ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

জুয়েলের ‘পথের কাঁটা’ ফারুক, প্রিন্স ঠেকাতে আফজাল-আজগর!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
জুয়েলের ‘পথের কাঁটা’ ফারুক, প্রিন্স ঠেকাতে আফজাল-আজগর! .

ময়মনসিংহ: চারবার সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন বাবা প্রমোদ মানকিন। মৃত্যুর আগে দুই মেয়াদে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। বাবার পর তারই শূন্য আসনে কোনো রকম বাঁধা ছাড়াই এমপি হন তরুণ ও রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ জুয়েল আরেং। 

সংসদ সদস্য হয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করার কথা থাকলেও সেটি হয়নি মোটেও। দূরত্ব রয়েছে দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও।

চমক দেখাতে পারেননি উন্নয়নেও। যোগাযোগের জন্যও তাকে না পাওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই।  

তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির মতো বড় রকমের কোনো অভিযোগ না থাকায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই মনে করেন অনুসারী-অনুগামীরা।  

অবশ্য তরুণ এই সংসদ সদস্যের ‘পথের কাঁটা’ ও শক্ত মনোনয়ন প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান।  

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘পুনরায় জুয়েলকে দিয়ে এই আসন আসবে না। বিএনপির সেন্ট্রাল নেতার সঙ্গে কনটেস্ট করার মতো প্রার্থী তিনি নন। তার বয়স কম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। জনমতের বাইরে দল এবার প্রার্থী দিলে ৫০ পার্সেন্ট নেতা ভোটকেন্দ্রে যাবে না।  

‘তবে আমি মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এরপরও দল মনোনয়ন না দিলে নেত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় প্রার্থীর জন্যই কাজ করবো,’ যোগ করেন ফারুক খান।  

তবে এই বিষয়ে তরুণ সংসদ সদস্য জুয়েল আরেংয়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।  

সূত্র মতে, এই আসনে আ’লীগ থেকে আরো একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয় থাকলেও মনোনয়ন নিয়ে মূল হিসাব-নিকাশ দলীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের পাশাপাশি নৌকার মাঝি হতে চান আরো অনেকেই।  

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন-ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজনু মৃধা, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন, ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হেলাল উদ্দিন।  

প্রায় আড়াই লাখ ভোটারের এই সংসদীয় আসনে স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ ৫ বার জিতে আওয়ামী লীগ। মাত্র দু’বার বিএনপি ও একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়মাল্য পড়ে।  

পার্শ্ববর্তী জেলা নেত্রকোণার জেলার পূর্বধলার সঙ্গে এক সময় সম্পৃক্ত ধোবাউড়া উপজেলাকে হালুয়াঘাটের সঙ্গে যুক্ত করা হলেও কোনো সময়েই ধোবাউড়ার বাসিন্দারা নৌকার মনোনয়ন পাননি। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচাতে নিজের উপজেলা থেকে মনোনয়ন চান ধোবাউড়ার দলীয় নেতা-কর্মীরা।  

মনোনয়ন রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমন সব সমীকরণের বিপরীতে মোটেও স্বস্তি নেই বিএনপিতেও। দলটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফজাল এইচ খান ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পাশাপাশি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর মনোনয়ন যুদ্ধে আলোচিত।
তবে একাধিক সূত্রের ভাষ্য, দলটির পরিচালিত একাধিক জরিপে এই আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নাম। দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রামে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা এবং বিএনপির ক্ষমতার সময়ে এখানে উন্নয়ন তৎপরতায় নেতৃত্ব দিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝেও একটি পজেটিভ ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। অবশ্য ইদানিং তার মনোনয়ন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দুই নেতা।  

স্থানীয় সূত্র বলছে, মনোনয়ন ইস্যুতে পুরনো বিরোধ ছিলো এই তিন নেতার মধ্যে। মাঝখানে বছর চারেক আগে সব তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে সুদৃঢ় ঐক্যের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। ‘গাঁটছড়া’ বেঁধে একত্রে ছিলেন অনেক দিনই।

কিন্তু কীভাবে সেই সম্পর্কের অবনতি, প্রশ্ন করলে লুফে নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান টিএইচ খানের ছেলে আফজাল।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘দলের প্রয়োজনেই আমরা এক হয়েছিলাম। কিন্তু প্রিন্স বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে আমাদের এড়িয়ে চলেন। আমি ও আজগর এখনো একসঙ্গে রয়ে গেছি। ’ 

তবে দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মুখে যতোই নীতি কথা বলুন না কেন দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘কানেকশন’ নেই আফজাল এইচ খানের। বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকাতেই থাকেন। তার আচরণ নিয়েও সাধারণ মানুষের অভিযোগের কমতি নেই।

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে আফজাল বলেন, ‘পুরনো ছবি দেখিয়ে, ঘরের ভেতর বসে ফেসবুকে রাজনীতি করে প্রিন্স। আমি ২২ বছর টানা এলাকায় থেকেছি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। ’

তবে এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ঘরে বসে ফেসবুকে ছবি দিয়ে রাজনীতি করি না। পুরনো ছবির কোনো প্রোগ্রাম দেখাতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। ’

আফজালের সঙ্গে ঐক্যে থাকা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রিন্স কোনো কিছুতেই আমাদের দু’জনকে ডাকেন না। তার একলা চলো নীতির কারণে সব ক’টি ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থীরা জামানাত হারিয়েছে। ’ 

‘পৌর নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে। আমরা এক থাকলে এমনটি হতো না। প্রিন্সকে মনোনয়ন দিলে দলের নির্বাচন করবো না। আফজালকে দিলে করবো,’ বলেন তিনি।  

তবে এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এই ঐক্য ভাঙার দায় আমার নয়, তাদের। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক সবার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

‘আর পৌর নির্বাচনের সময় বারবার তাগাদা দিলেও তারা আমাদের ডাকে সাড়া দেননি। পরে বাধ্য হয়েই এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রার্থী দিয়েছি। ’ 

তবে তিনি এও বলেন, ‘সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার হয়েই নির্বাচন করবো। দলের প্রতি আনুগত্য ও মমত্ববোধের জন্যই দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে সবাইকে। ’  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।