ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় বাণিজ্যমেলায় জমে উঠেছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
কলকাতায় বাণিজ্যমেলায় জমে উঠেছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

কলকাতা: কলকাতায় বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সারা বছর মেলে না। শহরবাসী অপেক্ষায় থাকেন আন্তর্জাতিক মেলাগুলোর ওপর।

শহরের এমনই একটি মেলার নাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। আর এবারে বাণিজ্যমেলায় শুরুর দিন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন বঙ্গবাসী। বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই হিন্দিভাষীরাও। মেলায় অংশ নিয়েছে ১৭ দেশ ও ভারতের ২২ রাজ্য।

তবে এতগুলো দেশ মেলায় অংশ নিলেও সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে বাংলাদেশের স্টলগুলোয়। মেলায় প্রবেশ করেই মানুষজন প্রথমেই খোঁজ নিচ্ছেন কোথায় রয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। এমনটাই জানিয়েছেন মেলার আয়োজকরা। জামদানি, মসলিন, জুট, খাদ্যপণ্য বা বাংলাদেশি বাসনকোসন সবচেয়ে আকর্ষণ করছে শহরবাসীকে। অপরদিকে বাংলাদেশি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, গতবারের থেকে এবার সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বেচাকেনা।

কলকাতা সায়েন্স সিটি প্রাঙ্গণে গত ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে ২২তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। চলবে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের মেলায় বাংলাদেশ পার্টনার কান্ট্রির মর্যাদা পেয়েছে। অর্থাৎ মেলার কেন্দ্রীয় আকর্ষণ লাল সবুজের বাংলাদেশ। মেলায় অংশ নিয়েছে ৪০টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। বেচাকেনায় কলকাতাবাসীর ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা।

এক নারী পোশাক বিক্রেতার মতে, শহরবাসীর সবচেয়ে বেশি চাহিদার তালিকায় রয়েছে জামদানি শাড়ি, জামদানি কুর্তি ও জামদানি তৈরি থ্রি পিস। এ ছাড়া মসলিন মশারি, গামছা, লুঙ্গিতো আছেই। সমান পরিমাণে চাহিদা রয়েছে সেলাই সুতা দিয়ে নকশা করা পোশাক, চাঁদরসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম। আর সবাই তো এক বাক্যে একবার খোঁজ নিচ্ছেন নকশী কাঁথার মধ্যে কী আছে।

পোশাকের পাশাপাশি এবার নামকরা কয়েকটি ফুড অ্যান্ড বেভারেজের বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মূলত একটি মাত্র বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় পশ্চিমবঙ্গে। তবে এবার অন্যান্য সংস্থাগুলো যথেষ্ট পাল্লা দিচ্ছে। তাদের তৈরি বিস্কুট, ড্রাই কেক, বিভিন্ন রকম পানীয়, জ্যাম জেলি, সস যথেষ্ট পছন্দ করছেন শহরবাসী। আফসোস করে অনেকেই বলেছেন, ভারতে এ রকম স্বাদের পণ্য তৈরি হয় না। বাংলাদেশ একটি মাত্র ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পণ্য পাওয়া যায় শহরে। কিন্তু এ ধরনের আরও প্রতিষ্ঠান বাংলায় এলে শহরময় ছেয়ে যাবে বাংলাদেশি স্বাদে।

তবে এবার নারী পোশাক বা খাদ্যপণ্যের বাইরে নজর কেড়েছে জুটের তৈরি পুরুষদের পোশাক। ভারতে এ প্রথম দেখা গেছে জুটের তৈরি ব্লেজার বা শীতের জ্যাকেটের। জুট স্টলের নারী বিক্রেতা বলেছেন, জুট হলো ন্যাচারাল প্রোডাক্ট। এটাকে আমরা লাইফস্টাইলে নিয়ে এসেছি। বিভিন্ন জ্যাকেট বা ব্লেজারে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, যা পেয়ে শহরবাসী যথেষ্ট খুশি। তারা ধারণাই করতে পারেনি জুটের তৈরি ব্লেজার, জ্যাকেট হতে পারে।

হিন্দিভাষী এক শাড়িপ্রেমী ক্রেতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ডিজাইনের শাড়ি তার সবচেয়ে পছন্দের, যা কলকাতায় সহজে মেলে না। ফলে বছরে তার মূল ফোকাস থাকে শহরের বাণিজ্যমেলায়। একই মত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ খাদ্যপণ্য ক্রয় করতে আসা ক্রেতারা। একইভাবে জুটের জ্যাকেট দেখে আপ্লুত হাওড়ার সোমনাথ দে। তিনি তো বলেই ফেললেন, এবারে বিয়ের মৌসুমে আমার ফ্যাশন হবে জুটের জ্যাকেট।

মেলা কমিটির দায়িত্বে থাকা উৎপল রায় জানিয়েছেন, এতগুলো দেশ অংশ নিলেও ভিজিটররা মেলায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের কাছে জানতে চাইছেন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন কোথায়? সে দেশের (বাংলাদেশ) মানুষের যে আন্তরিকতা, আবেগ, আতিথেয়তা সেটাই স্পর্শ করছে লাখ লাখ মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। তাই প্রথমে ঢুকেই বাংলাদেশ স্টলগুলো ঘুরছে, দেখছে, কিনছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষায় ক্রেতা-বিক্রেতার বেচাকেনা চলছে।

কেউ বরিশাল, কেউ পাবনা, কেউ ঢাকা, কেউ সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ প্রায় সব জেলার ভাষায় চলছে কথার আদান-প্রদান। এটা যে কতটা তাদের কাছে আবেগের তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বোঝাই যাচ্ছিল শহরবাসী শেকড়ের যে আবেগ তা তাদের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে যথেষ্ট ভালো লাগছে।

১৬ দিনে বাণিজ্যমেলায় বাংলাদেশ ছাড়া অংশ নিয়েছে নেপাল, ভুটান আফগানিস্তান, মিয়ানমার, পশ্চিমের একাধিক দেশসহ ১৭টি দেশ ও ভারতের ২২টি রাজ্য। তবে এতগুলো দেশ মেলায় অংশ নিলেও জমজমাটা কিন্তু বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। কারণ এ একটি মাত্র প্যাভিলিয়নে বেচাকেনা চলছে বাংলা ভাষায়। আর সেই বাংলা ভাষায় কথার আদান-প্রদান আর ক্রেতা-বিক্রেতার মনের মিলে এবারের বাণিজ্যমেলায় কলকাতায় জমে উঠেছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।