ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

আ’লীগে বিভেদের দেয়াল দিনাজপুর-৬ আসনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
আ’লীগে বিভেদের দেয়াল দিনাজপুর-৬ আসনে এমপি শিবলী সাদিকের বিরোধী আতাউর রহমান। ছবি: হুসাইন আজাদ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে: বিদ্রোহী প্রার্থীর স্বত্যন্ত্র নির্বাচনের জেরে ১৯৯১ আর ২০০১ সালে জামায়াতের কাছে দিনাজপুর-৬ আসন খোয়ায় আওয়ামী লীগ।  ‍আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও এ আসনে বিভক্তি ঠেকিয়ে দলীয় ঐক্য ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে ৪ থানা (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর) নিয়ে গঠিত একমাত্র সংসদীয় আসন দিনাজপু-৬ এ একপক্ষ বলছে, বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের বিকল্প তেমন দেখা যাচ্ছে না। আরেকপক্ষ বলছে, দলের সভাপতিসহ হাইকমান্ড যে জনসম্পৃক্ত প্রতিনিধি চাইছেন, তেমন প্রার্থী শিবলী সাদিক নন।

একপক্ষ বলছে, শিবলী গতবার উতরে গেলেও এবার তাকে মনোনয়ন দিলে আসন হারাতে হবে আওয়ামী লীগকে। আরেকপক্ষ বলছে, শিবলী ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থিতায় আনলে হারতে হবে নৌকাকে। সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাদের আলোচনায় টানা হচ্ছে, তারা কেউই শিবলীর বিকল্প নন।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তাতে দিনাজপুর-৬ আসন ঘিরে এমনই মতবিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের দু’টি পক্ষের মধ্যে বিভেদের দেয়াল দেখা যাচ্ছে আরও স্পষ্টভাবে। এই বিভেদের অবসান না হলে সংসদ নির্বাচনে আসন খোয়ানোর পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে বলে মনে করছেন এ আসনের রাজনীতি-সচেতন নাগরিকরা।
 
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও প্রায় দেড়বছর বাকি থাকলেও এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ড থেকে সাফ সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জনসম্পৃক্ততা না থাকলে বা স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে কেউ এবার মনোনয়ন পাবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই আলাপ ওঠার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছেন দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
 
আসনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে বোঝা গেল, এবার সহজে মনোনয়ন দৌড়ে পার পাচ্ছেন না বর্তমান সংসদ সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিক। আবার এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও সহজে মাঠ দখল করতে দেবেন না শিবলীর অনুসারীরা। যদিও শিবলীকে ‘প্রতিযোগিতাহীন বাজারের একমাত্র পছন্দ’ বলে উল্লেখ করেছেন তারই অনুসারীদের কেউ কেউ। তবে বর্তমান এমপিকে ‘জালেম’ ও ‘মীর জাফর’ হিসেবেই দেখছেন তার বিরোধী পক্ষের লোকজন।
 
শিবলীর বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি পদে জেতার পর থেকে তার কর্মকাণ্ড দল ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গেছে। তিনি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রতীকধারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করেছেন। জিতিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের। এমপি শিবলী সাদিকের পক্ষের ছাত্রলীগ নেতা তারিকুল সরকার।  ছবি: হুসাইন আজাদ
 
নিজ দলের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনুসারীদের লেলিয়ে দিয়ে ভাঙচুর, জমি দখল, মারধর, নিয়োগ-বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়মসহ আরও নানা অভিযোগ রয়েছে শিবলীর বিরুদ্ধে।
 
আবার তার অনুসারীদের দাবি, শিবলী জনসম্পৃক্ততার জোরেই এমপি হয়েছেন। পুরো আসনের ৪ উপজেলায় তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি প্রয়াত এমপি পিতা মোস্তাফিজুর ফিজুর যোগ্য উত্তরসূরী। ভাওয়াইয়া শিল্পী ও সংগীত পরিচালক ফিজু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সমধিক জনপ্রিয় ছিলেন নিজের এলাকায়। তার বড় ভাই ও শিবলীর জ্যাঠা বাঁশির জাদুকর দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী প্রতিষ্ঠা করে পারিবারিক পরিচিতিতে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।   এলাকায় তাই নিজেদের কিছু ভোট ব্যাংকও রয়েছে তাদের। উপরন্তু এরইমধ্যে নিজেকে জনপ্রিয় গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা শিবলী জনকল্যাণে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করেন বলেও নজির রয়েছে। মাঠে সবসময় সক্রিয় শিবলী এই আসনে তরুণদের গ্রহণযোগ্য প্রতিনিধি।   এ আসনের আর কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীরই তার মতো সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ভিত নেই।
 
কথা হচ্ছিল বিরামপুরের নবাবগঞ্জ রোডের সুধীর মোড়ে আবদুল হালিম ও জামশেদ মিয়া নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। আবদুল হালিমের কথা, এই আসনে আওয়ামী লীগের হাইপ্রোফাইল কোনো প্রার্থী না থাকায় শিবলীই হাইকমান্ডে যোগাযোগ রেখে দাঁড়িয়ে আছেন।

যিনি এর আগেরবারের এমপি (২০০৮ এর নির্বাচন) ছিলেন, সেই আজিজুল হক চৌধুরী, জনযোগাযোগ না রাখার ফলে ২০১৩ সালের নির্বাচনে আসতে পারেননি।   এবার নাকি তিনি আবার নামছেন। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ফুটবল মার্কায় নির্বাচন করে এ আসনে জামায়াত প্রার্থীকে জেতাতে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

তবে বেশি শোনা যাচ্ছে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের কথা। হালিমের এ কথায় সহমত জামশেদ মিয়ারও। তার মত এমনও যে, মনোনয়ন নিয়ে লড়াইয়ে নামার আগে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের বিরোধপূর্ণ অবস্থানের অবসান ঘটানো উচিত।
 
দিনাজপুর-৬ আসনে সবচেয়ে বৈরী অবস্থান শিবলী সাদিক ও আতাউর রহমান গ্রুপের মধ্যে। শিবলী বলয়ের বলে পরিচিত হাকিমপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-উর রশীদ হারুন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি তারিকুল সরকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আগামী নির্বাচনেও একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান এমপিকেই দেখছেন। তারা মনে করেন, আজিজুল হক চৌধুরী বা আতাউর রহমানকে ঘিরে যে কথা হচ্ছে, তা শেষ পর্যন্ত টিকবে না।
 
কিন্তু আতাউর রহমানের অনুসারী বলে পরিচিত শিবলীর জন্মস্থান নবাবগঞ্জের বাসিন্দা জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ফয়সাল হোসেন ও উপজেলা আ’লীগের সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বর্তমান এমপিকে জনতা ‘জালেম’-‘মীরজাফর’ হিসেবেই চেনে বলে উল্লেখ করলেন। তাদের দাবি, বিএনপি-জামায়াতকে পাশে বসিয়ে রাজনীতি করা শিবলীকে এবার মনোনয়ন দিলে কেন্দ্রের মস্ত ভুল হবে।
 
নবাবগঞ্জের ডাক বাংলা মার্কেটের সামনে ফয়সাল ও তৌহিদুলের সঙ্গে আলাপের পর কথা হচ্ছিল আতাউর রহমানেরই সঙ্গে। তার স্পষ্ট কথা, বহুদিন ধরে রাজনীতি করছেন, ৪ বার সংসদ নির্বাচন করেছেন, এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।
 
শিবলী বিভাজন তৈরি করে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে পর্যদুস্ত করে দিচ্ছেন। এই বিভেদের দেয়াল ভাঙতেই তার নির্বাচন জরুরি বলে মনে করেন সভাপতি শিবলীর সাধারণ সম্পাদক আতাউর।

এ ‍আসনে নৌকার টিকিট পেতে আরো দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাসুদ খান এবং বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাসা আলী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এইচএ/জেডএম

**‘পারিবারিক রাজনীতিতে’ হতাশ তৃণমূল বিএনপি

** ‘ভোটে’ ‘বিশ্বাস’ নেই চাঁপাইবাসীর

**আসন চাইলে অদুদ, আ’লীগ বাঁচাতে দরকার বিকল্প

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।