ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশ-ভারত বিশ্বের কাছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মডেল

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
বাংলাদেশ-ভারত বিশ্বের কাছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মডেল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন) থেকে: বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বর্তমানে বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সম্পর্ক এ অনন্য উচ্চতায় আসীন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ​ভবিষ্যতেও দুই দেশ সব সহযোগিতা বিদ্যমান রাখবে এবং বাংলাদেশ-ভারতের এ সম্পর্ক  বিশ্ববাসীর সামনে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের মডেল হিসেবে গণ্য হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার (২৫ মে) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন​ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন স্থাপনের সুযোগ করে দেওয়ায় সেদেশের সরকার, পশ্চিম বাংলা সরকার এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষসহ সে দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাঙালির জীবনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে অবদান ও গুরুত্ব তুলে ধরেন।



কবি গুরুর এই সৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  প্রতিটি বাঙালির জীবনে তিনি উজ্জ্বল বাতিঘর।  

বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবিগুরুর হাতে গড়া এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এই শান্তিনিকেতন। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বৃহত্তর বিশ্বকে গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য জ্ঞানদান করার উদ্দেশ্যে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন।  

‘‘তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ,
তাই তব জীবনের রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার বারম্বার। ”


শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পুরোনো। ১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী আমাকে দেশিকোত্তম ডিগ্রি প্রদান করে। আমার ইচ্ছে ছিল এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে চর্চার জন্য একটি আলাদা জায়গা থাকুক।

২০১০ সালে আমার ভারত সফরের সময় এই ভবনটি স্থাপনের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত এটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে- বলেন শেখ হাসিনা।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বাংলাদেশ ভবন স্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার, ভারত সরকার এবং সর্বোপরি ভারতের বন্ধুপ্রতীম জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের বিভিন্ন দিক স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেশি কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি শুধু এটুকুই বলবো, প্রতিটি বাঙালির জীবনে তিনি উজ্জ্বল বাতিঘর। আমাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, দ্রোহ ও শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ থাকেন হৃদয়ের কাছের মানুষ হয়ে। তার সৃষ্টির ঝর্ণাধারায় আমরা অবগাহন করি প্রতিনিয়ত।

আমি বরং রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আমার আব্বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমার নিজের কিছু কথা বলি।

আমরা ছোটবেলায় আব্বার ভরাট কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতার আবৃতি শুনতাম। অনেক সময় স্টিমারে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় তিনি কবিতা আবৃতি করতেন। আব্বার কয়েকটি প্রিয় পংক্তি ছিল এরকম: “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে...” অথবা “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই” কিংবা ‘‘যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। ”

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের প্রতি তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ দুর্বলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আব্বা রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। তিনি নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন। পাকিস্তান আমলে তাকে প্রায়শই জেলে যেতে হতো। তাকে রাখা হতো নির্জন সেলে। এই নির্জন কারাবাসে তার সঙ্গী থাকতো বই। আব্বা যে বইগুলো সঙ্গে নিতেন তারমধ্যে রবীন্দ্র রচনাবলী অবশ্যই থাকতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রবীন্দ্রনাথের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত করে রেখেছিলেন।

আমাদের বাড়ির পরিবেশটাই ছিল অন্যরকম। বইপড়া, কবিতা আবৃত্তি বা সঙ্গীত চর্চা- একটা সাংস্কৃতিক আবহ বিরাজ করতো আমাদের বাড়িতে। আমার ছোটবোন শেখ রেহানা ছায়ানটে গান শিখতো, আমি নিজে বেহালা বাজানো শেখার চেষ্টা করেছি কিছুকাল, ছোটভাই শেখ কামাল গিটার বাজাতো। আমরা ভাইবোনেরা সবাই কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জড়িত ছিলাম।  

নিজের রবীন্দ্র চর্চার শুরুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার রবীন্দ্র চর্চার শুরু আব্বার কাছ থেকে। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে আরও কাছাকাছি এসেছি রবীন্দ্র সাহিত্যের। এখনও সময় পেলেই আমি রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ি, গান শুনি।  

রবীন্দ্রনাথের লেখা দুঃখ-বেদনা-ক্লেশ দূর করে হৃদয়ে এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়।

রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৪৮ সালে সেদিনের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াই।  

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে সেই বাংলাভাষাকে আমরা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলাম। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

আমাদের ভাষার লড়াই থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধিকারের লড়াই। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীতে তার সাহিত্য ও গানকে নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এই ভূখণ্ডের মানুষ। সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেছিলাম আমাদের হৃদয়ে, চেতনায় ও বিশ্বাসে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের দিয়েছে প্রেরণা, যুগিয়েছে উৎসাহ ও সাহস।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত উদারনৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। কবিগুরুর মত তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, বৈরিতার অবসান না হলে কখনই এই পৃথিবী সমৃদ্ধ হবে না। তাই তিনি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’ এ নীতিকে গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হিসেবে।  

তার অনুসৃত নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহ বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আমাদের উভয় দেশের মধ্যে হাজার বছরের অভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক, ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও আত্মিক বন্ধন বিদ্যমান।  

১৯৭১ সালে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সে সময় ভারতের জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারত সে সময়ে আমাদের প্রায় এক কোটি গৃহহারা মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহু সংখ্যক সৈন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। এই বিপুল আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশের মানুষ কখনও ভুলবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ছোটবোন রেহানাসহ আমাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই দুঃসময়ে ভারতের জনগণ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা আমরা কোনদিন ভুলবো না।  

বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের বহুমুখী ও বহুমাত্রিক এ সম্পর্ক বিগত সাড়ে নয় বছরে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে। আমরা আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, উভয় দেশ ভবিষ্যতেও এ সব সহযোগিতা বিদ্যমান রাখবে।  

আমাদের এ পারস্পরিক সহযোগিতার পূর্ণ সদ্বব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবো এবং এরফলে বিশ্ববাসীর সম্মুখে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মডেল হিসেবে গণ্য হবে বলে আশা করা যায়।  

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ তাঁর সার্ধ-শততম জন্মবার্ষিক উৎসব বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে যৌথভাবে পালন করে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে আমরা এ ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছিলাম।  

পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতনে জমি প্রদান করবেন এবং বাংলাদেশ সরকার এ ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করবে। সে অনুসারে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য ইন্দিরা গান্ধী কেন্দ্রের পাশে প্রয়োজনীয় জমি প্রদান করেন। এখানে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে ২৫ কোটি রুপি ব্যয় হয়।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভবনে গবেষকদের সহায়তার জন্য একটি পাঠাগার, অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটারিয়া, ডিজিটাল জাদুঘর ও আর্কাইভ ও অন্যান্য সুবিধাদি সংযুক্ত থাকবে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ ভবন’ রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ১০ কোটি রুপির সমপরিমাণ একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করবে।  

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ভবন হবে একটি অনুপম কেন্দ্র। শিক্ষার্থী এবং গবেষকগণ এখানে অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে পারবেন। এর মাধ্যমে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও মজবুত হবে যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে।  

এ ছাড়াও, এ প্রতিষ্ঠান উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনযোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশকে অন্তর দিয়ে লালন করেছিলেন। তার জন্ম কলকাতায়। কিন্তু জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে বাংলাদেশের পতিসর, শিলাইদহ আর শাহজাদপুরে। জমিদারি দেখাশোনার কাজে এলেও তিনি দরিদ্র প্রজাদের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন নদীমাতৃক গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি আর আমাদের কৃষিনির্ভর গ্রামীণ সমাজকে। সৃষ্টি করেছেন অসামান্য সব গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোটগল্প। পতিসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি-সমবায়। প্রবর্তন করেছিলেন ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি।  

কলকাতা বা অন্য কোথাও নয়, কবিগুরু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এই বাংলাদেশেরই খুলনার দক্ষিণডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিণীকে। বিয়ের পরে যাকে নুতন নাম দিয়েছিলেন মৃণালিনী। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধরে রাখবার জন্য আমরা শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি।  

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি গভীরভাবে আনন্দিত। আমি মনে করি কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এটি একখণ্ড বাংলাদেশ। যাকে কেন্দ্র করে শান্তিনিকেতনের বুকে জেগে উঠবে বাংলাদেশের আলো, যে আলো রবীন্দ্রময় নিশ্চয়ই, তবু তার মধ্যে আছে স্বকীয়তা। আশা করছি, এ প্রতিষ্ঠানটি তার অভীষ্ট পূরণে সক্ষম হবে।

রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু উভয়ই স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষের মুক্তির। বাংলাদেশে আমরা একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮ 
এসকে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।