ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশকে অনুসরণ করা উচিত

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশকে অনুসরণ করা উচিত ছবি:বাংলানিউজ-কৌস্তভ দত্ত

কলকাতা: কদিন ধরে কখনও ঝিরঝির, কখনও ঝমঝমিয়ে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে পূবালি ভেজা বাতাস। ইলিশ ধরার আদর্শ মওসুম এটাই। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যেতে পারছে না কয়েক হাজার ট্রলার।

গত এক সপ্তাহ ধরে সমুদ্র জুড়ে ভারী বর্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দমকা বাতাস। প্রকৃতির এই বৈরিতার জন্য ঢেউয়ের উচ্চতা এমনি সময়ে যা থাকে, তার চেয়ে অনেকটা বেড়ে গেছে।

কাকদ্বীপ, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানাসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ে সাত হাজার ট্রলার বের করার প্রস্তুতি নিয়েও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মৎস্যজীবীরা।
 
ভরা মওসুমেও তাই কলকাতাসহ গোটা রাজ্য জুড়ে ইলিশের আকাল। তবে এ বর্ষার মধ্যে খিচুড়ি-ইলিশ বা ইলিশ মাছ ভাজার মোক্ষম লোভ থেকে বঞ্চিত হতে নারাজ আমবাঙালিরা। বাঙালি থামেনি! আর সেই রসনাকে পরিপূর্ণ করতে চোখ পড়েছে বাজারের জাটকা ইলিশে।
 
কলকাতার বাজারে এখন বড় ইলিশের দেখা পাওয়া না গেলেও ছেয়ে গেছে ছোট ইলিশে। একই পরিস্থিতি জেলাগুলোতেও। বিষয়টি অস্বীকার করছেন না খোদ মৎস্য সংগঠন থেকে মন্ত্রীও। বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ২শ’থেকে ৩শ’গ্রাম ওজনের ইলিশ। যার দাম প্রতি কেজি ৪শ’থেকে সাড়ে ৪শ’ রুপি। বড় সাইজের ইলিশেও দেখা যাও বা মিলছে দামের জন্যে তাতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ৬শ’-৭শ’ গ্রাম ইলিশের দর হাঁকাচ্ছে ১২শ’ রুপি প্রতি কেজি। ছোট ইলিশ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এতটাই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে মন্ত্রী ও মৎস্য সংগঠন।
 
ছবি: কৌস্তভ দত্তসুন্দরবন সামুদ্রিক মৎসজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সতীনাথ পাত্র উদ্বেগের কথা স্বীকার করে বলেন, বাজারে ছোট ইলিশ রমরমা। এ বিষয়ে সরকার কড়া পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাবে ইলিশ। ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক সরকার। ইউনিয়ন তার বিরোধিতা করবে না। সুন্দরবন এলাকা ছাড়াও, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকাতেও বেশ ইলিশ পাওয়া যায়।

দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শ্যামসুন্দর দাস জানান, গত চার-পাঁচ দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য বন্ধ রয়েছে সুমদ্রে মাছ ধরা। তাই এ বছর প্রথম থেকেই সে ভাবে ইলিশ মেলেনি। যা উঠেছিল তার বেশিরভাগই তিনশো থেকে পাঁচশো গ্রাম ওজনের। এবার জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ইলিশ ধরা শুরু হয়। প্রথমদিকে ইলিশের আমদানি ভালোই ছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়াতে ইলিশ বাংলাদেশের দিকে চলে যায়।
 
বাজারে ছোট ইলিশ মাছ পাওয়ার কথা স্বীকার করে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, বাজারে ছোট ইলিশ মিলছে বলে খবর রয়েছে সরকারের কাছে। তাতে যে বাজার ছেয়ে গিয়েছে এমনটা মনে করছেন না তিনি। তবে শহর এবং শহরতলির মাছ বাজারগুলিতে বড় ইলিশ প্রায় নেই। বেশিরভাগই বিক্রি হচ্ছে ছোট ইলিশ। মন্ত্রীর দাবি, এগুলো পশ্চিমবঙ্গের নদী থেকে ধরা নয়। উড়িষ্যরাজ্য হয়ে এ রাজ্যের বাজারে ঢুকছে ছোট ইলিশ। বাজারগুলোয় নজরদারি চালানোর মত পরিকাঠামোগত কিছু ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তিনি।
 
ছবি: কৌস্তভ দত্তইলিশ ধরার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে যে আইন জারি আছে সেই আইনেও ফাঁক আছে এমনটাই মনে করে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলি।

শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে রাজ্যের আইনে ৯০ মিলিমিটার জাল ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। একই এলাকায় অন্য ছোট মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪০ মিলিমিটার জাল ব্যবহার করা যায়। ৪০ মিলিমিটারের জাল ব্যবহার করলে ছোট ইলিশ তো উঠবেই।

সতীনাথ পাত্র বলেন, সরকারের নিয়মে যদি জালে ছোট ইলিশ ধরা পড়ে, তার অর্ধেক রাজ্য সরকার নিয়ে নেয়, বাকী অর্ধেক দেওয়া হয়, যে ধরেন তাকে।   আইনের ফাঁকেই তো বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে ছোট ইলিশ বিক্রির বিষয়টি!
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, যে মাছ সরকার বাজেয়াপ্ত করে, তা আবার নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। তখন যারা সেই মাছ কেনেন, তারা তো তখন বৈধভাবেই তা বাজারে আনতে পারছেন। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে আইন সংশোধন করা বা বিকল্প আইন করে বন্ধ করা যাবে ছোট ইলিশের রমরমা ব্যবসা।   এক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের সীমানা সংক্রান্ত আইনেও জটিলতা আছে। কারণ উপকূল এলাকা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল অর্থাৎ আনুমানিক ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা রাজ্যের এখতিয়ারে। এর বাইরের এলাকা কেন্দ্রের এখতিয়ারে।   সেখানে মাছ ধরার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।  

তিনি বলেন, উড়িষ্যা রাজ্যে ছোট ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সে সুযোগ ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ঢুকে পড়ছে ছোট ইলিশ। রাজ্যসরকার দুই মাস থেকে বাড়িয়ে চার মাস ইলিশ ধরা বন্ধ করেছে। সেখানে ইলিশের অঞ্চল চিহ্নিত করা এবং তাতে যে কোনো ধরনের মাছ ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কার্যকর ফল বয়ে আনবে।

তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারকে বড় ভূমিকা নিতে হবে। দুই সরকারের সমান্তরালভাবে সচেতনতা বাড়ানো ও এর বিরুদ্ধে কড়া আন্দোলন গড়ে তোলার দরকার আছে। যেমনটা করেছে বাংলাদেশ। এরকম আমাদের করা উচিত। তবেই বাঁচবে ইলিশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ঘণ্টা, ২৭জুলাই, ২০১৭
ভিএস/জিওয়াই/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।