ঢাকা: সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাস্তবায়নাধীন অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়ান্ট (এপিআই)ওষুধ শিল্পপার্কের। এর আগে একাধিকবার ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে।
এবার এপিআই শিল্পপার্কের রাজস্ব খাতের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সাশ্রয়কৃত ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা সমন্বয় করা নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ অর্থ এখন ১২টি অঙ্গের ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য অপসারণের জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খোলা ড্রেন নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু এ ড্রেন এখন মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। ফলে সময় ও ব্যয় আরও একধাপ বাড়বে।
এপিআই ওষুধ শিল্পপার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২০৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যার ৮৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। তবে উদ্যোক্তাদের ৮০ কোটি টাকা এখন খরচ হয়নি।
এপিআই ওষুধ শিল্পপার্কের ৪২টি প্লটে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। ওষুধ কারখানা স্থাপনের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এছাড়া নিজস্ব বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও থাকবে। ওষুধ শিল্পপার্কে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করছে বিসিক।
বিসিক সূত্র জানায়, উদ্যোক্তাদের ৮০ কোটি টাকায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট(সিইটিপি) নির্মাণের কথা ডিপিপি’তে উল্লেখ আছে। কিন্তু এ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
ঢাকায় অবস্থিত প্রকল্প অফিস থেকে প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত ব্যয়, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, আউটসোর্সিংসহ প্রকল্পে জনবলের বেতনের জন্য অতিরিক্ত ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রয়োজন। যা স্টেশনারি, মূল্যায়ন, নিরাপত্তা প্রহরী, সেমিনার, কনফারেন্স, গ্যাস, জ্বালানি, লুব্রিক্যান্ট, মুদ্রণ ও লেখা সামগ্রীর ব্যয় থেকে সাশ্রয় হওয়া অর্থ থেকে মেটানো হবে।
ফলে এবার অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন ও ব্যয় সমন্বয়ের বেড়াজালে পড়েছে প্রকল্পটি।
চলতি মাসেই (২০১৬ সালের জুন) সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি। চলতি অর্থবছরে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও খরচ হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। তবে প্রকল্পের আওতায় ২০০ একর জমি ভরাট হয়েছে। মাটি লেভেলিং ও ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। রাস্তা নির্মাণ, সারফেস ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজও প্রায় অর্ধেক বাকি রয়ে গেছে।
প্রকল্পের পরিচালক(পিডি)আবদুল বাছেত বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের আরও কিছু অঙ্গের সংশোধন করতে হবে। ফলে সময় ও ব্যয় বাড়াতে হবে। ডিপিপি’তে খোলা ড্রেন নির্মাণের কথা ছিল, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আপত্তি জানান। তাই আমরা মাটির নিচ দিয়ে বর্জ্য ড্রেন নিয়ে যাবো, এতে বাড়তি খরচ হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি অর্থের ৮৩ শতাংশ খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু উদ্যোক্তাদের ৮০ কোটি টাকার এক টাকাও খরচ হয়নি। তারা সিইটিপি প্ল্যান্ট নির্মাণ শুরুই করেনি। এ প্ল্যান্ট উদ্যোক্তাদের নির্মাণ করার কথা যা মোট প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজের সমান। প্ল্যান্টটি নির্মাণের জন্যও প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়বে’।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকেই জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব ও প্রকল্পের আওতায় নানা সেবা বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এতে করে তিন ধাপে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব
প্রকল্পের ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০১০ সালের ৯ আগস্ট ১৯৭ দশমিক ৫৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়। ২০০৯ সালে একজন ভূমিমালিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করায় অবশিষ্ট জমি পেতে দেরি হয়। অবশেষে ২০১৩ সালে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ভূমি অধিগ্রহণ করে ২ দশমিক ৪৪ একর জমি দেন বিসিককে।
প্রকল্পের নতুন অঙ্গ সংযোজন
প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১২ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন ও দু’টি রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ কাজ সংযোজন করা হয়। এতেও প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ে।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি
ভূমি অধিগ্রহণের পর রাস্তা নির্মাণ, নর্দমা তৈরি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন, গ্যাসলাইন, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণে ধীরগতি ছিল। এ সকল কাজের জন্য দুই বছর ছয় মাস বাড়তি সময় ব্যয় হয়। যে কারণে প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের জুন নাগাদ সময় বাড়ানো হয়।
ব্যয় বৃদ্ধি
২০১১ সালে পিডব্লিউডি’র (গণপূর্ত অধিদফতর) নতুন রেট সিডিউল প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু সময় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ে। মেয়াদ অতিক্রম করায় প্রকল্পের আওতায় নানা অঙ্গে ব্যয়ও বাড়ে। যে কারণে ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে পেটেন্ট ড্রাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রয়েলিটি প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে ক্রমবিকাশমান ওষুধ শিল্পকে প্রতিযোগিতা করার জন্য ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর কাঁচামাল দেশে উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করে।
কিন্তু ৮ বছর পার গেলেও এ শিল্পপার্ক আলোর মুখ না দেখায় ওষুধ উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের অবকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল অথবা ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডেন্ট’ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে এ শিল্পের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনও ব্যহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর