কলকাতা: কলকাতার আর জি কর মেডিকেলের শিক্ষার্থী মৌমিতা দেবনাথের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্র আন্দোলন দানা বেঁধেছে। তবে এখনও পর্যন্ত আন্দোলনের মূলে স্রোতে আছেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন। পথে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরাও। এতে এক প্রকার ভেঙে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা। আন্দোলনের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।
মৌমিতার মৃত্যুর ঘটনা পুলিশ প্রথমে আত্মহত্যা বলে পরিবারকে জানালেও, চাপের মুখে পুলিশ স্বীকার করেছে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক ক্ষত চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। নিহত শিক্ষার্থী উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা হলেও ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার আর জি কর হাসাপাতালের হোস্টেলের ভেতরে। নিহত শিক্ষার্থীর বাবার দাবি, তার মেয়ের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে জানিয়েছিল পুলিশ। এরপর থেকে ক্ষোভ বাড়তে থাকে রাজ্যজুড়ে। তারপরেই পুলিশ জানায়, ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে মৌমিতাকে।
সোমবার (১২ আগস্ট) মৌমিতা দেবনাথে বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে বের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাবা-মায়ের অভিযোগ, ওদের ভেতরেই কেউ আছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। কারও হাত রয়েছে কি না, তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে পুলিশকে দেওয়া বিশেষ নির্দেশে মমতা বলেছেন, দরকারে ওর বন্ধুবান্ধকে ডেকে কথা বলুন। যিনি ফোন করে সেদিন খবর দিয়েছিলেন, তার সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।
মমতা বলেছেন, কীভাবে মেয়েটাকে মেরেছে! দ্রুত এর বিচার করতে হবে। আমরা ফাঁসি চাই। তাই ফাস্টট্র্যাক আদালতে তোলার কথা বলেছি। যাতে দ্রুত বিচার হয়। সমাজে এখনও অনেক লোক আছেন, যারা ভুলে গিয়েছেন নারীদের গায়ে হাত দেওয়া কত বড় অপরাধ। যে কারণেই ফাঁসির সাজা চাইছি।
তিনি আরও বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, এটা ভেবে, কীভাবে অত্যাচার করে মারা হয়েছে। ওখানে নার্সরাও ছিলেন, সিকিউরিটিও ছিলেন। কিন্তু কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, কেউ কিছু দেখল না? এখনও বুঝতে পারছি না!
মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশকে সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, পুলিশ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করুক তদন্ত। আমি চাই যে বা যারা জড়িত, তাদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করা হোক। এভতরেও হয়তো অনেকে আছে। আগামী রোববারের মধ্যে পুলিশ তদন্ত শেষ করতে না পারলে তদন্তভার সিবিআই (পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ)-কে দিয়ে দেওয়া হবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন আশ্বাসে খুশি নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের বক্তব্য, এতবড় একটা নৃশংস ঘটনা ঘটে গেল। তারপরেও রোববার কেন? কেন এত সময় লাগছে? রোববার হলে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করুক নতুবা বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, পুলিশের হাতে আটক সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত আছে।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় একটি সেমিনার হল রয়েছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রী মৌমিতার মরদেহ পাওয়া যায়। খবর জানাজানি হতেই তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা বৃহস্পতিবারও রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডিউটি করেন। পরে কর্মরত আরও দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাওয়া শেষ করে পড়াশোনার জন্য সেমিনার হলে চলে যান মৌমিতা। শুক্রবার সকাল থেকে তার আর খোঁজ মিলছিল না। পরে সেমিনার হলের মেঝেতে তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশের অনুমান, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ছাত্রীকে। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয় রায় নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তের শাস্তি, নিরাপত্তা ও অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিসহ ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজসহ পশ্চিমবাংলার সরকারি হাসপাতলগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ