কলকাতা: পুরসভারে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে ৫ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের উত্তর ২৪ পরগনা ও সল্টলেকের বাড়িতে টানা ১৯ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তল্লাশিতে এক কেজি স্বর্ণের গহনা উদ্ধার করা হয়েছিল।
তদন্তকারী সংস্থার সূত্র মতে জানা গিয়েছিল, স্বর্ণ ছাড়াও প্রচুর নথি ও ডিজিটাল প্রমাণাদি মিলেছে। মন্ত্রী ছাড়াও তার পরিবারের সব সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি সংগ্রহ করেছিল ইডি।
সেই নথির ভিত্তিতে রোববার (৮ সেপ্টম্বর) আরও তৎপর হয়েছে ভারতের অপর একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এ দিন সকালেই কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এইসঙ্গে রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কামারহাটি আসনের বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়ি, কলকাতার ভবানীপুরের বাড়িতেও তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই’র আরও একটি দল।
এর মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরসভা কাঁচরাপাড়া এবং হালিশহর পুরসভার সাবেক পুরপ্রধান যথাক্রমে সুদামা রায় এবং অংশুমান রায়ের বাড়িতেও হানা দিয়েছেন সিবিআই’র গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে কৃষ্ণনগর পুরসভার সাবেক পুরপ্রধান অসীম সাহার বাড়িতেও তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই।
হঠাৎ সিবিআইয়ের সক্রিয়তা নিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (টুইট) বলেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা হিট। বিজেপির ওপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে আসতে হয়েছে, তাতেও ফল শূন্য। রাজ্যপাল কোণঠাসা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নজর ঘোরাতে রাজনৈতিক পরিকল্পনায় আবার নামানো হলো এজেন্সিকে। এরাই বিজেপির আত্মরক্ষার অস্ত্র। এসব করে তৃণমূলকে দমানো যাবে না।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে রাজ্যের বকেয়া আদায়ের জন্য ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লিতে ধরনা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ৫ অক্টোবর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দের বাসভবনের (কলকাতার রাজভবন) সামনে টানা অবস্থান নিয়েছে অভিষেক ও তার দল।
যদিও সিবিআইয়ের তল্লাশি নিয়ে কোনো রাজনীতি দেখছে না বিজেপি। রাজ্য বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, এই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। এখানে মোদি সরকারের কোনো বিষয় নেই। হাইকোর্টের নির্দেশ এবং তত্ত্বাবধানে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চলছে। আমরা চাই তদন্তে গতি আসুক। আদালতও বার বার একই কথা বলছেন। সত্য সামনে আসবেই।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে রিয়েল এস্টেট ডেভলপার অয়ন শীলের সূত্র ধরেই রাজ্যের একাধিক পুরসভায় কর্মী নিয়োগে বিশালাকার দুর্নীতির খবর সামনে আসে। এপরই আদালতে মামলা ওঠে। কোর্টের নির্দেশে ইডি এবং সিবিআই যৌথ উদ্যোগে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত অভিযান শুরু করে। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক পুরসভার পুরপ্রধান ও অন্য কর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সংস্থা দু’টি। এরপরই ৫ অক্টোবর পুরসভা দুর্নীতি মামলায় প্রথম খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি চালায় তারা।
জানা যায়, সেখান থেকে সূত্র পেয়েই নাকি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ এবং সাবেক মন্ত্রী মদনের বাড়িতে হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ