ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

মৌলভীবাজার-২: জনপ্রিয়তা, পরম্পরা নাকি ক্ষমতা?

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
মৌলভীবাজার-২: জনপ্রিয়তা, পরম্পরা নাকি ক্ষমতা? মৌলভীবাজার-২ আসনের ভোটার।

কুলাউড়া থেকে: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে মৌলভীবাজার-২ হলো ২৩৬নং আসন। এটি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা (১৪টি ইউনিয়ন) এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর, আলীনগর ও সমসেরনগর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার ১শ ৯৫ জনের মধ্যে ভোটার দুই লাখ ২০ হাজার ১শ ১৪ জন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন।

তার সম্পর্কে বিভিন্ন ইউনিয়নের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত, তিনি ‘বিনা ভোট’র এমপি। লটারি পাওয়ার মতো নির্বাচনে জিতেছেন। নইলে তার এমপি হওয়ার কথা নয়।

যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৫৬ হাজার ১শ ১২ ভোটের মধ্যে ৩০ হাজার ৮শ ৮১ (৫৫ শতাংশ) ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (এ) মুহিবুল কাদির চৌধুরী পান ২৫ হাজার ২শ ৪১ (৪৫ শতাংশ) ভোট।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মুহিবুলের বিজয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত, তখন সবাইকে বিস্মিত করে জয়ী হন মতিন। কীভাবে হন, এ নিয়েও জনমুখে গল্প প্রচলিত রয়েছে— সেটিসহ সংসদ সদস্য হিসেবে গত সাড়ে তিন বছরে সাধারণ মানুষের ভাষ্যে তার মূল্যায়ন পরের পর্বে। এ পর্বে সংক্ষেপে পেছনের প্রেক্ষাপট জেনে নিয়ে কথা এগুবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পালবদলের নিকট ভবিষ্যৎ থেকে অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে। পৃথিমপাশা নবাব বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজএর মধ্যেই ২০১৪ সালে গঠিত সরকার পার করেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। মাত্র দেড় বছরের মাথায় পরবর্তী নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে-বাইরে কম-বেশি নির্বাচনী কাজ শুরু করে দিয়েছে। করারই কথা। কিন্তু কী ভাবছেন সাধারণ মানুষ তথা ভোটাররা? বর্তমান এমপি’র অবস্থান কী বা সামনের নির্বাচনে কাকে দেখতে চান!

বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজন ‘মাঠে ঘাটে ভোটের কথা’র অংশ হিসেবে কথা হয় মৌলভীবাজার-২ আসনের প্রায় সবগুলো ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছেন- অটোরিকশা-রিকশাচালক, মুটে, মজুর, শ্রমিক, বাসচালক, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শেণী-পেশার মানুষ।

ঘুরে-ফিরে জনপ্রিয়তার নিরিখে একটি নামই বারবার উঠে এলো, নবাব আলী আব্বাস খান। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এমপি হন। ২০১৪ সালে ভোটে দাঁড়াননি। জানা যায়, না দাঁড়ানোর কারণ ব্যক্তিগত।

তার আরও একটি পরিচয়, তিনি কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত নবাব পরিবারের তার প্রজন্মের বড় ছেলে। পারিবারিক ঐতিহ্য ও সুনামের জায়গা থেকে নিজ এলাকা ছাড়াও গোটা কুলাউড়াতে তাকে সবাই সম্মান করে। বামদিক থেকে নবাব আলী আব্বাস ও আব্দুল মতিনতার সম্পর্কে নিজাম উদ্দিন নামে এক রিকশাচালক বলেন, খুব ভালো মানুষ। সবার বিপদে তাকে পাওয়া যায়। তার কাছে সাহায্য চাইতে গেলে কাউকে ফেরান না। শ্রমিক, কৃষক, ভ্যানচালক যেই হোক, সবার সঙ্গে মেশেন। এতো বড় পরিবারের ছেলে হয়েও অহংকার নেই। ১০ বছরের ছেলেও যদি তাকে ডাক দেন, তাহলেও তিনি দাঁড়াবেন এবং তার সঙ্গে কথা বলবেন।

প্রসঙ্গক্রমে বলে নেওয়া ভালো, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন কুলাউড়ার রাজনীতিতে ভীষণ গুরুত্ব বহন করে। এর মূল কারণ, এখানকার নবাব পরিবার। বলা হয়ে থাকে, কুলাউড়ার যেকোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নবাব পরিবারের প্রভাব ও ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

নবাব পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক শুভাকাঙ্ক্ষি জানান, আসন্ন নির্বাচনে নবাব আলী আব্বাসের চাচাত ভাই নবাব আলী ওয়াজিদ খান বাবু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভোটে দাঁড়াতে পারেন। বর্তমানে তিনি কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

তার সম্পর্কে স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, বাবু সাহেবই সবচেয়ে বেশি নবাব পরিবারের ঐতিহ্য ও পরম্পরা ধরে রেখেছেন। ঠাট-বাট চালচলনে নবাবী আদবকেতা এখনও ধরে রেখেছেন। ব্যক্তিত্ব আলী আব্বাস সাহেবের প্রায় উল্টো, একটু মেজাজি তবে তার জনপ্রিয়তাও কম নয়। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে পরেরবার এমপিও হয়ে যেতে পারেন। তাদের বাপ-দাদারা আগে কুলাউড়ার নবাব ছিলেন, তিনি এমপি হলে সেই পরম্পরাই বজায় থাকবে।

এই পরিবারের অন্য ভাইয়েরাও পারিবারিকসূত্রে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। যেমন, নবাব আলী বাকর খান হাসনাইন পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং নবাব আলী সাজ্জাদ খান পৃথিমপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক।

এর বাইরে কুলাউড়াবাসীর মতে, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন সুলতান মনসুর। তার নাকি কেন্দ্রের লবিং ভালো। এছাড়া শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে হাজির হতে পারেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম।
 
অন্যদিকে, বিএনপি থেকে বরাবরের মতো মনোনয়ন পেতে পারেন আবেদ রেজা। দু-তিনবার পেয়েও শিকে ছেঁড়েনি তার। তবে নিরপেক্ষভাবে, এ বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা খুব কম বলে মত সাধারণ মানুষের।

বাকি থাকেন বর্তমান এমপি আব্দুল মতিন। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে আশা করাই যায়, তিনি পরবর্তী নির্বাচনেও দাঁড়াবেন।

তার ক্ষেত্রেও অসংখ্য মানুষের মত, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার জয়ের আশা কম। কারণ, এই আসনে বলার মতো উন্নয়নের ছাপ তিনি রাখতে পারেননি।  

শিরোনামের ত্রিমুখী সমীকরণে জনপ্রিয়তায় নবাব আলী আব্বাস, পরম্পরার জায়গা থেকে নবাব আলী ওয়ালিদ এবং ক্ষমতার জায়গা থেকে আব্দুল মতিন, কামরুল ইসলাম কিংবা সুলতান মনসুর— কার কপালে জুটবে এই আসনের প্রতিনিধিত্ব?

মৌলভীবাজর-২ এর আপামর জনগণ অবশ্য প্রথম দু’জনকেই এগিয়ে রাখছেন!

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।