ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

নওগাঁ-২: আতাঁত-বিবাদে ঘাঁটিতেই তিন ভাগ বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৭
 নওগাঁ-২: আতাঁত-বিবাদে ঘাঁটিতেই তিন ভাগ বিএনপি শামসুজ্জোহা খান, ৩ সময়ে।

পত্নীতলা (নওগাঁ) থেকে: কোন্দলে জর্জরিত নওগাঁ-২ আসনের বিএনপি।এক সময়কার বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা ধামুইর হাট ও পত্নীতলা নিয়ে গঠিত এ আসন। দুই উপজেলাতেই এখন দলটির সব কার্যক্রম ও কর্মসূচি পরিচালিত হয় তিনটি ব্যানারে।

দলীয় এই গৃহ বিবাদের ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির অনেক সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীই এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ভর করেছেন। আবার অনেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।

এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানকেই স্থানীয়রা দায়ী করছেন গৃহ-বিবাদের মূল হোতা হিসেবে। তাদের অভিযোগ, শামসুজ্জোহা খানের বিতর্কিত ও অতি রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের খায়েসেই ধানের শীষের জয় থেমেছে এ আসনে। যদিও এ আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জন সমর্থন প্রায় সমান সমান। তাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে ক্ষমতাসীনদের।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামসুজ্জোহা খান। স্বল্প সময়ের এ সংসদের পর সে বছরের ১২ জুনের পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সাত হাজার ভোটে পরাজিত করে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বর্তমান হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের কাছে পরাজিত হন ২৬ হাজার ভোটে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন ৪৯ হাজার ভোটে।

তৃণমূলের অভিযোগ, সাবেক এই সংসদ সদস্য ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়েই সে সময়কার ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাতে চলে যান। এরপর তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও মামলা-হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এ নিয়েই দলে প্রথম মতবিরোধ তৈরি হয় নওগাঁ জেলা সহ-সভাপতি নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে। এরপরই দু’জন পত্নীতলা এবং ধামুইর হাটে আলাদাভাবে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সেই বিবাদ বিদ্যমানই আছে। যোগ হয়েছে আরো একটি গ্রুপ। এর নেতৃত্বে আছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মতে, এক সময় পত্নীতলা ও ধামুইর হাট উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানই ছিল বিএনপির। এরাই ছিল বিএনপির তৃণমূলের শক্তি। এমন কি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে এ আসন হারানোর পরও এইসব চেয়ারম্যান বিএনপিকে সব ধরনের শক্তি যুগিয়েছেন। কিন্তু শামসুজ্জোহা খানের ভুল সিদ্ধান্তের পর মাসুদ করিম সরকার, আনিসুর রহমান, হাবিবুর রহমান মিঠু, আতোয়ার রহমান, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, এম রকিবউদ্দীনের মতো দল অন্তপ্রাণ তৃণমূল নেতারা দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। শামসুজ্জোহা খানের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়।

ধামুইর হাট বাজারের ব্যবসায়ী ও তৃণমূল বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মতে, বর্তমানে এ আসনে বিএনপির সংগঠন বলতে কিছু নেই। নেই দলীয় কোন কর্মসূচি বা কার্যক্রমও। তবে প্রকটভাবে আছে দলীয় কোন্দল। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জিয়াউর রহমানের জন্মদিন বা মৃত্যু দিবসও এখন পালিত হয় তিনটি আলাদা আলাদা ব্যানারে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে দলের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমেনি।

স্কুল শিক্ষক ও বিএনপি সমর্থক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন এটা সত্য। কিন্তু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ, উন্নয়নমূলক কাজের ভাগ-বাটোয়ারার নামে সরকারি তহবিলের লুটপাট, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আদায়, পুলিশের চাকরি থেকে শুরু করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য, সালিশের নামে টাকা আদায়ের মতো ঘটনায় আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতায় এবং ভুল নেতৃত্বের কারণে জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নিতে পারছে না বিএনপি।

তবে ঘটনা যাই হোক, নওগাঁ-২ এর এই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে এরইমধ্যে নির্বাচনী আমেজ আসতে শুরু করেছে তা জানালেন নজিপুর চৌরাস্তার মোড়ের চা দোকানদার শওকত হোসেনও।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখনই দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে নামছেন সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহা খান ও তার স্ত্রী সামিনা ইয়াসমিন পলি, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন। সাবেক এমপি শামসুজ্জোহা খান অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রী সামিনা ইয়াসমিন পলিরও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৭
আরএম/জেডএম

** নওগাঁ-২: জুলুমে চাপা পড়েছে উন্নয়ন
** নওগাঁ-৪: এক মার্ডারেই তছনছ বিএনপি
** নওগাঁ-৪: ইমাজ প্রামাণিকেই নড়বড়ে আওয়ামী লীগ
** নওগাঁ-৪: ইমাজের ইমেজ নষ্ট পাঁচ পাণ্ডবে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।