ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

নীলফামারী-১: জন বিচ্ছিন্ন আফতাব উদ্দিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
নীলফামারী-১: জন বিচ্ছিন্ন আফতাব উদ্দিন নীলফামারী-২ আসনের রাস্তা। ছবি: শাহেদ ইরশাদ

ডোমার-ডিমলা (নীলফামারী) থেকে: নীলফামারী জেলার ডোমার এবং ডিমলা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-১ আসন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাফর ইকবাল সিদ্দিকীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আফতাব উদ্দিন সরকার।

তবে নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পার হলেও আফতাব উদ্দিন সরকার এলাকার উন্নয়নে বিশেষ কোন অবদান রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি অধিকাংশ সময় থাকেন ঢাকায়।

১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৫ আগস্ট ছাড়া তার দেখা পায় না জনগণ।

নির্বাচিত হয়ে এলাকায় কি উন্নয়ন করেছেন আফতাব উদ্দিন সরকার- জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সময় একবার এসেছিলেন আফতাব মিয়া। তারপরে আমাদের সঙ্গে আর দেখা হয় নাই। এখনও শুনি আসেন, তবে কোন সময় তা জানি না। ডোমার-ডিমলার উন্নয়নে তার কোন অবদান নেই।

কারণ রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা, ভিজিডি, ভিজিএফ এগুলো যেই এমপি হোক এমনিতেই আসে। সরকারের নিয়মিত উন্নয়নের অংশ হিসেবে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বাররা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন।

কাজেই আফতাব উদ্দিন সরকার কিন্তু ডোমার-ডিমলায় কোন বিশেষ উন্নয়ন দেখাতে পারেননি। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী। তার কোন কিছুর অভাব নাই। এলাকায় বহু শিক্ষিত বেকার আছে। নিজের টাকায় করতে না চাইলে সরকারি টাকায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কলকারখানা করে এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি।

এ কারণে আফতাব উদ্দিন সরকারের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না তারা।

ডোমার পৌর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গা ভাঙাচোরা, সেখানে পানি জমে আছে, কার্পেটিং উঠে গেছে। একই অবস্থা ডিমলাতেও। সেখানে বিশেষ কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে অভিযোগ ডিমলাবাসীর।

ডিমলায় আফতাব উদ্দিন সরকারের বাড়ি। ডিমলা উপজেলার একটি পান আড়তে কথা হয় ষাটোর্দ্ধ হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে। নীলফামারী-২ আসনের রাস্তা।  ছবি: শাহেদ ইরশাদ

তিনি বলেন, আফতাব উদ্দিন সরকার এমপি হয়েছেন মানে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় গুপ্তধন পেয়েছেন। এলাকায় না থাকায় তার কোন প্রতিনিধিও খুঁজে পাবেন না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ। তিনি কিছু নেতাকর্মী বানিয়েছিলেন। তারা এখনো আওয়ামী লীগ ছাড়া কিছু বুঝে না, তাই দলে আছেন।

মিজানুর রহমানের মত একই কথা বলেন ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুল। অকপটে স্বীকার করেন, নীলফামারী-১ আসনে বিশেষ কোন উন্নয়ন হয়নি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যখন ডোমারে এসেছিলেন, আমরা উপজেলা সদরে ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের আবেদন করেছিলাম। আজ পর্যন্ত কোন খবর নাই। এখানে হাসপাতালটি আছে, সেটি উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে। শহরবাসীর যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়।

এদিকে আফতাব উদ্দিন সরকার নির্বাচনী এলাকায় না আসায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল চায় সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন, এই আসনে ভালো প্রার্থী না দিলে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারবে না।  

ডোমার-ডিমলা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো। সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু মানুষ চায় এই এলাকায় একজন জনপ্রিয় প্রার্থী।

বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার যদি আবারও মনোনয়ন পান, আর জাতীয় পার্টি থেকে যদি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী নির্বাচন করেন সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জয়লাভ করা কঠিন হয়ে যাবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইনতু আলী বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে আছে। কিন্তু আগামী নির্বাচনে আফতাব উদ্দিন সরকার এবং জাফর ইকবাল সিদ্দিকী নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের জেতা সহজ হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।