ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

টাঙ্গাইল-২: আ’লীগে কোন্দল, বিএনপিতে পিন্টুর অপেক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
টাঙ্গাইল-২: আ’লীগে কোন্দল, বিএনপিতে পিন্টুর অপেক্ষা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

টাঙ্গাইল: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (ভুঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। 

পাশাপাশি যে যেমন পারছেন ক্লাব, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক অনুদান দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের অর্ধডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়ে গেছে।

প্রত্যেক প্রার্থী দলের মধ্যে নিজস্ব লোকবল তৈরিতে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মসূচির চাইতে নেতা কেন্দ্রীক কর্মসূচি নিয়ে বিভক্ত কর্মীরা।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় খন্দকার আসাদুজ্জামান বয়সের ভারে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ন্যুব্জ। তাই তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। তার জায়গা দখলে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধডজন প্রার্থী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় এ আসনের বিএনপির ক্ষমতাধর প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালম পিন্টুর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ায় এ আসনে বিএনপি এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়।
 
প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এবং খন্দকার আসাদুজ্জামান এমপি’র ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল।  

তবে এ আসনে সব প্রার্থীই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন। এক প্রার্থী সমাবেশ আহ্বান করলে অপর প্রার্থীও একই স্থানে একই সময় সমাবেশ আহ্বান করছেন। এ নিয়ে গোপালপুর ও ভূঞাপুরে প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে মাঝেমধ্যে চলে উত্তেজনা।

আসন রক্ষায় ও বিএনপিকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় ও তরুণ ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছে তৃণমূলের নেতারা। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের নাম আলোচনায় এসেছে।  

অপরদিকে বিএনপি থেকে সাবেক উপমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এ আসনে বিএনপির কোনো নির্বাচনী প্রচারণা নেই। তবে এ আসনে তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রার্থী হতে পারেন। যদিও আপিলের মাধ্যমে সালাম পিন্টুই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এ আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে আফাজ উদ্দিন ফকির নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির শামছুল হক তালুকদার ছানু এবং ১৯৮৮ সালে জাসদের আব্দুল মতিন হিরু নির্বাচিত হন।  

১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আব্দুস সালাম পিন্টু ফের নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হন। এর পরে ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে খন্দকার আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।  

এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশায় আরো মাঠে নেমেছেন, ভুঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাসুদুল হক মাসুদ, ভূঞাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, লে. কর্নেল (অব.) মির্জা হারুন অর রশিদ ও টাঙ্গাইল জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি কেএম সালাম অ্যাডভোকেট।  

টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি এমপি রানাসহ তার ভাইদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় আলোচিত নেতায় পরিণত হয়েছেন তানভীর হাসান ছোট মনির। সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি গোপালপুর-ভুঞাপুরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এ কারণে তিনি গোপালপুর-ভূঞাপুরের যুবসমাজের কাছে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।  

তানভীর হাসান ছোট মনির বাংলানিউজকে বলেন, গোপালপুর-ভুঞাপুরের সাধারণ মানুষ আমাকে সন্তানের মতো গ্রহণ করেছেন। তাদের পাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমি দলের মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় কেউ রুখতে পারবে না।

এ আসনে জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি শামসুল হক তালুকদার ছানু একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনুস আলী তালুকদার ঠান্ডু সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। এই সাবেক ছাত্র নেতা পরপর দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচিত হয়ে এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছি এবং সব সময় মানুষের পাশে থেকেছি। গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে রয়েছে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমাকে দল মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে এ আসনটি দলকে উপহার দিতে পারবো বলে আশা রাখি।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। আর এ আসনে সালাম পিন্টু একাই প্রার্থী। তার কোনো বিকল্প নেই। তিনি তার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করবেন। আর তিনি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন বিএনপি ছাড়া আর কোনো দল দখল নিতে পারবে না।  

নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে তিনি জানান, পোস্টার, ব্যানার, মিছিল-মিটিং করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ কারণে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না।

গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-২ সংসদীয় আসন। এতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪২৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৯ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।