মুখোশ কিনে নিচ্ছেন মাজুলীর স্মারক হিসেবে। কেউবা আবার মুখোশের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এসসিএন/এএটি/বিএস
**মাজুলীর আদিবাসী জনজাতির স্বকীয়তা