ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজশাহী-৬

আ’লীগে নির্ভার শাহরিয়ার, বিএনপিতে আলোচনায় চাঁদ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৮
আ’লীগে নির্ভার শাহরিয়ার, বিএনপিতে আলোচনায় চাঁদ রাজশাহী-৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

রাজশাহী: চারঘাট-বাঘা উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৬ আসন গঠিত। জাতীয় সংসদের ৫৭ নম্বর এটি। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় নেই এখন পর্যন্ত।

বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দিয়ে এরইমধ্যে তিনি সরকারের মন্ত্রিসভা ও স্থানীয় ভোটারদের জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার তাকে লড়তে হবে উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে।

কারণ প্রতিপক্ষ শিবিরে মনোনয়নের দৌঁড়ে এবার আলোচনায় উঠে এসেছেন এই নেতা।

এক সময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহরিয়ার আলম।  

তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়নি তাকে। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কান্ডারি সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ট হিসেবে এলাকায় পরিচিত শাহরিয়ার আলমের ঠাঁই হয় মন্ত্রিসভায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এলাকার মানুষের সঙ্গে। দেশ-বিদেশের যেখানেই থাকুন সপ্তাহে অন্তত একবার নিজ এলাকায় আসেন এই সংসদ সদস্য। নিজ সংসদীয় এলাকায় ফিরলেই তিনি গ্রামের পাড়া-মহল্লা চষে বেড়ান। উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেন। এছাড়া যখনই আসেন এলাকার কোনো না কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বোধন করেন। তাই তার জনপ্রিয়াতাই বেশি।

এদিকে, তার প্রতিপক্ষ শিবিরে ভোটের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা আবু সাঈদ চাঁদ। এবার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তিনি হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী। বলা হয়, রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগে যেমন শাহরিয়ার আলমের কোনো বিকল্প নেই, তেমনি বিএনপিতেও আবু সাঈদ চাঁদেরও বিকল্প নেই। তবে এরপরও দুই বড় দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন ভোটের মাঠে। ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়ে বিভিন্ন সময় শুভেচ্ছা জানিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নিজেদের নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে প্রচার করছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। শাহরিয়ার আলম ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী।  

এছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি থেকেও আসনটিতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ ছাড়াও রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমান। এছাড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনও মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে ভোটারদের দোয়া চেয়েছেন।  

এছাড়া বড় দুই দলের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন রিন্টু এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারাও গণসংযোগ করছেন বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করছেন।  

স্থানীয়দের ভাষ্য, বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সমানতালে লড়তে হলে বিএনপিকে অবশ্যই চাঁদের কথা ভাবতে হবে। না হলে জয়ের লড়াইয়ে ফলাফল ভিন্নও হতে পারে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক বলেন, নানা কারণে নেতাকর্মীরা এখন দ্বিধা বিভক্তিতে ভুগছেন। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। আমি যখন সংসদ সদস্য ছিলাম তখন দলে কোনো বিভেদ ছিল না। এখন নানা দল, উপদলে বিভক্ত। তাই এখানে আওয়ামী লীগকে আবারও শক্তিশালী করতে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবো।

সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, এই আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিঃস্বার্থভাবে তিনি  মানুষের পাশে আছেন। সরকারি সহযোগিতা না পেলে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা দিয়েছেন। এই আসনের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, যেখানে রাস্তা ছিল না সেখানে রাস্তা করা হয়েছে। যেখানে কাঁচা রাস্তা ছিল সেখানে পাকা রাস্তা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা সব জায়গাতেই উন্নয়ন করেছি। ফলে আমার উন্নয়নের কথা একবার মনে করলে জনগণের অন্যদিকে যাওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই বলে মনে করি। এছাড়া যেকোন সময়ের চেয়ে চারঘাট-বাঘায় আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী ও সাংগঠনিক।

এদিকে, নাশকতার মামলায় বিএনপি নেতা চাঁদ বর্তমানে কারাগারে। গত নির্বাচন এবং এর পরবর্তী সময়ে তার নামে একাধিক মামলা হয়েছে। এর আগে তিনবার দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি চাঁদ। তার কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশা, এবার চাঁদকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।  

চারঘাট ও বাঘা উপজেলার আয়তন ৩৯৪ দশমিক ৬৬ বর্গ কিলোমিটার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটির মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৩ হাজার। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৯টি এবং ভোটকক্ষ ৫৮৭টি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।