ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

মৌলভীবাজার-২: অনেক অভিযোগ এমপি মতিনের বিরুদ্ধে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
মৌলভীবাজার-২: অনেক অভিযোগ এমপি মতিনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার-২ আসনের ভোটার / ছবি: শুভ্রনীল সাগর

কুলাউড়া থেকে: নিজ এলাকা ছাড়া রাস্তা নির্মাণ করেন না। কিংবা করলেও তার নিজের দল বা পছন্দের কারও এলাকায়। একই অবস্থা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও। এগুলোসহ অনেক অভিযোগ মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে।

তার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা (১৪টি ইউনিয়ন) এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর, আলীনগর ও সমসেরনগর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। নিজের ইউনিয়ন জয়চন্ডীর রাস্তাগুলো ঝকঝকে-তকতকে।

কিন্তু অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে এর ছিটেফোঁটা নেই বলেই দাবি সাধারণ মানুষের।

কথাপ্রসঙ্গে দূরের একটি রাস্তা দেখিয়ে কাদিপুর ইউনিয়নের টমটমচালক রিপন দাস বলেন, ওই দেখেন রাস্তার কাজ চলছে। কুলাউড়া সদরের প্রধান সড়কের বেহাল দশাকিন্তু নিয়ারমহল গ্রামের পেকুরবাজারের পশ্চিম পাশের রাস্তাটির কাজ আগে হওয়া দরকার। এ রাস্তার এতো খারাপ অবস্থা যে, পায়ে হাঁটতেও কষ্ট হয়।

‘নিজ ইউনিয়নের বাইরে রাস্তার কাজ করেন না’ অভিযোগটি একদম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ভূকশিমইল ইউনিয়নের রমজান আলী। এমপি’র ইউনিয়নের ঠিক পাশেই ভূকশিমইল।

অক্ষেপ করে বললেন, জয়চন্ডীর সীমানা যেখান থেকে শেষ হয়েছে এরপর থেকে আর রাস্তা করেননি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পিচ উঠে গর্ত গর্ত হয়ে গেছে। চলাফেরা করা খুব কষ্ট। আগের এমপি’র আমলে এই রাস্তা হয়েছিল, এরপর বর্তমান এমপি কোনো কাজ করেননি।

তার নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন ইউনিয়নের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেও একইরকম অভিযোগ পাওয়া গেলো। কুলাউড়া-জুড়ী সড়কজুড়ে পুডিংখোদ কুলাউড়া সদরের প্রধান সড়কটিরও বেহাল দশা। সড়কের অধিকাংশ জায়গায় নানা আকারের গর্ত। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে সেসব জায়গায় পুড়িংয়ের কালো কালো ছোপ। তাও সওজ’র পক্ষ থেকে কদিন পর পর পুড়িং লাগানো হয়।

সমসেরনগর থেকে কুলাউড়া অব্দি সদ্য হওয়া ঝা চকচকে রাস্তাটি দেখে মনে হয়েছিল, এটি বোধহয় এমপি’র করা। পরে জানা গেলো, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও সওজ’র একটি প্রকল্প। সড়ক ও জনপদ নির্মাণে মতিনের অবদান খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। কুলাউড়া-জুড়ী সড়কজুড়ের গর্তের নমুনাবিদ্যুতের ক্ষেত্রেও রয়েছে সাধারণ মানুষের বিস্তর অভিযোগ। বিদ্যুৎ নিয়ে কথা হচ্ছে শুনে অনেকেই নিজ আগ্রহে বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।

হামিদ নামে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কোথাও বিদ্যুৎ চালু করতে হলে তার অনুমতি এবং তাকে নিয়ে বিদ্যুৎ চালু করতে হয়। অর্থাৎ ৫টি মিটারের কানেকশন থাকলেও তিনি না গিয়ে চালুর অনুমতি দেন না। এর ফলে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।

তাছাড়া দিনের পর দিন তিনি ঢাকায় থাকেন, এলাকায় তাকে পাওয়া যায় না। তিনি ফোনও ধরেন না। স্বতন্ত্রভাবে এমপি নির্বাচিত হলেও দলের লোকজন ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না। দলীয় লোকের কথায় চলে বিভিন্ন বণ্টন, যোগ করেন তিনি।

এমপি মতিনের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ঘেঁটে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই মতিন জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যেহেতু তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তাই এলাকার লোকজন তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। তিনি এরশাদ আমলে একবার এবং পরে আওয়ামী লীগ আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন।   

২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি হঠাৎ করে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হন। যদিও প্রথম থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির অপরিচিত প্রার্থী থাকায় এবং অন্য কোনো পরিচিত মুখ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তিনি জয়ী হন বলে মত সাধারণ মানুষের।

জনমুখে প্রচলিত, তার জয়ী হওয়াটাও ছিলো বিতর্কিত। অপরিচিত মুখ হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পার্টির (এ) মুহিবুল কাদির চৌধুরী বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলে এগিয়ে ছিলেন। সবাই প্রায় নিশ্চিত ছিলো, এ আসনে সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন মুহিবুল।

এরপর তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হয়। সবাইকে বিস্মিত করে জয়ী হন মতিন। ৫৬ হাজার ১শ’ ১২ ভোটের মধ্যে ৩০ হাজার ৮শ’ ৮১ (৫৫ শতাংশ) ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন তিনি। মুহিবুল পান ২৫ হাজার ২শ’ ৪১ (৪৫ শতাংশ) ভোট। সহজে বিদ্যুৎ পায় না সাধারণ মানুষঅনেকেই ধারণা করেন, ওই তিনটি কেন্দ্রের ফল বাতিল না হলে এমপি হতেন মুহিবুলই।

গুগালিছড়া নামে একটি নদী খননের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এর অর্ধেক টাকারও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেন না বলে জানান একজন সিনিয়র সাংবাদিক।

জাবেদ হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, না চাইতে কিছু পেয়ে গেলে তার কদর থাকে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণের সঙ্গে থাকতেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এসএনএস/জেডএম

**মৌলভীবাজার-২: জনপ্রিয়তা, পরম্পরা নাকি ক্ষমতা?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।