ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
 নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা! দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে এমপি দারা

রাজশাহী থেকে: নিজের নির্বাচনী এলাকার (রাজশাহী-৫, পুঠিয়া-দুর্গাপুর) মাঠে-ঘাটে প্রতিদিন ‘তুলোধুনো’ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ! দুদিন তার সংসদীয় আসনের দুই উপজেলায় ঘুরে তৃণমূলের কোনো সাধারণ মানুষের কাছেই একটি ‘ভালো’ শব্দ শোনা যায়নি তার সম্পর্কে। বরং তারা ছুটিয়েছেন গালির তুবড়ি।

এমনকি দলের সিনিয়র-জুনিয়র নেতাদের বড় অংশের অভিমতও  ওই মাঠে-ঘাটের মানুষের মতোই। শিবগঞ্জ মোড়ে দারার কাজে ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষ

রাজশাহীর রাজনীতির মারপ্যাঁচে সবচেয়ে জটিল আসন এটি। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তর্কোন্দল, দ্বন্দ্ব চরমে। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে গত দুইবারের সংসদ সদস্য দারা। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন গাঁড়েন জাতীয় সংসদে। ২০০৮ সালে সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মো. ফারুকের পরিবর্তে তাকে মনোনয়ন দেয় দল। অটোচালক আব্দুল হালিমকিন্তু দলের আস্থার প্রতিদান যে খুব ভালো দেননি তা স্পষ্ট সাধারণ মানুষের মুখে। শিবপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিলো কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে। কেউ পেশায় সবজি বিক্রেতা, কেউ করেন কৃষিকাজ। নির্বাচনের কথা শুনে রীতিমতো কঁকিয়ে ওঠেন সবাই। বলেন, এমপি দারার তো টিকি দেখা যায় না এলাকায়। কোনো কাজ করেননি। আমরা এবার তারে ভোট দেব না। দুর্গাপুরের রাস্তায় ঢুকলে আরও বুঝতে পারবেন।

শিবপুর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ ভাঙা। অটোতে নির্বাচনের কথা তুলতেই ক্ষোভ ঝাড়লেন চালক কবিরসহ অন্য যাত্রীরা।  দুর্গাপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদবলেন, এমপি তো এখন ভয়ে এলাকায় আসেন না। ছোট পোলাপানও তারে দেখলে খ্যাপায়। একবার তো তার জনসভা ও আরেকবার গাড়িতে জুতাও মারছিলো। এলাকার লোকজন তারে দেখতেই পারে না।

পথে একবার তাকে নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশ ডেকে গ্রেফতার করানোরও অভিযোগ রয়েছে দারার বিরুদ্ধে। সব শ্রেণীর সব বয়সী মানুষের কাছেই চরম অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন দারা। নিজের দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ তার বড় প্রমাণ।

দুর্গাপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু ভাই কি বলবো, এমপি দারার জন্যই দল এখানে ডুববে। দারা ভোট করলে আমি নিজেই তাকে ভোট দেব না। টাকা ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। এলাকার কোনো উন্নয়ন করেনি। শুনেছি টাকা খেয়ে বিএনপি জামায়াতের লোকজনকেও তিনি নিয়োগ দিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়।

পুঠিয়ার দোকানি রাজেশ বলেন, রাস্তাঘাটের কথা বললে কিংবা কোনো কাজের কথা বললে তিনি বলেন, এমপি হওয়ার জন্য তো তোমাদের ভোট লাগেনি। এতো কথা বলো কেন। সাধারণ মানুষের কথা শুনতে চান না তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আহসান উল হক
কাটাখালী থেকে আমগাছি যাওয়ার পথে অটোতে দুঃসহ রাস্তার কথা তুলতেই যাচ্ছেতাই বলে দারাকে তুলোধুনো করলেন যাত্রীরা।  

প্রথমে ঠাট্টা করে বলেন, দারা এবার মেলা ভোট পাবে! পরে বলেন এখানে যদি ২০ হাজার ভোট থাকে তাহলে ৪শ’ ভোটও পাবে না। দুই গাড়ি পুলিশ ছাড়া দারা এলাকায় তার বাড়িতেও ঢুকতে পারে না, পারবেও না। লোকজনরে তিনি মেলা অত্যাচার করেছেন। এমপি না থাকলে এলাকায় আসতে পারবেন না। কাজ না করে শুধু টাকা কামিয়েছেন তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলার পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নানএমপি দারা এলাকায় যে কাজ করেছেন তাতে তাকে এবার মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত হারাতে হবে। তিনি কাজ করেছেন, তবে লুটপাটের কাজ। পুকুর, গম থেকে শুরু করে এমন কোনো খাত নেই যে, সেখানে তিনি টাকা খাননি। এলাকায়ও আসেন না। কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন শুধু। এলাকার কোনো উন্নয়নই উনি করেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ বলেন, বর্তমান এমপি স্কুল-কলেজসহ সব নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। টাকার বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপির ৮০ শতাংশ লোককে তিনি চাকরি দিয়েছেন। ছাত্রলীগ যদি ১০ লাখ টাকা দিতে চায়, ১২ লাখ টাকা দিলে তিনি চাকরি বিএনপি করে এমন কাউকে দিয়ে দেবেন। আর রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখলেই বুঝবেন। ওনাকে মনোনয়ন দিলে দল ডুববে।  পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমরাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, দারা এমপি হয়েছে আমার হাত ধরে। আমিই তাকে নিয়ে আসি তার বাবার মৃত্যুর পর। কিন্তু দলের ভাবমূর্তি তার কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, এমপি লোকের কথা শুনে কান ভারী করে কিছু কাজ খারাপ করে ফেলেছেন। উপজেলার বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো না।

পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দল করলেও পুঠিয়া-দুর্গাপুরে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন হয়নি এটা স্বীকার করতে হবে। এমপি ইচ্ছেমতো কমিটি দেন। দলের জন্য ক্ষতি হচ্ছে। তার কোনো জনপ্রিয়তা নেই।

তবে ভিন্নকথা বললেন দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক দিক দিয়ে আমরা একটু দুর্বল আছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্য কাজ করবো।

খারাপ সড়কের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, খারাপ সড়কের জন্য আমার নিজেরও খারাপ লাগে। পদ্মাসেতুর কাজের কারণে এলাকার রাস্তাঘাটের কাজ করতে পারেননি এমপি। তবে নির্বাচনের আগে কাজ হবে এবং দলের উন্নয়নের কথা মানুষকে বোঝালে সবাই ভোট দেবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার দুটি মোবাইল নম্বরে ফোন করলেও তিনি কল সিরিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।