ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

বরিশাল-৩ আসনে প্রার্থী নিয়ে জোটের টানাটানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮
বরিশাল-৩ আসনে প্রার্থী নিয়ে জোটের টানাটানি বরিশাল-৩

বরিশাল: আড়িয়াল খাঁ নদে বিচ্ছিন্ন বরিশালের বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা। যে দুই উপজেলাকে ঘিরে বরিশাল-৩ আসন আর জাতীয় সংসদের ১২১ নম্বর নির্বাচনী এলাকা।

দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪১৪ জন ভোটারের এ আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের পিতৃভূমি এটি। তার বাবা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন।

স্বভাবতই এখানে ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক অবস্থাও বেশ মজবুত।

আবার বিএনপির সেলিমা রহমানের বাড়ি বাবুগঞ্জ এবং মোশারফ হোসেন মঙ্গু ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের বাড়ি মুলাদী হওয়ায় এ আসনে বিএনপির অবস্থান বেশ শক্তপোক্ত বলা চলে, যদিও আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর খাতায় রয়েছে বিএনপির অনেকের নাম।

এদিকে বড় মাপের কোনো নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী না হলেও দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থানও বেশ শক্তিশালী। যদিও এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এক প্রকার গাছাড়াভাব দেখাচ্ছে এ আসনটিকে নিয়ে। কারণ এরআগে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি ও ২০১৪ সালে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম রয়েছে, যা নিয়ে ভাবনায়ও রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। যদিও ভাবনার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বছরের পর বছর ধরে এলাকায় নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও বেশ সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে সীমানা পুননির্ধারণের কারণে বাবুগঞ্জের সঙ্গে মুলাদী যুক্ত হয়ে বরিশাল-৩ আসন গঠিত হয়। এর আগে উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ছিলো আলাদা আসন। তখন মুলাদী ছিল বরিশাল-৩ আসনে এবং বাবুগঞ্জ ছিলো ২ আসনে। সেই হিসেবে ১৯৯১ সাল থেকে বরিশাল-৩ আসনে একটানা তিনবার নির্বাচিত হন বিএনপির মোশাররফ হোসেন মঙ্গু। আবার ১৯৯১ সালে বরিশাল-২ আসন অর্থাৎ উজিরপুর-বাবুগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন হন বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। যদিও এর পরের নির্বাচনে সেখানে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও পরের বার জাতীয় পার্টির গোলাম ফারুক (অভি) সংসদ সদস্য হন।

তবে সীমানা পুননির্ধারণের পর ২০০৮ সালে বাবুগঞ্জের সন্তান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান। যদিও এরই মধ্যে এ আসনে টিপু সুলতানের নাম অনেকটাই আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্কার্স পার্টি তার দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. আতিকুর রহমানও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন। রাশেদ খান মেননের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতো আতিকুর রহমান দলীয় সমর্থন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সংসদীয় এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন আলাদা ভাবমূর্তি।

বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে দলীয় সবক্ষেত্রে আমার নেতা রাশেদ খান মেননের সিদ্ধান্ত মুখ্য। জনগণ যদি মনে করে আমি এমপি হওয়ার যোগ্য, তাহলে ভোট দিয়ে অবশ্যই আমাকে আবারও জয়ী করবে। আর জোটের প্রশ্নে ১৪ দলীয় জোট মনোনয়নের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ’

এদিকে স্থানীয়ভাবে দল সুসংগঠিত রয়েছে বলে দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই অনুযায়ী নেতাকর্মীরা কাজ করবে। ’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার।  

এদিকে বরিশাল-৩ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে মরিয়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা মুন্সী ও মুলাদী উপজেলার জাতীয় পার্টির (এ) সভাপতি আব্দুল্লাহ হারুন।

যদিও মনোনয়ন প্রশ্নে এখানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। দল ছাড়া যদি জোটের প্রশ্ন ওঠে সেখানেও এগিয়ে যেতে পারেন তিনি। তার কর্মীদের মতে এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নিয়মিত সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন তিনি।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অপর ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস ছত্তার খান ।

যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে সেলিমা রহমান ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীও। তবে এ নিয়ে ভাবছেন না সেলিমা রহমান। আর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলেই আশাবাদী। উভয়ের দাবি একক প্রার্থী হলে বিজয় ধানের শীষের হবেই।

বিএনপির বরিশাল উত্তর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বাংলানিজকে বলেন, ‘বরিশাল-৩ আসন সর্বদাই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। জনগণ বিএনপির প্রার্থীকেই ভোট দিবে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো আলামত দেখছি না। বরিশাল-১ ও ৪ আসনের মতো এই আসনেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকে বেশ কয়েকটি গায়েবি মামলা হয়েছে। যেসব মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়ানো হয়েছে। কারণ মামলার আসামি হলে তারা এলাকায় আসতে পারবে না এবং কিছুই করতে পারবে না। ’

এদিকে এ আসনে জামায়াত ইসলামও প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় বরিশাল মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও ছাত্র-শিবিরের সাবেক কার্যকরি পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের নাম উঠে এসেছে। যদিও জোটের ওপর নির্ভর করবে জামায়াতের প্রার্থীর চূড়ান্ত অবস্থান এমন দাবি স্থানীয় জামায়াত নেতাদের।

পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলার সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভাইস চেয়ারম্যান মো. এনায়েত কবির বরিশাল-৩ আসনে নির্বাচন করবেন বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৮
এমএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।