ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ঠাকুরগাঁও-৩: দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এমপি ইয়াসিন

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
ঠাকুরগাঁও-৩: দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এমপি ইয়াসিন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা

পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে: নেকমরদ পার হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় প্রবেশ করাই দায় হয়ে পড়ে রাস্তা-ঘাটের বেহালদশায়। উপজেলা শহরের মূল সড়কই গর্ত, খানা-খন্দে ভরা। তাতে জমে আছে পানি। চলাচলে নানা সমস্যা-দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

উপজেলা-পৌরসভার রাস্তার এমন বেহালদশার পাশাপাশি অনেক ইউনিয়নের রাস্তা আরো খারাপ। কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয় বেশিরভাগ গ্রামের মানুষকে।

অনেক গ্রামে পৌঁছেনি বিদ্যুতের আলোও।

ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল) আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আওয়ামী লীগের সেলিনা জাহান লিটা। তবে দুই এমপি থাকার পরও এখানকার কোনো উন্নয়ন হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোর উন্নয়নে নির্বাচিত এমপি ও সংরক্ষিত এমপি- কারোরই নজর নেই। এর মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের আখের গোছাতে বেশি ব্যস্ত ইয়াসিন আলী।

তবে এ অনুন্নয়নের জন্য নির্বাচিত এমপি দায়ী বলে দাবি করেছেন সংরক্ষিত এমপি লিটা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চান এবং পেতে শতভাগ আশাবাদীও।

অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি এমপি ইয়াসিনের।

রানীশংকৈল-পীরগঞ্জের ভোটাররাও ক্ষমতাসীন দলের এমপি না থাকায় নিজেদের উন্নয়ন বঞ্চিত ও দুর্ভাগা বলে মনে করেন। তাই এবার জোট-মহাজোট নয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী চান তারা।

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এ আসনে দলটি বা তার জোটের প্রার্থীরা এমপির দায়িত্ব পালন করছেন। তবে জোটের কারণে ১৯৯৬ এর পর থেকে আওয়ামী লীগের এমপি পাননি সমর্থকরা। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন নির্বাচিত হন।

ভোটারদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের এমপি না হওয়ায় এলাকার রাজনীতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ইয়াসিন আলী। তবে এমপি হিসেবে যা বরাদ্দ পান, তা নিজের পকেটে ভরায় ব্যস্ত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে স্কুল-কলেজে শিক্ষক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলের নাইট গার্ডসহ বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যেও জড়িত। প্রতিটি নিয়োগে ৬ থেকে ১৫ লাখ টাকা লেন-দেন হয়।

এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে তিন হাজার মেট্রিকটন গম কিনতে তাদের মাঝে কার্ড বিতরণের কথা ছিলো। কিন্তু অনেক কৃষক এ খবর জানেনই না। তারা স্থানীয় বাজার ও ডিলারের কাছে সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মণ দরে গম বিক্রি করেছেন, যেখানে সাড়ে ১২শ’ টাকা দরে গম কিনেছে সরকার।

অভিযোগ আছে, এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ গম কেনা-বেচায় দুর্নীতি করায় গমের ন্যায্যমূল্য পাননি সাধারণ কৃষকরা। লেহেম্বা ইউনিয়নের কৃষক মহেন্দ্রনাথ বলেন, ‘মুই ১০০ মণ গম বিক্রি করছুঙ ডিলারের গোদ। কোনো কার্ডের খবর পাঙ নাই। ধানের সময়ও এমন হইছে। নেতা-খেতাই ওই কার্ড পাইছে, হামার গোরোদ আইসে না। শুনছুঙ, সরকার ১২০০ টাকা করি গম নিছে। হামার গ্রামোত কাহোই পায় নাই’।  ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এলাকার একটি দোকান রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের চিত্র রাস্তাগুলো ঘুরে দেখলেই বুঝবার পাইবেন। এমপির তো বেশি ক্ষমতা নাই, তাই যা পায়, তা নিজের পকেটেই ভরে। আসল কথা হইলো, ধান্দায় ব্যস্ত’।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিভূতি ভূষণ বলেন, ‘রানীশংকৈল বরাবরই অবহেলিত। এমপি কোনো কাজই করেননি। তার তো এমপি হওয়ার কোনো যোগ্যতাও নেই। সেলিনা জাহান লিটা একটু চেষ্টা করে যাচ্ছেন’।

সেলিনা জাহান লিটা বাংলানিউজকে বলেন, ‘উন্নয়নের বরাদ্দ নির্বাচিত এমপির হাত ধরেই আসে। তার কারণে এলাকার উন্নয়ন হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে রাস্তা-ঘাট ঠিক করার চেষ্টা করছি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছ থেকে কথাও নিয়েছি। রানীশংকৈলের মূল সড়কটির অবস্থা খারাপ, সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হবো এবং এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সঁপে দেবো। দলের অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাকেও নির্বাচিত করে আনবো। ঠাকুরগাঁও-৩ আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। এবার দলের বাইরে কাউকে চাই না’।

এমপি ইয়াসিন বলেন, ‘আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত না। স্কুল- কলেজগুলোর কমিটির নির্বাচনে খরচের জন্য সামান্য কিছু নেওয়া হয়’।  

গম কেনা-বেচার দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ২৬ হাজার কৃষক। আর কার্ড মাত্র ৩ হাজার। সমন্বয় করা সম্ভব নয়। যারা পাননি তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে’।    

ক্ষমতাসীন দলের বাইরের এমপি হয়েও উন্নয়নে বরাদ্দ পেতে কোনো সমস্যা হয়নি বলেও দাবি তার। তবে উন্নয়নের ঘাটতি আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাটে সমস্যা আছে, কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ ২০১৮ সালের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।