ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজশাহী জাপার কার্যালয়: খসছে পলেস্তারা, ঝুলছে মাকড়সা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
রাজশাহী জাপার কার্যালয়: খসছে পলেস্তারা, ঝুলছে মাকড়সা জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার ছেলের ছবিটিও পড়ে আছে অযত্নে। ছবি: জনি সাহা

রাজশাহী থেকে: রংচটা দ্বিতল ভবনটির ডানদিকের কোণায় বেড়ে ওঠা বটগাছটা এমনিতেই একটা আড়াল তৈরি করেছে। বাইরের দিকের ছেঁড়া সাইনবোর্ডটা খানিকটা গুরুত্বও কমিয়েছে। আর ওপর-নিচে ঈদ শুভেচ্ছার পুরনো ‘রঙিন’ বার্তা প্রশ্ন তোলে দেশের সংসদের বিরোধী দলের ভাবমূর্তি নিয়ে।

চিত্রটা রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরের। নগরীর গণকপাড়ায় অবস্থিত এ কার্যালয়ের ভেতরের চিত্র আরও করুণ।

এটা দৈন্যদশারই বহিঃপ্রকাশ কিনা সে রায়ের ভার অবশ্য বিশ্লেষকদেরই হাতে।
 
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর হালহকিকত জানতে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাপার মহানগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারা। তবে কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই দৃষ্টিগোচর হয় ভবনের ভেতরের অবস্থা।
 
পলেস্তার ওঠে যাওয়াই ভবনটির একমাত্র ‘খুঁত’ নয়, পুরো ভবনের দেয়ালে ঝুলছে মাকড়সার বাসা। অফিসের ভেতরের দিকে যে জায়গাটা খালি পড়ে রয়েছে, তা পুরোই ব্যবহার অনুপযোগী। দ্বিতল ভবনের নিচতলায় অফিস হলেও ময়লা-আর্বজনা জমে দ্বিতীয়তলা পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হতে পারে, বহুদিন বুঝি সেখানে কোনো জনমানুষের পা পড়েনি।  
সেই ঈদুল ফিতরের পুরনো শুভেচ্ছার পোস্টার ঝুলছে এখনও।  ছবি: জনি সাহাআবার নিচতলায় সভা-সেমিনার করার জন্য মাঝখানে যে খালি জায়গাটুকু ছিল, ছাদের পলেস্তারা খসে সে জায়গাটুকুও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।  
 
পাশেই খুপড়ির মতো কক্ষ দেখে ভেতরে প্রবেশ করলেও তাতে বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। তবে আধো আলোতে বোঝা গেলো, এখানে অবস্থানের মতো পরিবেশ নেই। আরেকটি কক্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে সভা আয়োজনের রেশ বোঝা যায় সেখানে ৫-৭টি চেয়ার এলোমেলো করে রাখা দেখে।
 
ওই কক্ষে একটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার ছেলের স্মৃতিবন্দি করা ছবি। কিন্তু এ ছবিটিও পড়ে আছে অযত্নে। পাশেই জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ পড়ে আছে ‘হাল ছাড়া’ অবস্থায়। যেন দেখার কেউ নেই।  
দলের প্রতীক লাঙল-পতাকা, সব পড়ে আছে অযত্নে (বাঁয়ে), ডানে খসছে পলেস্তার।  ছবি: জনি সাহাঅথচ মাত্র আড়াই মাস আগে মে মাসে দলীয় কাউন্সিলে এসে স্বয়ং এরশাদই ঘুরে গেছেন মহানগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ অফিস। নিজ চোখে দেখেছেন অফিসের করুণ দশা।
 
গত ২০ বছর ধরে এই অফিসের পিয়নের দায়িত্ব পালন করছেন আবুল কালাম আজাদ। অফিসের প্রতি তার মায়া বোঝা যায়। কিন্তু তার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, প্রথম থেকে এটি জাতীয় পার্টির অফিস হলে অবস্থা খুব নাজুক। দেয়াল ও ছাদ থকে পলেস্তার খুলে খুলে পড়ছে। হয়ে পড়ছে ব্যবহার অনুপযোগী।  
 
দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০ বছর ধরে কাজ করে যাওয়া আবুল কালাম এ সময় নিজের দুরাবস্থার কথাও অকপটে জানান।
 
কথা হয় অফিসে থাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ডালিমের সঙ্গে। সবকিছুর পেছনে কমিটি না থাকাই উঠে এলো তার কথায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ১১১ সদস্যের কমিটির একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে কেনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি নিয়ে সবার মধ্যে হতাশা কাজ করছে। ’ 
জাপা কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীরা।  ছবি: জনি সাহাএ সময় উপস্থিত অন্যরা বলেন, ‘দলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চুও ১১১ সদস্যের একটি কমিটি দিয়েছেন। যেখানে অনেকেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। আর তিনিওতো দেশে নেই। তাহলে কিভাবে চলবে?
 
তবে এ সময় শাহাবুদ্দিন বাচ্চুর পক্ষের কোনো নেতাকর্মীকে অফিসে পাওয়া যায়নি।
 
তাদের দাবি, নেতাকর্মীরা নিয়মিত কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কার্যালয় খোলা থাকে। আলোচনার শুরুতে দু’তিন জন থাকলেও কথা গড়াতেই মহানগর শাখার জনাদশেক নেতার সরব উপস্থিতি জানান দেয়, দেশের রাজনীতিতে আবার চাঙ্গা হতে চায় জাতীয় পার্টি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
জেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।